অপরাধ শুধু একটু মুচকি হাসা! কাবুলের বাজারে মহিলাকে পিটিয়ে সোজা করল তালিবানরা

বাংলাহান্ট ডেস্ক : আজ থেকে ঠিক এক বছর আগে আফগানিস্তানে (Afghanistan) প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তালিবান শাসন (Taliban) । কট্টরপন্থী এই শাসনে কাবুলে প্রতিনিয়ত মহিলাদের জীবন হয়ে উঠেছে নরকের থেকেও কঠিন। সম্প্রতি কাবুল (Kabul) বাজারের মধ্যে প্রকাশ্যে এক মহিলাকে পেটানো হয়। মহালর অপরাধ ছিল বাজারে দাঁড়িয়ে তাঁর বন্ধুর সঙ্গে জোরে কথা বলা ও হাসা। দুনিয়ার বাকি দেশগুলির থেকে আফগানিস্তানে অনেক বেশি প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হচ্ছে মেয়েদের। শুধু তাই নয়, মেয়েদের মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষা গ্রহণেও বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। বাড়ির আশেপাশে গেলেও তাঁদের এক পুরুষ অভিভাবককে সঙ্গে রাখতে বাধ্য করা হচ্ছে।

তালিবান (Taliban) সেই একই আছে। নিজেদের বদলের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তারা। কিন্তু তা ছিল শুধুই ভাঁওতা। গত একবছরে মহিলাদের জন্য একাধিক নতুন ফতোয়া জারি করেছে তারা। তার মধ্যে একটিতে বলা হয়েছে, এবার থেকে প্রকাশ্যে এলেই ‘চাদোরি’ ব্যবহার করতে হবে মেয়েদের। চাদোরি হল এক বিশেষ ধরনের বোরখা, যা পরলে মাথার চুল থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত ঢাকা পড়ে যায়! আফগানিস্তানের বিভিন্ন দোকান ও প্রকাশ্য এলাকায় তালিবান সরকারের পক্ষ থেকে একটি পোস্টার সাঁটিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাতে আপাদমস্তক বোরখা পরা মহিলার ছবি রয়েছে। নীচে লেখা রয়েছে, ‘শরিয়ত আইন অনুসারে, প্রত্যেক মুসলিম মহিলারই হিজাব পরা উচিত।’

এর আগে গত শতাব্দীর শেষের দিকেও আফগানিস্তানে মেয়েদের বোরখা পরা বাধ্যতামূলক ঘোষণা করেছিল তালিবান সরকার। ইদানীংকালে, রাজধানী কাবুলে বহু মহিলাকেই মাথা ঢেকে বেরোতে দেখা যাচ্ছে। অনেকে আবার শরীর ঢাকা পশ্চিমী পোশাকও পরছেন। তবে, কাবুলের বাইরে এখনও বোরখার চল রয়েছে। অধিকাংশ মহিলাই বাড়ির বাইরে বেরোলে বোরখা পরেই বের হন।

আফগানিস্তানের তালিবান সরকার সেদেশের মেয়েদের আর ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়ায় বন্ধ করে দিয়েছে। অনেকেই ভেবেছিলেন আফগানিস্তানে হয়তো মহিলাদের গাড়ি চালানোর উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হবে। তারও আগে মহিলাদের একা বিমানে সওয়ার হওয়ার উপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। পরে বলা হয়, বিমানে উঠতে হলে মেয়েদের সঙ্গে পরিবারের কোনও পুরুষ সদস্য বা আত্মীয়কে থাকতেই হবে! এরপর কাবুলের উদ্যানগুলিতে ঢোকার ক্ষেত্রেও পুরুষ ও মহিলাদের জন্য আলাদা আলাদা দিন নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। গত বছরের অগাস্ট মাসে আফগানিস্তান পুরনায় দখল করেছে তালিবান। তারপর থেকে এসবই চলছে আফগানিস্তানে।

আফগানিস্তানের এক কিশোরি বলে, ‘আমি তিনবার দেখেছি বাজারের মধ্যে আফগান মেয়েদের মারধর করছে তালিবানরা। ওই মেয়েগুলি শুধু সালওয়ার পরেছিলো তাই তালিবানের এই অত্যাচার।’ কিশোরী আরও জানায়, একবার শুধু হাসাহাসি আর বান্ধবীদের সঙ্গে জোরে কথা বলার জন্যও মহিলাকে মারধর করেছিল তালিবানরা।

উল্লেখ্য, এই কিশোরীকে গত সেপ্টেম্বর মাসেই স্কুল ছাড়তে হয়। এখন সে মানসিক অবসাদে ভুগছে। প্রসঙ্গত এক বছর আগে যখন তালিবান ক্ষমতা দখল করে তখন তারা কথা দেয় যে মেয়েদের শিক্ষা এবং কাজের উপর কোনও হস্তক্ষেপ করবে না। কিন্তু সেটা যে শুধু কথার কথাই ছিল তা আজ এক বছর পরে এসে বিশ্বের প্রতিটি মানুষ বুঝতে পারছে।


Sudipto

সম্পর্কিত খবর