বাংলা হান্ট ডেস্ক: বর্তমান সময়ে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন না এমন মানুষ কার্যত খুঁজে পাওয়া মুশকিল। আমাদের দৈনন্দিন বিভিন্ন কাজকে সহজ করে দিয়েছে এই পরিষেবা। শুধু তাই নয়, এখন শহর থেকে শুরু করে গ্রামের যুবকরাও ইন্টারনেটের মাধ্যমে সোশ্যাল মিডিয়ার (Social Media) সৌজন্যে তাদের দক্ষতা বিশ্বের কাছে উপস্থাপিত করতে পারছেন। সর্বোপরি, ইউটিউব (Youtube) থেকে শুরু করে অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলিকে ব্যবহার করেই তারা আয় করছেন মোটা টাকা (Indian Rupees)।
এমতাবস্থায়, বর্তমান প্রতিবেদনে আজ আমরা ভারতের এমন একটি গ্রামের প্রসঙ্গ আপনাদের সামনে উপস্থাপিত করব, যেখানকার জনসংখ্যা হল প্রায় ৩ হাজার। কিন্তু সেই গ্রামেরই রয়েছে এক বিশেষত্ব। মূলত ছত্তিশগড়ের (Chhattisgarh) রাজধানী রায়পুর থেকে প্রায় ৪৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত তুলসি (Tulsi) নামের ওই গ্রামের প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই ইউটিউবার রয়েছে। হ্যাঁ, শুনে চমকে গেলেও এটা কিন্তু একদমই সত্যি।
প্রতিটি বাড়িতেই রয়েছেন “কমেডি কিং”: জানিয়ে রাখি যে, তুলসী গ্রামের বেশিরভাগ যুবক বিভিন্ন কমেডি ভিডিও তৈরি করেন। পাশাপাশি, তাঁরা সবাই ভারতের জনপ্রিয় কমেডিয়ান কপিল শর্মার শো দেখতেও পছন্দ করেন বলে জানা গিয়েছে। শুধু তাই নয়, আশেপাশের বাসিন্দারা ওই গ্রামটিকে “লাফটার চ্যাম্পিয়ন”-দের গ্রাম হিসেবেও অভিহিত করেন। তুলসি গ্রামটিতে প্রায় ৩ হাজার বাসিন্দা বসবাস করেন। যাঁদের মধ্যে প্রায় ১ হাজার জনকে কোনো না কোনো ইউটিউব চ্যানেলে অভিনয় করতে দেখা যায়। মূলত, গ্রামের বেশিরভাগ যুবকেরই নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেল রয়েছে। কিন্তু তাঁদের মধ্যে অল্প কয়েকজনই সফলতা পেয়েছেন।
চাকরির পাশাপাশি তৈরি করেন ভিডিও: তুলসি গ্রামের যুবকরা তাঁদের স্মার্টফোন দিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় আলাদা পরিচিতি তৈরি করেছেন। ইতিমধ্যেই সেই গ্রামের যুবকদের এমন ১২ টি ইউটিউব চ্যানেল রয়েছে, যেগুলির Monetization শুরু হয়ে গিয়েছে। অর্থাৎ, এগুলি থেকে অর্থ উপার্জন করা যাচ্ছে। এই চ্যানেলগুলিতে তুলসীর শিল্পীরা প্রতি সপ্তাহে নতুন ভিডিও উপস্থাপিত করেন। এছাড়াও, শিল্পীরা জানিয়েছেন, চাকরি ও পড়াশোনার পাশাপাশি তাঁরা ভিডিও তৈরির কাজও মন দিয়ে করেন।
অভিনয়ের প্রতি টান: এই প্রসঙ্গে “নিগমা ছত্তিশগড়িয়া” নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলের শিল্পী সন্দীপ সাহু বলেন, “আমাদের গ্রামের মানুষ প্রথম থেকেই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত। রামলীলা, নাটক ইত্যাদির মাধ্যমে যুবক থেকে বয়স্ক সবাই অভিনয়ে পারদর্শী হয়ে উঠেছেন। কিন্তু সঠিক প্ল্যাটফর্ম না পেয়ে তরুণরা এই পদক্ষেপ বেছে নিয়েছেন এবং ইউটিউবকে নিজের প্রতিভা বিকাশের মাধ্যম করে তোলেন।” যদিও, গ্রামীণ পরিবেশের কারণে মহিলা শিল্পীদের নিয়ে সমস্যা হয় বলেও জানান তিনি।
বিনোদন থেকে আয়: এমতাবস্থায়, ভিডিও তৈরির মাধ্যমে হচ্ছে উপার্জনও। ইতিমধ্যেই “নিগমা ছত্তিসগড়িয়া” ছাড়াও, “বিইং ছত্তিসগড়িয়া” নামের চ্যানেলটি ইউটিউবে খুব বিখ্যাত। এই চ্যানেলগুলির কয়েক লক্ষ সাবস্ক্রাইবার রয়েছে। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, এই চ্যানেলগুলি উপার্জনের ক্ষেত্রে একটি ভালো বিকল্প হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে। জানা গিয়েছে, মাত্র একটি চ্যানেল থেকেই আয় হচ্ছে প্রায় ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। এমতাবস্থায়, সব চ্যানেল একত্র করলে তুলসি গ্রামে ইউটিউব থেকেই আয় হচ্ছে লক্ষাধিক টাকা।
শুধু কমেডি ভিডিও কেন তৈরি হয়? রয়েছে চমকপ্রদ কারণ: এই প্রসঙ্গে তুলসি গ্রামের জয় ভার্মা নামের এক যুবক জানান যে, “আমরা ‘বিইং ছত্তিশগড়িয়া’ নামের ইউটিউব চ্যানেলটি চালাই। এর আগে তুলসিতে, ২০১১ সাল নাগাদ তরুণরা কোন ধরণের ভিডিওকে প্রাধান্য দেওয়া উচিত তা বুঝতে পারত না। কিন্তু, পরে আমরা বুঝেছি যে, কমেডি ভিডিওগুলি বেশি সফল। এমতাবস্থায়, “কৌন বনেগা ক্রোড়পতি”-র আদলে একটি কমেডি ভিডিও তৈরি করা হয়। যা মানুষ খুব পছন্দ করেছে।”
পাশাপাশি, তিনি আরও জানিয়েছেন একবার, তিনি একটি ফোন পেয়েছিলেন যেখানে তাঁকে বলা হয় হাসপাতালে ভর্তি একজন বয়স্ক ব্যক্তি তাঁর ভিডিও দেখে অত্যন্ত আনন্দ পেয়েছেন। পাশাপাশি, তাঁর সাথে কথাও বলেন তিনি। তারপর থেকেই তুলসির যুবকরা মানুষকে হাসাতে একনাগাড়ে কমেডি ভিডিও তৈরি করতে থাকেন।