বাংলাহান্ট ডেস্ক : সমবায় ভোটে বিপুল হারের দায় তাঁর নিজের। এই দাবি করেই পদত্যাগ করলেন পূর্ব মেদিনীপুরের (East Medinipore) নন্দীগ্রামের (Nandigram) বিজেপির দক্ষিণ মণ্ডল সভাপতি অরূপ জানা। সম্প্রতি রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর এলাকা নন্দীগ্রামে বিরুলিয়া গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার হানুভুইয়া কৃষি উন্নয়ন সমবায় সমিতির বোর্ড নির্বাচন হয়েছে। ওই নির্বাচনে প্রায় ৯০ শতাংশ ভোট পেয়ে সমবায় সমিতির ৫১টি আসন জিতেছে তৃণমূল (TMC)। তারপরই পদত্যাগের করলেন অরূপ।
নিজের দল বিজেপিকে লেখা ইস্তফাপত্রে শারীরিক অসুস্থতার কথা জানিয়েছেন অরূপবাবু। কিন্তু এ নিয়ে অরূপের বক্তব্য, ‘দল যখন হারে তখন তার নৈতিক দায় নেতৃত্বকেই নিতে হয়। না হলে কর্মীরা অসন্তুষ্ট হয়ে পড়েন। আমিও এই পরাজয়ের দায় স্বীকার করছি। যে হেতু পার্টির ভাবমূর্তি নষ্ট করে ফেলেছি সেই কারণে মণ্ডল সভাপতির পদ থেকে আমি সরে দাঁড়ালাম।’
পদত্যাগী অরূপের পাশে দাঁড়িয়েছেন বিজেপির তমলুক জেলা কমিটির সভাপতি তপন বন্দ্যোপাধ্যায়। তপন বলেন, ‘গত বিধানসভা ভোটে সব থেকে বেশি লিড এসেছিল এই অঞ্চল থেকেই। স্বাভাবিক ভাবেই অরূপ জানার নেতৃত্বেই এই এলাকার বিজেপি কর্মীরা মন্ডলের কার্যক্রম পরিচালনা করন।’ আগামী পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে এই পরিস্থিতি থেকে দল ঘুরে দাঁড়াবে বলেই মনে করেন তপনবাবু।
অরূপের পদত্যাগকে হাতিয়ার করে আবার বিজেপিকে খোঁচা দিতে ছাড়েনি তৃণমূল। তৃণমূলের দাবি, নন্দীগ্রাম যে শুভেন্দুর পাশে নেই সেটা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে নন্দীগ্রাম ও কাঁথি এলাকার দু-দুটি সমবায় সমিতির পরিচালন কমিটির নির্বাচনে। দুটি জায়গাতেই গোহারান হেরেছে বিজেপি। আর সেই হারের দায় কার্যত চেপেই গিয়েছিল রাজ্যের বিরোধী দলনেতার ঘাড়ে। সেই বিড়াম্বনা থেকে শিশিরপুত্রকে রেহাই দিতে এবার বঙ্গ বিজেপির তরফ থেকে জোর করে নির্বাচনী বিপর্যয়ের যাবতীয় দায়ভার নিজের কাঁধে নিয়ে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হল মেদিনীপুরের নন্দীগ্রামের বিজেপির দক্ষিণ মণ্ডল সভাপতি অরূপ জানাকে।
দলের তমলুক সাংগঠনিক জেলার চেয়ারম্যান পীযূষ ভুঁইয়া বলেন, ‘বিজেপির অন্দরে রয়েছে দ্বন্দ্ব। নন্দীগ্রাম-২ ব্লকের বিজেপির মণ্ডল সভাপতির পদত্যাগ তারই একটু বহিঃপ্রকাশ। বিরুলিয়ায় সমবায়ের নির্বাচনে হেরে গিয়ে বিজেপির মধ্যে এখন ব্যাপক ঝামেলা শুরু হয়ে গিয়েছেন।’ পীযূষের মতে, অরূপের পদত্যাগকে সামনে রেখে বিজেপি দলের গোষ্ঠী দ্বন্দ্বকে আড়াল করার চেষ্টা করছে।
প্রসঙ্গত, গত ২১ অগস্ট হানুভুঁইয়া কৃষি উন্নয়ন সমবায়ের পরিচালন সমিতির নির্বাচন হয়। ওই নির্বাচনে ৫২টি আসনের মধ্যে তৃণমূল পেয়েছে ৫১টি আসন। নির্বাচনে ২,৫০০ জন ভোটারের মধ্যে প্রায় ৯০ শতাংশ ভোটই তৃণমূলের পক্ষে যায়। একটি আসন দখল করে বামেরা। নন্দীগ্রামের পাশাপাশি কাঁথি ৩ নম্বর ব্লকের মারিশদা সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতির পরিচালন সমিতিও তৃণমূলের দখলে চলে যায়। ওই সমবায়ের ৪১টি আসনের সবকটিই দখল করে তৃণমূল প্রার্থীরা।