বাংলা হান্ট ডেস্ক: ব্রিটিশদের (British) কাছ থেকে দেশের স্বাধীনতা (Freedom) ফিরিয়ে নিয়ে আসার দীর্ঘ সংগ্রামে যাঁরা প্রাণ দিয়েছিলেন তাঁদের প্রশংসা করতে আমরা কখনোই ক্লান্ত হই না। বরং, গর্ব করে বলি যে আমাদের সাহসী যোদ্ধারা ব্রিটিশদের উচিত শিক্ষা দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই যোদ্ধাদেরই পরিবারের প্রতি আদৌ ন্যায়বিচার হয়েছে কি না তা আমরা কখনোই জানার চেষ্টা করি না। এমতাবস্থায়, আজ আমরা আপনাদের এমনই এক রাজার প্রসঙ্গে জানাতে চলেছি, যিনি স্বাধীনতা সংগ্রামে তাঁর জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। কিন্তু আজ তাঁর নিজের পরিবারই চরম আর্থিক সঙ্কটের সম্মুখীন হয়েছেন।
রাজা অর্জুন সিংয়ের পরিবার রয়েছেন আর্থিক সঙ্কটে: মূলত, আমরা ১৮৫৭ সালে স্বাধীনতা সংগ্রামের সাহসী যোদ্ধা এবং পোড়াহাটের রাজা অর্জুন সিংয়ের প্রসঙ্গ জানাবো। পাশাপাশি, তাঁর পারিবারিক প্রসঙ্গটিও উপস্থাপিত করব। জানা গিয়েছে, অর্জুন সিংয়ের বংশের সদস্যা আজ দীর্ঘ রোগের সঙ্গে লড়াই করছেন। এমনকি, তাঁর আর্থিক অবস্থা এতটাই খারাপ যে, তিনি সঠিক চিকিৎসাও করাতে পারছেন না। বলা হয় যে, পোড়াহাটের (চক্রধরপুর) রাজা অর্জুন সিং একসময় হাজার হাজার মানুষের সমর্থন পেতেন। কিন্তু আজ তাঁর পরিবারেরই ৮৯ বছর বয়সী সদস্যা সুষমা সিং অন্ধকার ঘরে বসে অসুস্থতার সঙ্গে লড়াই করছেন।
চলছে অসুস্থতার সঙ্গে লড়াই: জানা গিয়েছে, এই প্রসঙ্গে, ঝাড়খণ্ড সরকার স্বীকৃত স্বাধীনতা সংগ্রামী তহবিলের সদস্য লাল প্রবীরনাথ শাহদেব, পশ্চিম সিংভূমের জেলা প্রশাসককে একটি চিঠি লিখে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। প্রবীরনাথ শাহদেব বলেছেন যে, ২০২১ সালেই রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দপ্তরের প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি রাজীব অরুণ এক্কার তরফে সমস্ত জেলার ডেপুটি কমিশনারদের চিঠি লিখে স্পষ্ট নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে শহিদ যোদ্ধাদের পরিবারের করুণ অবস্থা প্রকাশিত হলে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়।
কিন্তু পরিবার সাহায্য পায়নি: উল্লেখ্য যে, ঝাড়খণ্ডে শহিদ মুক্তিযোদ্ধাদের আর্থিকভাবে দুর্বল পরিবারগুলির সদস্যদের চিকিৎসা, শিক্ষা, বিয়ে এবং বাসস্থানের জন্য ঝাড়খন্ড সেনানি ফান্ড গঠন করা হয়েছে। এই তহবিলে জমাকৃত অর্থের উদ্দেশ্য হল এই সমস্ত পরিবারকে সহায়তা প্রদান করা। কিন্তু আজ অবহেলার কারণে একাধিক শহিদের পরিবারের সদস্য সমস্যায় পড়েছেন।
জানা গিয়েছে যে, ১০ মাস আগে সুষমা দেবীর বাড়ির বিদ্যুৎ সংযোগও বিচ্ছিন্ন করে দেয় সংশ্লিষ্ট বিভাগ। এমতাবস্থায়, পরিবারটি একাধিকবার বিদ্যুতের ব্যবস্থা করার জন্য সরকারি কর্মকর্তা ও বিদ্যুৎ বিভাগকে অনুরোধ করলেও কর্মকর্তারা তাঁদের কথা শোনেন নি। যার কারণে বর্তমানে পুরো পরিবার অন্ধকারে বসবাস করছেন। শুধু তাই নয়, রাজপরিবারের উত্তরাধিকারীরা যারা এক সময় প্রাসাদে থাকতেন তাঁরা এখন জরাজীর্ণ বাড়িতে থাকতে বাধ্য হয়েছেন।
৩ ছেলে মারা গেছেন : রাজা অর্জুন সিংহের দুই পুত্র ছিল। যাঁদের নাম হল নরপত সিং ও মহেন্দ্র সিং। এদিকে, নরপত সিং-এর দুই কন্যা এবং মহেন্দ্র সিংয়ের ৫ জন পুত্রসন্তান ছিল। সুষমা সিং হলেন মহেন্দ্র সিংয়ের পাঁচ ছেলের একজনের স্ত্রী। এদিকে, ৮৯ বছর বয়সী সুষমা সিং-এর ৬ জন ছেলে থাকলেও তাঁদের মধ্যে ৩ জন মারা গিয়েছেন। পাশাপাশি, বেঁচে থাকা তিন ছেলের মধ্যে একজন প্রতিবন্ধী এবং বাকিদের আর্থিক অবস্থাও ভালো নয়।
কোনোমতে কাটছে দিন: চক্রধরপুরে রাজত্ব করা রাজা অর্জুন সিং সুখে-দুঃখে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য পরিচিত ছিলেন। অনেকে জানিয়েছেন যে, তিনি নিজে থেকেই মানুষকে চাকরি দিতেন। অথচ আজ তাঁর পরিবারের সদস্যাই দু’বেলার অন্নসংস্থান করতে পারছেন না। উল্লেখ্য যে, অর্জুন সিং সম্পর্কে বলা হয় যে, তিনি কখনোই ব্রিটিশদের সামনে মাথা নত করেননি। ১৮৫৮ সালের ১৭ জানুয়ারি, শেখাওয়াট্টি ব্যাটালিয়নকে কর্নেল ফস্টারের অধীনে চাইবাসাতে পাঠানো হয়। অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আসা ইংরেজ সেনাবাহিনী সেখানে অনেক রক্তপাত ঘটিয়েছিল। যদিও, এত কিছুর পরও ব্রিটিশদের সামনে নতজানু হননি অর্জুন সিং। বরং, তিনি তাঁর সহযোদ্ধাদের সাথে, জুন মাস পর্যন্ত ব্রিটিশদের উপযুক্ত জবাব দিয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত অর্জুন প্রতারণার মাধ্যমে গ্রেফতার হন এবং বেনারসের জেলে বন্দি হন।
এখন আশার আলো দেখা যাচ্ছে: প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, এই বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পরই এখন তৎপর হয়েছে জেলা প্রশাসন। জানা গিয়েছে, চক্রধরপুরের BDO সঞ্জয় কুমার সিনহা, সুষমা দেবীকে মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করেছেন। এদিকে, তাঁর শরীরে রক্ত কম থাকার কারণে তাঁকে এক ইউনিট রক্তও দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি উন্নত চিকিৎসার জন্য সুষমা দেবীকে ভালো চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে। সেই সঙ্গে ১০ মাস আগে তাঁর বাড়ির বিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পরিষেবাও ফের চালু করা হয়েছে।