বাংলাহান্ট ডেস্ক : একটু সময় চেয়েছিলেন মানিক ভট্টাচার্য (Manik Bhattacharya)। মিনিট দশেকের জন্য কথা বলতে চেয়েছিলেন তিনি। তৃণমূল বিধায়ককে সেই সময় কি দিয়েছিলেন দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় (Partha Chatterjee)? এমন একাধিক প্রশ্ন উঠে আসছে আদালতে পেশ করা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ED) ১৭২ পাতার চার্জশিটে। সেখানে মেসেজ বিনিময়ে কী কী লেখা হয় তা-ও তদন্তকারী সংস্থা জানিয়েছে আদালতকে। মানিক ‘যা তা ভাবে’ টাকা তুলছেন বলে মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় একবার একটি মেসেজ পান বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে কে পাঠিয়েছেন তার নাম এখনি জানা যায় নি।
শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে ইডির হাতে গত ২৩ জুলাই গ্রেফতার হন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। এই মুহুর্তে তিনি রয়েছেন সিবিআই হেফাজতে। অন্য দিকে, দুই কেন্দ্রীয় সংস্থারই নজরে রয়েছেন প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন চেয়ারম্যান তৃণমূল বিধায়ক মানিক। জানা যাচ্ছে, ইতিমধ্যেই তাঁকে জেরা শুরু করেছে ইডি। পার্থের বাড়িতে যখন তল্লাশি হয় সেই সময় ইডি যায় মানিকের বাড়িতেও। ‘লুক আউট নোটিস’ও জারি করা হয় তার বিরুদ্ধে । এ বার পার্থ-মানিকের মধ্যে যে মেসেজে কথা হয়েছে তারও কিছু নিদর্শনও আদালতের হাতপ তুলে দিয়েছে ইডি।
চার্জশিটে দাবি করা হয়েছে, শিক্ষক দুর্নীতিতে মানিকের ভূমিকা নিয়ে পার্থকে জেরা করা হয়। ইডি জানায়, গ্রেফতারের সময় বাজেয়াপ্ত করা পার্থের মোবাইলে মানিকের নাম ‘মানিক ভট্টাচার্য ল’ বলে সেভ করা রয়েছে। চার্জশিটে বলা হয়েছে, ২০২০ সালের ১২ ডিসেম্বর পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে মানিক একটি মেসেজ পাঠান। প্রাইমারি টেটের ইন্টারভিউয়ের ব্যাপারেই সেই মেসেজটি পাঠানো হয়েছিল বলে দাবি ইডির। মানিক পার্থকে লেখেন, ‘দশ মিনিট দিস কাল বাড়ি যাব’। জবাবে পার্থ ‘ওকে’ লেখেন। এর পর ২০২১ সালের ১০ জানুয়ারি পার্থকে আর একটি মেসেজে মানিক লেখেন, ‘ইন্টারভিউ স্টার্টেড অল ওভার দ্য স্টেট।’ কিছু ক্ষণের মধ্যেই জবাবে ‘টিকেএস’ লেখেন পার্থ। পার্থ কি ‘থ্যানক্স’ বলতে চেয়েছিলেন? ইডির দাবি, এই মেসেজ সম্পর্কে পার্থকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন চেয়ারম্যান হিসাবেই যোগাযোগ হয়। তাই তিনি উত্তরে ধন্যবাদ জানান। এর মধ্যে আর অন্য কিছু নেই বলেই দাবি প্রাক্তন শিক্ষা মন্ত্রীর।
তবে আরও একটি মেসেজের উল্লেখ রয়েছে চার্জশিটে। সেটির বিষয়ে অবশ্য কে পাঠিয়েছেন সেই মেসেজ তার নাম প্রকাশ করেনি ইডি। তবে কী লেখা ছিল তাতে তা উল্লেখ রয়েছে ওই চার্জশিটে। ওই ব্যক্তি পার্থকে লিখেছেন, ‘দাদা মানিক ভট্টাচার্য ইজ টেকিং মানি যা তা ভাবে। কোভিডের সময়ে প্রাইভেট কলেজগুলো থেকে ছাত্রপিছু ও ৫০০ টাকা করে নিয়েছে। ছাত্রেরা দিতে না পারলে কলেজকে ধমকি দিয়েছে, তাদের হয়রান করছে। নদিয়ায় টেটের ইন্টারভিউ শেষ হয়েছে। কিন্তু ও চেয়ারম্যানকে বলেছে, ফাঁকা সাইন করা ডকুমেন্ট মাস্টার শিট জমা দিতে। ইন্টারভিউর কোনও নম্বর লিখতে বারণ করছে। আবার ও টাকা নিয়ে করবে, আবার কেস হবে। আবার পার্টি খাস্তা হবে। প্লিজ এটা দেখুন। লাভ।’ এই মেসেজটি আবার পার্থ ‘রি-ফরোয়ার্ড’ করেন বলেও দাবি করেছে ইডি। সেটা কি মানিককেই? সেটা খুব একটা স্পষ্ট করে লেখা নেই চার্জশিটে।
ওই মেসেজ নিয়েই ইডির প্রশ্ন, কেন মাস্টার শিট ফাঁকা রাখতে বলেছিলেন মানিক? ইন্টারভিউর নম্বর বসাতে কেন বারণ করা হয়েছিল চেয়ারম্যানকে? এই রকমই একাধিক প্রশ্নের কোনও উত্তর দিতে পারেননি পার্থ। তদন্তকারী আধিকারিকদের তিনি জানান, ‘ওটা প্রাইমারি বোর্ডের বিষয়, আমি ঠিক বলতপ পারব না।’