বাংলাহান্ট ডেস্ক : নদীয়ার শান্তিপুরের রায় বাড়ির বনেদি পরিবারের পুজো এই বছর ৫০০ এ পা দিয়েছে। ষষ্ঠীর ভোরে মাথায় হাত রায় বাড়ির সবার। চোর খুলে নিয়ে দুর্গা মায়ের সব গয়না। এই বাড়িতে মায়ের গয়না চুরির ঘটনা এই প্রথম নয়। বছর ১৩-১৪ আগে আরো একবার খোয়া গেছিলো মায়ের সব গয়না। সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি আবার। আগের বার গয়না খোয়া যাওয়ায় পুজো বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্বান্ত নিয়েছিলেন রায় বাড়ির কর্তারা। কিন্তু শেষ মেষ সেই সিদ্ধান্ত বদল হয়। মায়ের পুজো জারি থাকে। কিন্তু সেই একই চুরির ঘটনা আবারও ঘটায় গভীর শোকাহত রায় পরিবার। শুধু রায় পরিবার বললে ভুল বলা হবে , শোকে আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে গোটা এলাকাবাসী।
নদীয়ার শান্তিপুরের দত্তপাড়া এলাকার রায় বাড়ির পূজো এখানকার প্রাচীনতম ঐতিহ্য। ৫০০ বছর অতিক্রান্ত করেছে এই সুপ্রাচীন পুজো। শোনা যায় , আগে মায়ের সোনার গয়না প্রতি বছর নতুন গড়িয়ে দেওয়া হতো। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে এই প্রথা হারিয়েছে অনেক আগেই। পূজোর জৌলুস আগের চেয়ে অনেকটাই ফিকে হয়ে দাঁড়িয়েছে । বনেদী এই পরিবারের বেশিরভাগ সদস্যই এখন বিদেশে থাকেন। তাই পুজোর সেই ধুমধাম এখন আর নেই। তবু বাকি রীতিনীতি একই ভাবে মেনে চলা হয় প্রতিবছর।
তবে এবারের পূজোয় আবার সব গয়না চুরি যাওয়ায় , বিশাল ধাক্কা খেল পরিবারের সবাই। ১৩-১৪ বছর আগে সব গয়না লোপাট হওয়ার পর পুজো প্রায় বন্ধ হতে চলেছিল , কিন্তু পরিবারের উজ্জ্বল রায় একা নিজের কাঁধে তুলে নেন সব দায়িত্ব, এবং সেবারে পুজো বন্ধ হওয়া আটকান নিজের একার দায়িত্বে। কিন্তু এবার?
পূজোর সর্বময় কর্তা উজ্জ্বল রায়ের দাবি , ” সবেমাত্র পঞ্চমীর দিন রাতে মাকে গয়না দিয়ে সাজানো হয় এবং যথারীতি সবাই ঘুমিয়ে পড়ে। সকালে উঠে দেখা যায় মায়ের গা ভর্তি গয়না একটিও নেই। সমস্ত সোনার গয়না সহ কিছু রুপার গয়না ও খোয়া গেছে। সারা বাড়ি চারদিক দিয়ে পাঁচিল দিয়ে ঘেরা এবং ঢোকার গেট বন্ধ থাকলে কোনভাবেই প্রবেশ করা সম্ভব নয় বাড়ির ভেতরে। তাও কিভাবে এই ঘটনা ঘটলো সেটা কিছুতেই বুঝতে পারছি না।”
এই ঘটনার পর খবর দেওয়া হয় শান্তিপুর থানায়। পুলিশ এসে সমস্ত বিষয়টি খতিয়ে দেখে গেছেন এবং গয়না চোরের বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করবেন বলে জানিয়েছেন। উজ্জ্বল রায় খুব আফসোস করে বলেছেন, ” টাকার অভাবে সিসি ক্যামেরা লাগানো হয়নি ,থাকলে খুব উপকার হত।” রায় বাড়ির এই পুজো সম্পূর্ণভাবেই সরকারি অনুদানবিহীন। সরকার থেকে কোনরকম সাহায্যেই তারা পান না। কোনরকমে টিমটিম করে শারদীয়ায় এই বাড়িতে দুর্গা মন্ডপে পূজো হতো। এখন কিভাবে হবে সেই নিয়ে চিন্তার ভাঁজ সকলের কপালে। পরিবার সূত্রে খবর, সোনার টিপ ,সোনার টায়রা ,সোনার চোখ ,সোনার হার ,সোনার চিক সহ আরো বেশ কিছু সোনার ও রূপার গয়না চুরি গেছে।