বাংলাহান্ট ডেস্ক : সপ্তাহের শুরুতেই আবারও নিম্নমুখী। ডলারের তুলনায় আরও খানিকটা কমল টাকার দাম। আরও চাপ বাড়ল দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের উপর। সোমবার ফরেক্স মার্কেট খোলার সঙ্গে সঙ্গেই টাকার দামের পতনের নতুন রেকর্ড তৈরি হল। তবে এখানেই শেষ নয়।বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ডলারের তুলনায় টাকার দাম আরও কমবে বেশ খানিকটা।
ডলারের তুলনায় টাকার দাম সর্বনিম্ন ৮২.৭০-এ নেমে এসেছে। বাজারের পতন এবং মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভের কড়া নিয়মের জেরেই এমনটা হচ্ছে বলে মনে করছেন দেশের আর্থিক বিশেষজ্ঞরা। সোমবার সকাল ৯ টায় ভারতীয় মুদ্রা তার আগের দামের থেকে ০.৪৭ শতাংশ কমে।
আমেরিকায় নাগাড়ে কমছে বন্ডের দাম। ভারতীয় মুদ্রার জন্য এটাই সবচেয়ে বড় সমস্যা। গত ১০ বছরের মধ্যে বন্ডের ফলন ৭.৮৪৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা আগের থেকে ৩ বেসিস পয়েন্ট বেশি। এটা মাথায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে বন্ডের ফলন এবং ফরেক্স মার্কেট বিপরীত দিকে চলে।
সুদের হার আরও বাড়ার আশঙ্কা: বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সেপ্টেম্বরে চাহিদার চেয়ে বেশি নিয়োগ করেছে আমেরিকান কোম্পানিগুলো। এর ফলে বেকারত্বের হার ৩.৫ শতাংশে নেমে এসেছে। মার্কিন বেকারত্বের হারের এই পতনে অবাক হয়েছেন অনেক বিশেষজ্ঞই। তাঁরা বলছেন, ফেডারেল রিজার্ভ যে ভবিষ্যতে সুদের হার বৃদ্ধি অব্যাহত রাখবে এটা তারই ইঙ্গিত। উল্লেখ্য, শুক্রবার, মার্কিন ফেড রিজার্ভের গভর্নর ক্রিস্টোফার ওয়ালার এবং লিসা কুক বলেন, মুদ্রাস্ফীতি কমাতে সুদের হার বাড়ানো প্রয়োজন।
ডলারের তুলনায় টাকার দাম ৮৩.৫০ হতে পারে: কমোডিটি বিশেষজ্ঞ অজয় কেডিয়া বলছেন, ডলারের তুলনায় টাকার দাম আরও কমবে। ফেড রিজার্ভ ২০২৩ সালেও সুদের হার বাড়ানোর কথা জানিয়েছে, এটা সরাসরি ডলারকে উপকৃত করলেো ভারতীয় মুদ্রার উপর চাপ বাড়বে। অনুমান করা হচ্ছে, আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ডলারের তুলনায় টাকা ৮৩.৫০-এর রেকর্ড সর্বনিম্ন দামে নেমে যেতে পারে। অবস্থার উন্নতি হলে ডলারের তুলনায় টাকা ৮১.৮০-এর কাছাকাছি থাকবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
অপরিশোধিত তেলের দামেও চাপ বাড়বে: টাকার দাম পড়লে অপরিশোধিত তেলের দাম বাড়বে। এতে চলতি হিসেবের ঘাটতি তো বাড়বেই ভারতীয় মুদ্রাও দুর্বল হবে। বিশেষজ্ঞরা ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন, আগামী দিনে অপরিশোধিত তেলের দাম ব্যারেল প্রতি ১০০ ডলারে পৌঁছতে পারে। ব্রোকারেজ ফার্ম কোটাক ইনস্টিটিউট বলছে, বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি এবং বিশ্ব অর্থনীতিতে ধীরগতির চাপ ভারতীয় মুদ্রাতেও দেখা যাবে। এর ফলে অক্টোবরেই টাকা ৮৩.৫০-এ নেমে যেতে পারে।
কেন এই পতন? ইউক্রেন – রাশিয়া সংকট বিশ্ব অর্থনীতিকেই প্রভাবিত করেছে। বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক সঙ্কটের কারণে বিশ্বব্যাপী মুদ্রার পতন ঘটেছে প্রায় ৪-৭ শতাংশ। যা সামগ্রিক অর্থবাজারকেই মারাত্মক প্রভাবিত করেছে। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেন-রাশিয়া সংকট শুরু হওয়ার পর থেকে ভারতীয় মুদ্রার একইভাবে ৪ শতাংশ অবমূল্যায়ন ঘটেছে।
শক্তিশালী ডলার সূচক, তেলের দামের ঊর্ধ্বগতি এবং ইক্যুইটি এবং বন্ড মার্কেট থেকে ডলারের বর্হিপ্রবাহ সঙ্কটকে আরও জটিল করে তুলেছে। এবং তা সরবরাহের ব্যাঘাত ঘটানোয় পুঁজির খরচও বাড়িয়েছে। যার ফলে FII তাদের বিনিয়োগ প্রত্যাহার করছে। ফলস্বরূপ টাকার দর পড়ছে।
আমেরিকান আর্থিক নীতির কারণে ডলারের সঙ্গে অন্য বৈশ্বিক মুদ্রার দরের মধ্যে বড় পার্থক্য দেখা যাচ্ছে। এবং তেলের দামকেও প্রভাবিত করছে। ক্রমবর্ধমান ডলার সূচক এটাই প্রমাণ করছে যে ইউএসডি অন্যান্য মুদ্রা যেমন পাউণ্ড, ফ্রাঙ্ক, ইউরো, ইয়েন এবং রুপি-কে ছাড়িয়ে যাচ্ছে। যখন ডলার বেড়ে যায় তখন এটি আমেরিকান শেয়ার এবং তেলের ব্যারেলের মতো সমস্ত সম্পর্কিত পণ্যের মূল্যকে প্রভাবিত করে এবং ভারতীয় টাকার মতো মুদ্রার মূল্য হ্রাস করে।
এছাড়া রয়েছে অর্থনৈতিক মন্দা। করোনা মহামারির জন্য প্রত্যেকটি উন্নত দেশেই ঘোষণা করা হয় বিরাট অর্থনৈতিক প্যাকেজ। যার সরাসরি প্রভাব পড়েছে বিশ্ব অর্থনীতিতে। মারাত্মক মুদ্রাস্ফীতিতে জেরবার আমেরিকা সহ উন্নত রাষ্ট্রগুলি। এই মুদ্রাস্ফীতিই টাকার দাম কমার একটি বড় কারণ বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।
সব ‘দায়’ সংবাদ মাধ্যমের! RG Kar কান্ড নিয়ে বিস্ফোরক ফিরহাদ, বললেন…