বাংলাহান্ট ডেস্ক : মেয়ে প্রায় কিছুই জানতেন না। তাঁকে একরকম অন্ধকারে রেখেই তাঁর সই নিয়ে তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল (Anubrata Mandal) ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে গরু পাচারের নগদ কালো টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন বলে তদন্তকারীদের অভিযোগ। তদন্তকারী সংস্থার সূত্রে জানা যাচ্ছে, তাঁর অজান্তেই যে ওই সব লেনদেন হয়েছে, বলেই জানান সুকন্যা মণ্ডল (Suknya Mandal) এবার গরু পাচার মামলায় (Cow Smuggling Case) সুকন্যার লিখিত বয়ানকে হাতিয়ার করে অনুব্রতকে নতুন ভাবে জেরা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে ইডি বা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। অনুব্রত এখন রয়েছেন আসানসোল জেলে। চলতি সপ্তাহে সেখানে গিয়ে তাঁকে যাতে জেরা করা যায়, ইডি সেই দাবি জানাতে চলেছে আদালতে।
আইনজীবীদের একাংশের বক্তব্য, সুকন্যা তদন্তকারীদের সামনে একেবারে বাস্তব পরিস্থিতিটাই তুলে ধরেছেন। সুকন্যার বয়ান অনুব্রতের বিরুদ্ধেই যাবে। ইডি-র তদন্তকারীরা সুকৌশলে সেই বয়ানকে অনুব্রতের বিরুদ্ধে আইনি হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করতে চলেছেন বলে জানা যাচ্ছে। ইডি সূত্রে খবর, সুকন্যা তাঁর সমস্ত বয়ান নিজের হাতেই লিখেছেন। এবং জিজ্ঞাসাবাদের পুরো পর্ব তুলে রাখা হয়েছে ভিডিওতে।
ইডি-র দাবি, জিজ্ঞাসাবাদে সুকন্যা জানিয়েছেন কোনও রকম আর্থিক লেনদেনের বিষয়ে তিনি কিছুই জানতেন না। সব কিছুই জানেন তাঁর হিসাবরক্ষক। সুকন্যার আরও দাবি, তিনি কোনও দিন ব্যাঙ্কে গিয়ে নগদ টাকা জমা দেননি। কোথায় কী সম্পত্তি রয়েছে, তা-ও তিনি ঠিক ভাবে জানেন না। ইডি জানাচ্ছে, সুকন্যার বয়ান অনুযায়ী যিনি তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে প্রায় প্রতিদিন নগদ টাকা জমা দিতেন, তাঁকেও তলব করা হয়েছিল। সেই ব্যক্তি, সুকন্যার হিসাবরক্ষক এবং খোদ সুকন্যাকে মুখোমুখি বসিয়ে টানা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ২৭ অক্টোবর সুকন্যাকে দিল্লিতে ডেকে পাঠানো হয়। কিন্তু এক বান্ধবীর চিকিৎসার জন্য তিনি অন্য রাজ্যে রয়েছেন বলে সময় চেয়েছিলেন কেষ্ট-কন্যা। তার পরে তাঁকে আবার ডাকা হয় ২ নভেম্বর। ওই দিন নিজের হিসাবরক্ষক মণীশ কোঠারিকে নিয়ে তদন্তকারীদের মুখোমুখি হন সুকন্যা। পরপর তিন দিনে প্রায় ২২ ঘণ্টা ধরে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে।
তদন্তকারীদের দাবি, সুকন্যা একাধিক সংস্থার ডিরেক্টর এবং তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে কোটি কোটি টাকা জমা হয়েছে। লেনদেনও হয়েছে। তাঁর সংস্থার মাধ্যমে কেনা বিভিন্ন চালকল-সহ কয়েক কোটি টাকা সম্পত্তির হদিস মিলেছে। ২০১৫ সালের পর থেকে তাঁর ব্যাঙ্ক আমানত ও সম্পত্তি বেড়েছে জেট-গতিতে। ২০১৮-র পর থেকে তাঁর নামে বোলপুরের বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্টে প্রায় প্রতিদিন নগদ টাকা জমা পড়েছে বলে তদন্তে জানা গিয়েছে। অথচ পেশায় তিনি এক জন প্রাথমিক স্কুলশিক্ষিকা। এবং তিনি সেই চাকরি পান ২০১৪ সালে।
এক তদন্তকারী অফিসার জানান, সুকন্যা প্রথম দিকে ওই সব লেনদেন ও সম্পত্তির প্রসঙ্গ এড়িয়ে যাচ্ছিলেন। মনে করা হচ্ছিল, তিনি সব জানেন, অথচ তদন্তে সহযোগিতা করছেন না। তার পরেই সুকন্যার নামে থাকা বিভিন্ন সংস্থা, সম্পত্তি ও ব্যাঙ্ক আমানতের একের পর এক নথি তুলে ধরে তাঁকে প্রশ্ন করা হতে থাকে। সেই সব নথিতে সুকন্যার সই রয়েছে। কিন্তু তিনি ওই সব বিষয়ে কিছুই জানতেন না বলে জানান সুকন্যা।
ইডি জানাচ্ছে, জিজ্ঞাসাবাদের সময় পাশে বসে থাকা হিসাবরক্ষককে দেখিয়ে সুকন্যা তদন্তকারীদের বলেন, ‘সমস্ত রকম নথিপত্র ইনি নিয়ে আসতেন। বাবার নির্দেশ অনুযায়ী সব নথিপত্রে আমি শুধু সই করেছি। এর চেয়ে বেশি আমি সত্যিই কিছু জানি না।’ তদন্তকারীদের দাবি অনুযায়ী, যিনি সুকন্যার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা জমা দিতেন, তাঁকে দেখিয়ে কেষ্ট-কন্যা বলেন, ‘উনি আমার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা জমা দিতেন। কিন্তু আমার সঙ্গে টাকার বিষয়ে কোনও দিন কোনও আলোচনা করা হত না।’