বাংলা হান্ট ডেস্ক: মাহশা আমিনি (Masha Amini), গত সেপ্টেম্বরে ইরানে (Iran) ২২ বছরের এই তরুণীর মৃত্যুতে রীতিমতো গর্জে ওঠে গোটা দেশ। এমনকি, সারা বিশ্বজুড়েই মাহশার মৃত্যুর জেরে প্রতিবাদে সামিল হন মানুষ। মূলত, হিজাব (Hijab) না পরার কারণে তাঁকে আটক করে পুলিশ। এমতাবস্থায়, অভিযোগ ওঠে যে পুলিশের মারধরেই কোমায় চলে যান তিনি। এদিকে, হাসপাতালে তিন দিন ধরে কোমায় থাকার পর মৃত্যু হয় তাঁর। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ইরানের মৌলবাদী সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রদর্শন করে গোটা ইরান তথা বিশ্ব।
শুধু তাই নয়, শুরু হয় হিজাব আইনের বিরোধিতাও। এমনকি, ফুটবল বিশ্বকাপের মঞ্চেও প্রতিবাদ জানান খেলোয়াড়রা। নিজেদের প্রথম ম্যাচেই জাতীয় সঙ্গীত চলাকালীন গলা মেলাননি ইরানের জাতীয় দলের সমস্ত ফুটবলাররা। এমতাবস্থায়, ক্রমশ চাপের মুখে পড়তে থাকে সরকার। এদিকে, এবার বিতর্কিত এই আইন বদলানোর ভাবনাচিন্তা শুরু করা হয়েছে সরকারের তরফে।
ইতিমধ্যেই এই প্রসঙ্গে সেদেশের অ্যাটর্নি জেনারেল মহম্মদ জাফর মনতাজরি গত শুক্রবার জানিয়েছেন যে, ইরানে মহিলাদের বাধ্যতামূলকভাবে হিজাব পরিধান সংক্রান্ত আইনে প্রয়োজনীয় সংস্কার নিয়ে আসার ক্ষেত্রে সংসদ ও বিচার বিভাগ জরুরি ভিত্তিতে কাজ শুরু করেছে। এদিকে, গত শুক্রবার সেদেশের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি এক টেলিভিশন অনুষ্ঠানে মন্তব্য করেন, “সংবিধান বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কিছু পদ্ধতি রয়েছে। যা নমনীয় হতে পারে। আমরা ইতিমধ্যেই এই প্রসঙ্গে ভাবনাচিন্তা শুরু করেছি।”
যদিও, ওই আইনে সুনির্দিষ্টভাবে ঠিক কি কি পরিবর্তন নিয়ে আসা হচ্ছে সেই ব্যাপারে এখনও কিছু বিস্তারিতভাবে জানা যায়নি। এই প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি যে, ১৯৮৩ সালে ইরানে এই হিজাব সংক্রান্ত আইনটি চালু করা হয়েছিল। এমতাবস্থায় তখন থেকেই সেদেশে প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক মহিলার মাথা ঢেকে হিজাব পরা বাধ্যতামূলক ছিল। যদিও, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে মাহশা আমিনি নামের ওই তরুণী ব্যক্তি স্বাধীনতার কথা জানিয়ে হিজাব পরতে অস্বীকার করলে তাঁকে পুলিশ নিজেদের হেফাজতে নিয়ে মারধর করে বলে অভিযোগ ওঠে। এমনকি, মৃত্যুও হয় তাঁর।
এই ঘটনার জেরেই অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় গোটা ইরান জুড়ে। শুধু তাই নয়, সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এখনও পর্যন্ত ইরান পুলিশের হাতে ৩০০-রও বেশি নাগরিক নিহত হয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। এমনকি, হিজাব আইনের প্রতিবাদে সম্পন্ন হওয়া সম্মিলিত বিক্ষোভের জেরে গ্রেফতার হয়েছেন কমপক্ষে ১৪ হাজার মানুষ।