মেধার কাছে হেরে গেল দারিদ্রতা! কুঁড়েঘরে থেকে স্বপ্নের উড়ানে AIIMS-এ পাড়ি বাংলার মেয়ের

বাংলা হান্ট ডেস্ক: ঠিক যেন স্বপ্নের সফর! যে সফরে কুঁড়েঘর থেকেই নিজের লক্ষ্যপূরণ করে সকলের কাছে নজির গড়লেন দুর্গাপুরের (Durgapur) ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের দেশবন্ধু কলোনির বাসিন্দা সরস্বতী রজক। শুধু তাই নয়, দারিদ্রতাকে দূরে সরিয়ে রেখেই অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্স (All India Institute Of Medical Science) বা AIIMS-এর এন্ট্রান্স পরীক্ষায় প্রথম হয়েছেন তিনি। জানা গিয়েছে, দিল্লি AIIMS-এর তিনটি রাউন্ডের টেস্টে দক্ষতার সাথে উত্তীর্ণ হয়েছেন সরস্বতী। পাশাপাশি, ১০০ পার্সেন্টাল পেয়ে তাঁর র‍্যাঙ্কিং হয়েছে ১।

এমতাবস্থায়, ভাঙাচোরা কুঁড়েঘর থেকে এবার সরাসরি AIIMS-এ পাড়ি দেবেন সরস্বতী। পাশাপাশি, নিজের স্বপ্নকে পূরণ করে তিনি এবার ডাক্তারি পড়বেন দেশের সেরা সরকারি প্রতিষ্ঠানে। এই প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি যে, চলতি বছরের নিট পরীক্ষায় ৫৬২ নম্বর পেয়ে সারা দেশের মধ্যে ছয় হাজার ব়্যাঙ্ক করেছিলেন তিনি। যদিও, সেইখানে থেমে না থেকেই তিনি AIIMS-এর সর্বভারতীয় এন্ট্রান্স পরীক্ষায় বসে প্রথম হয়ে সবাইকে অবাক করে দেন।

   

তবে, বর্তমানে লক্ষ্যপূরণ করে ফেললেও তাঁকে কিন্তু এই লড়াইতে একাধিক প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয়েছে। ছোট থেকেই চরম দারিদ্রকে প্রত্যক্ষ করেছেন সরস্বতী। এমনকি, তাঁর উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার সময়ে কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কাজ হারিয়ে ফেলেন সরস্বতীর বাবা নিত্যানন্দ রজক। তবুও নিজের লক্ষ্য থেকে চোখ সরান নি তিনি। তবে, তাঁর প্রতিটি পদক্ষেপে দারিদ্রের কারণে হোঁচট খেতে হয় তাঁকে।

এমনকি, অর্থের অভাবের কারণে উচ্চমাধ্যমিকের পর নিট পরীক্ষায় বসতে পারেননি সরস্বতী। পরিবর্তে উদ্ভিদবিদ্যা (Botany) নিয়ে রানীগঞ্জের ত্রিবেণীদেবী ভালোটিয়া কলেজে ভর্তি হন তিনি। এমতাবস্থায়, স্নাতক হওয়ার পরই নিট পরীক্ষায় বসে সফলতা অর্জন করেন এই লড়াকু পড়ুয়া। বর্তমানে সরস্বতীর বাবা গ্যাস ওভেন সারিয়ে সামান্য রোজগার করেন। পাশাপাশি, তাঁর মা মীনাদেবী বাড়িতে ঠোঙা তৈরি করে তা বিক্রি করে উপার্জনের চেষ্টা করেন। এদিকে, সরস্বতীকে পড়াশোনা করাতে গিয়ে আর্থিক অনটনের জেরে তাঁর দাদা পড়াশোনা ছেড়ে দেন।

1670128708 aiims girl 1

এমতাবস্থায়, তাঁর এই বিরাট সাফল্যের পিছনে পরিবারের সকলের লড়াই সামিল রয়েছেন বলে জানিয়েছেন সরস্বতী। একটা সময়ে চিকিৎসার অভাবে দিদাকে হারাতে হয় সরস্বতীকে। আর সেখান থেকেই মনে মনে চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন তিনি। এমতাবস্থায়, ভালো চিকিৎসক হয়ে এলাকার দরিদ্র মানুষদের চিকিৎসা করতে চান সরস্বতী।

Sayak Panda
Sayak Panda

সায়ক পন্ডা, মেদিনীপুর কলেজ (অটোনমাস) থেকে মাস কমিউনিকেশন এবং সাংবাদিকতার পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্স করার পর শুরু নিয়মিত লেখালেখি। ২ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলা হান্ট-এর কনটেন্ট রাইটার হিসেবে নিযুক্ত।

সম্পর্কিত খবর