বাংলা হান্ট ডেস্ক: কলকাতা (Kolkata) শহরের চিরাচরিত যানবাহনের প্রসঙ্গ উপস্থাপিত হলেই যেগুলির কথা আগে বলতে হয় সেগুলি হল হলুদ ট্যাক্সি, হাতে টানা রিকশা এবং ট্রাম। একটা সময়ে তিলোত্তমার বুকে এগুলিই ছিল পরিবহণের অন্যতম মাধ্যম। যদিও, কালের নিয়মে এবং দ্রুতগতির দুনিয়ায় ক্রমশ হারিয়ে যেতে বসেছে এগুলি। এদিকে, ইতিমধ্যেই জানা গিয়েছে যে, কলকাতার অব্যবহৃত ট্রাম রুটগুলিকে “পুনরুজ্জীবিত” করার সিদ্ধান্ত নেয়নি সরকার। আর তারপরেই এহেন সিদ্ধান্তকে রীতিমতো “দুর্ভাগ্যজনক” আখ্যা দিয়েছেন ট্রামপ্রেমীরা।
ইতিমধ্যেই পরিবহণ বিশেষজ্ঞ তথা সেন্টার ফর সাইন্স অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টের (CSE) একজিকিউটিভ ডাইরেক্টর অনুমিতা রায় চৌধুরী সরকারের এহেন সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেন, “শহরজুড়ে এখন যখন বৈদ্যুতিক যানবাহনকে সাদরে গ্রহণ করা হচ্ছে তখন কিভাবে আসল EV-কে বাতিল করে দেওয়া যেতে পারে? সমগ্ৰ বিশ্বজুড়েই নানান শহরে পরিবহণের সবচেয়ে জলবায়ু-বান্ধব মাধ্যম হিসেবে ফিরে আসছে ট্রাম। এমতাবস্থায়, এই জীবন্ত পরিবহণ ব্যবস্থাকে ‘মৃত’ ও ঐতিহ্যবাহী রুটে পরিণত করার কোনো মানেই হয় না।”
পাশাপাশি, ক্যালকাটা ট্রাম ইউজার অ্যাসোসিয়েশনের (CTUA) সভাপতি দেবাশীষ ভট্টাচার্য বলেন, এর আগেও ১৯৪৬-৫০ সাল নাগাদ বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন জায়গায় ট্রামের অবলুপ্তির প্রসঙ্গ সামনে আসে। কিন্তু, এখন ফের বড় শহরগুলিতে ট্রামকে পুনরুজ্জীবিত করা হচ্ছে।
এই প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি যে, রাস্তার পরিসর বাড়াতে এবং যানজটকে সামাল দিতে ট্রামের ট্র্যাকগুলির ওপর বিটুমিনের আস্তরণ দেওয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই চারটি রুটকে “হেরিটেজ রুট” হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। যদিও, এখন টালিগঞ্জ-বালিগঞ্জ এবং গড়িয়াহাট-এসপ্ল্যানেড, পাশাপাশি, শ্যামবাজার-এসপ্ল্যানেড ও খিদিরপুর থেকে এসপ্ল্যানেড পর্যন্ত রুটগুলি সচল আছে। তবে, পরিবহণ আধিকারিকরা অবশ্য জানিয়েছেন যে, ভবিষ্যতে যদি কোনো সময়ে কোনো একটি রুটকে ফের পুনরুজ্জীবিত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয় সেক্ষেত্রে খুব একটা বেশি কাজের প্রয়োজন হবে না। অর্থাৎ, ট্র্যাকগুলিকে উপরে ফেলা হচ্ছে না। তার মানে উপরের বিটুমিনের স্তরটিকে ছাড়িয়ে দিলেই ফের সেগুলির ব্যবহার করা সম্ভব।
যদিও, ট্রামপ্রেমীদের মন রীতিমতো ভারাক্রান্ত হয়ে রয়েছে পুরো ঘটনায়। কারণ, যে জিনিস একবার চলে যায় সেটি ফিরিয়ে নিয়ে আসা বেশ চ্যালেঞ্জের ব্যাপার। এমনকি, অনেকেই ট্রামে চড়ার প্রসঙ্গে নিজেদের ব্যক্তিগত স্মৃতি রোমন্থনও করছেন। এই প্রসঙ্গে গবেষক অভিজিৎ সাহা জানিয়েছেন যে, “বর্তমানে শহর ‘কার-সেন্ট্রিক পলিসি’-র দিকে এগোচ্ছে। এমতাবস্থায়, ট্রাম দ্বারা খালি হওয়া শূন্যস্থান গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য ব্যবহৃত হতে পারে। সুতরাং, ট্রাম অবলুপ্তির বিষয়টি প্রত্যক্ষভাবে শহরের যানজটকে আরও বাড়িয়ে তুলবে।” এই প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি যে, গবেষক অভিজিৎ সাহার লেখা “রাজপথে ট্রাম” বইটি বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে।