বাংলা হান্ট ডেস্ক : কলকাতার প্রাক্তন মেয়র তিনি। তার উপর কলকাতা হাইকোর্টের দুঁদে আইনজীবী। বর্তমানে বাঙালি বোদ্ধাদের যদি তালিকা করা হয় তার প্রথম দিকেই নাম থাকবে বিকাশ রঞ্জন ভাট্টাচার্যর (Bikash Ranjan Bhattacharya)। সম্প্রতি টেট মামলায় তিনিই হলেন আন্দোলনকারী পক্ষের উকিল। মূলত তাঁর দাপটেই আইনি লড়াইয়ে খাবি খাচ্ছে রাজ্য সরকার। কিন্তু এই রকম একজন বিচক্ষণ মানুষের বিরুদ্ধে যখন বারংবার বিশেষ একটি ধর্মের ভাবাবেগে আঘাত করার অভিযোগ ওঠে তখন তা দুর্ভাগ্যজনক বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।
একি বললেন বিকাশ রঞ্জন ভাট্টাচার্য? নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের কড়া সমালোচনা করেন এই বাম নেতা। তিনি লেখেন, ‘গর্ভাবস্হায় নারীদের হনুমান,রাম,শিবাজী র গল্প পাঠ সহ বেদ উপনিষদ পাঠ পরিকল্পনার সিদ্ধান্তের মূল ভিত্তি হল অবৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী কে বিশ্বাস করা| মানবজনম সৃষ্টির ঐশ্বরিক ক্ষমতার তত্ত্ব বাতিল করে দিয়ে ডারউইনের ধারাবাাহিক বিকাশের (theory of evolution) তত্ত্ব এখন সর্বজন স্বীকৃত।’
এখানেই শেষ নয়। এরপর কলকাতার প্রাক্তন মেয়র নিশানা করেন রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘকেও। তিনি বলেন, ‘আর এস এস হাজার চেষ্টা করেও ভগবানের কৃপার তত্ত্ব দিয়ে ডারউইনের তত্ত্বকে অস্বীকার করতে পারবে না। মাতৃসম্ভবা নারীদের পুষ্টিকর খাবার ও সুস্থ স্বাধীন পরিবেশ দিলেই সুস্থ সবল সন্তান জন্ম নেবে।’ বিকাশ রঞ্জনের এই মন্তব্যের পরই শোরগোল শুরু হয়েছে গোটা দেশ জুড়ে।
তবে এই প্রথম নয়। এর আগে বহুবার হিন্দু ভাবাবেগে আঘাত করার অভিযোগ উঠেছে কলকাতার এই প্রাক্তন মেয়রের বিরুদ্ধে। বছর খানেক আগে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে বিকাশবাবু লেখেন, “আজ একটি গুরুত্বপূর্ণ কমিটির সদস্য হিসেবে এ আই সিটি ই এ(AICTEA)র দপ্তরে গিয়েছিলাম। খুব সুন্দর এক বিশাল ইমারত। প্রবেশদ্বারেই একটি সুন্দর বিশালাকায় পুতুল ,হাতে তার বীনা। সেই পুতুলে পুষ্পার্ঘ্য দেবার অনুরোধ। আমি সবিনয়ে প্রত্যাখ্যান করলাম। বুঝলাম ওটি সরস্বতীর প্রতিমা।”
তবে সমস্ত সীমা পেরিয়ে গিয়েছিল যেদিন কলকাতার ধর্মতলায় দাঁড়িয়ে গোমাংস খেয়েছিলেন সিপিএম নেতা বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য। তাঁর সঙ্গে শহরের বেশ কিছু বিশিষ্ট ব্যক্তিও দোসর ছিলেন। বিকাশবাবুকে সেই মাংস মুখে তুলে খাইয়ে দিয়েছিলেন বিশিষ্ট কবি সুবোধ সরকার। সেই সময়ে কেন্দ্রে মোদি সরকার নতুন এসেছিল। তখন দেশের ধর্মনিরপেক্ষতা বজায় রাখতেই প্রকাশ্য রাস্তায় গোমাংস ভক্ষণ করেছিলেন ওই বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। যা নিয়ে বেশ বিতর্ক হয়েছিল।
আইনজীবী তথা বাম নেতা বিকাশ রঞ্জন ভাট্টাচার্যের উদ্দেশে বিরোধীদের কিছু প্রশ্ন :
১) ভারতীয় সংবিধানের চতুর্থ অধ্যায়ে নির্দেশমূলক নীতিসমূহের ৪৮ নম্বর ধারায় পরিষ্কার বলা রয়েছে, ‘গরুর মতো দুগ্ধ উৎপাদনকারী এবং চাষের কাজে ব্যবহৃত হওয়া প্রাণীর হত্যাকে বন্ধ করার সমস্ত রকম প্রচেষ্টা করবে ভারত সরকার। তাহলে, বিকাশবাবু একজন আইনজ্ঞ ব্যক্তি হয়েও কিভাবে প্রকাশ্যে গোমাংস খাওয়া গোহত্যাকে সমর্থন করলেন?
২) সংবিধানের মৌলিক অধিকারের ২৫ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে প্রত্যেক ভারতীয় নাগরিক তাঁর ইচ্ছা মতো ধর্ম এবং ধর্মীয় আচার-আচরণ পালন করতে পারেন। এবং কোনও ধর্মের বিশ্বাসে আঘাত করা দণ্ডনীয় অপরাধ। তাহলে বিকাশ রঞ্জন ভাট্টাচার্য কোন অধিকারে সরস্বতীর মূর্তিকে পুতুল বলে হিন্দু ভাবাবেগে আঘাত করলেন?
৩) সংবিধানের মৌলিক দায়িত্বের মধ্যে ৫১ ‘এ’ ধারায় বলা হয়েছে ভারতীয় ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে রক্ষা করা প্রত্যেক ভারতীয়ের আবশ্যিক কর্তব্য। শিবাজি, ভগবান রাম, ভগবান হনুমান শুধু হিন্দুর নয় বরং ভারতীয় ঐতিহ্যের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তাঁদের ‘অবৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী’ বলে ভারতীয় সংস্কৃতির অপমান করে আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভাট্টাচার্য কি দণ্ডনীয় অপরাধ করলেন না?