বাংলাহান্ট ডেস্ক: সুন্দরবনে (Sunderbans) বাংলাদেশি জলদস্যুদের উপদ্রবের কথা নতুন কিছু নয়। এখন শুরু হয়েছে মধু সংগ্রহ করার মরসুম। এই সময়ে ওই অঞ্চলে জলদস্যুর উপদ্রব আরও কিছুটা বেড়ে যায়। তেমনই সম্প্রতি ভারতের দিকের সুন্দরবনে ঢুকে পড়ে জলদস্যুদের একটি দল। এদিকে মৌলি অর্থাৎ মধু সংগ্রহকারীদের নিরাপত্তার জন্য ব্যবস্থা নিয়েছে প্রশাসন। ‘অপারেশন গোল্ডেন হানি’ নামক বন দফতরের একটি দলও রয়েছে। সেই দলই গ্রেফতার করেছে পাঁচজন বাংলাদেশি জলদস্যুকে।
বাংলাদেশ থেকে আগত ওই পাঁচ জলদস্যুকে ধরার কাহিনী হার মানাবে সিনেমাকেও। রীতিমতো সমুদ্রে সাঁতার কেটে তাঁদের পাকড়াও করা হয়েছে। শনিবার সুন্দরবন কোস্টাল থানার পুলিশের হাতে ধৃতদের তুলে দেয় বন দফতর। উল্লেখ্য, গত ৭ এপ্রিল থেকে সুন্দরবনে মধু সংগ্রহ করার কাজ শুরু হয়েছে। ১৫ ধরে জঙ্গলে মধু সংগ্রহ করার অনুমত নিয়ে মোট ৭৫টি দলে ভাগ হয়ে চলছে মধু সংগ্রহ করা।
বসিরহাট এবং সজনেখালি রেঞ্জ অফিস থেকে মোট ৫৭৬ জন মৌলি মধু সংগ্রহের জন্য গিয়েছেন জঙ্গলে। প্রতিবারই এই সময়টা জলদস্যুদের বাড়তি উৎপাত লক্ষ্য করা যায়। মধু লুঠ করতেই এ পারে হানা দেয় তারা। কয়েকদিন আগেও মধু লুঠ করতে হামলা চালিয়েছিল বাংলাদেশি জলদস্যুদের একটি দল। ওই হামলায় জখম হয়েছিলেন তিনজন মৌলি। এই ঘটনার পর থেকেই আতঙ্কে থাকতে শুরু করেন তাঁরা।
যদিও মৌলিদের নিরাপত্তার স্বার্থে বন দফতরের তরফে তৈরি করা হয় ‘অপারেশন গোল্ডেন হানি’ নামে একটি বিশেষ দল। প্রতি দিন ও রাতের বেলা চামটা, লুধিরদুয়ানি ও ভুরকুন্ডা রেঞ্জে পাহাড়া দিচ্ছেন তাঁরা। নদীতে চলছে টহল। ১৮ এপ্রিল টহল দেওয়ার সময় একটি নৌকায় পাঁচজনকে খুব দ্রুত বাংলাদেশের দিকে পালিয়ে যেতে দেখেন বন দফতরের কর্মীরা। সঙ্গে সঙ্গে স্পিড বোট নিয়ে তাদের পিছু ধাওয়া করতে থাকেন অপারেশন গোল্ডেন হানির সদস্যরা।
তাদের ধাওয়া করা হচ্ছে বুঝে জঙ্গলে লুকিয়ে যায় ওই জলদস্যুদের দলটি। কিন্তু তাদের ধরতে গোসাবার রেঞ্জ অফিসার স্বপন মাঝির নেতৃত্বে চামটা, লুধিরদুয়ানি ও ভুরকুন্ডা এলাকায় চিরুনি তল্লাশি শুরু করে। এদিকে বাঘের ভয় এবং ধরা পড়ে যাওয়ার ভয়ে সমুদ্র সাঁতরে বাংলাদেশ পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে ৪ জলদস্যু। কিন্তু তাতেও শেষ রক্ষা হয়নি। সাঁতার কেটেই তাদের ধাওয়া করেন বন দফতরের কর্মীরা। শেষ পর্যন্ত মৎসজীবীদের নৌকায় উঠে বাঁচার চেষ্টা করলেও শেষরক্ষা হয়নি। ধরা পড়ে যায় তারা।
জানা গিয়েছে, ধৃত জলদস্যুদের নাম ওলিউর রহমান, মহম্মদ আসাদুল, মহম্মদ মোফিজুর রহমান, সৈদুল সেখ ও আলম গাজি। সকলেই বাংলাদেশের সাতক্ষীরার বাসিন্দা। জলদস্যুদের থেকে একটি নৌকো, ৪ ড্রাম মধু সহ অন্যান্য বেশকিছু জিনিসপত্র বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। অভিযুক্তদের ধরার পর তুলে দেওয়া হয় পুলিশের হাতে।