বাংলা হান্ট ডেস্ক: সম্প্রতি তুরস্কের কোম্পানি Baykar, Bayraktar TB2 ড্রোনের আরেকটি পরীক্ষা চালিয়েছে। এই পরীক্ষায়, ড্রোনটি নতুন Kemankes ক্রুজ মিসাইল দ্বারা সজ্জিত ছিল পাশাপাশি, Bayraktar TB2 ড্রোন সফলভাবে Kemankes ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। এমতাবস্থায়, ড্রোনের ইতিহাসে এটিকে একটি বিশাল সাফল্য হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। এখনও পর্যন্ত কোনো দেশই ড্রোন থেকে ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেনি। উল্লেখ্য যে, Bayraktar TB2 বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত সশস্ত্র ড্রোন। এটি থেকে আরও অনেক ধরণের অস্ত্র নিক্ষেপ করা যায়।
তুরস্কের ড্রোনের জেরে এই কারণে চিন্তায় ভারত: জানিয়ে রাখি যে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ সহ নাগোর্নো-কারাবাখ যুদ্ধেও এই ড্রোনের ব্যাপক ব্যবহার দেখা গেছে। এদিকে, এই ড্রোন থেকে ক্রুজ মিসাইল উৎক্ষেপণের কারণে ভারতের উদ্বেগও বেড়েছে। কারণ, এই ড্রোন ইতিমধ্যেই পাকিস্তানের কাছে রয়েছে। এমতাবস্থায় তুরস্ক তার পরম বন্ধু পাকিস্তানকে ক্রুজ মিসাইলও দিতে পারে। এদিকে, একটি ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রকে শনাক্ত করা এবং সেটিকে ধ্বংস করা খুব কঠিন বলে মনে করা হয়। যখন এটি একটি ড্রোন থেকে উৎক্ষেপণ করা হয়, তখন এর ফায়ারের ক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়। পাশাপাশি, তুরস্ক সম্প্রতি পাকিস্তানের জন্য স্টিলথ প্রযুক্তিতে সজ্জিত বেশ কয়েকটি যুদ্ধজাহাজও তৈরি করেছে।
Kemankes ক্রুজ মিসাইল এর বৈশিষ্ট্য: Kemankes ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র শত্রুর ভূখণ্ডে প্রবেশ না করেই শত্রুকে আক্রমণ করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। এই ক্রুজ মিসাইল Bayraktar TB3 এবং আকিনচি ড্রোন থেকেও উৎক্ষেপণ করা যেতে পারে। তুরস্ক চলতি বছর এই ড্রোন লঞ্চ মিনি ক্রুজ মিসাইল উৎক্ষেপণ করেছে। এই ক্রুজ মিসাইলটির ওজন প্রায় ৩০ কেজি। যার মধ্যে ৬ কেজির কেজির ওয়ারহেড রয়েছে। এর গোলাবারুদের সামগ্রিক দৈর্ঘ্য ১৭০ সেন্টিমিটারের একটু বেশি।
পাশাপাশি, এই মিনি ক্রুজ মিসাইলটিতে একটি টার্বোজেট ইঞ্জিন লাগানো আছে। যা প্রতি ঘণ্টায় ৭২০ কিলোমিটার বেগে উড়তে পারে। Kemankes-এর ক্রুজের গতি হল ৩৬০ kmph। পাশাপাশি, এটি ২০০ কিলোমিটার রেঞ্জ পর্যন্ত আক্রমণ করতে সক্ষম। ক্ষেপণাস্ত্রটিতে একটি অপটিক্যাল গাইডেন্স সিস্টেম লাগানো হয়েছে। এছাড়াও, Kemankes ক্রুজ মিসাইলটিতে ৩৬ গুণ জুম, ডুয়াল-অ্যাক্সিস স্টেবিলাইজেশন এবং একটি লেজার রেঞ্জফাইন্ডার রয়েছে। যা ২.৮ কিমি পর্যন্ত দেখতে পারে।
পাকিস্তান ও তুরস্কের পুরোনো বন্ধুত্ব: বর্তমানে পাকিস্তান ও তুরস্কের বন্ধুত্বের বিষয়টি কারোর কাছেই গোপন নেই। এমনকি, তুরস্ক কাশ্মীর ইস্যুতে পাকিস্তানকে প্রকাশ্যে সমর্থন করে। এমন পরিস্থিতিতে তুরস্কের Bayraktar TB2 ইতিমধ্যেই পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কাছে রয়েছে। গত বছরের মে মাসে পাকিস্তানি বিমান বাহিনীর মুরিদ ঘাঁটিতে তুরস্কের Bayraktar TB2 ড্রোন দেখা গিয়েছিল। ওই ঘাঁটি পাকিস্তানি পাঞ্জাবের চকওয়াল জেলায় অবস্থিত। মুরিদ এয়ারবেস থেকে অমৃতসরের দূরত্ব মাত্র ২৪৩ কিমি এবং শ্রীনগরের দূরত্ব হল ২২৮ কিমি। এমতাবস্থায় এই ড্রোন সহজেই ভারতীয় সীমান্তের চারপাশের তৎপরতা পর্যবেক্ষণ করতে পারে।
এই ড্রোন কেনার জন্য রয়েছে প্রবল ভিড়: এই প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি যে, তুরস্কের Bayraktar TB2 ড্রোনের অনুমানিক মূল্য হল ২ মিলিয়ন ডলার। এটি তুরস্কের Baykar Defence Company তৈরি করেছে। কোম্পানিটির মালিকানা রয়েছে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগানের জামাই সেলচুক বায়রাক্তারের পরিবারের কাছে। এদিকে, সেলচুক হলেন এই কোম্পানির চিফ টেকনিক্যাল অফিসার।
ইতিমধ্যেই এই ড্রোনের সাফল্যের মাত্রা দেখে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ তুরস্কের কাছ থেকে ড্রোনটি কিনছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আগ্রহ প্রকাশ করেছে আফ্রিকান দেশগুলি। যার মধ্যে রয়েছে আফ্রিকার লিবিয়া, অ্যাঙ্গোলা, মরক্কো, নাইজার, সোমালিয়া, ইথিওপিয়া, নাইজেরিয়া, টোগো, বুরকিনা ফাসো, রুয়ান্ডা, টিউনিসিয়া, জিবুতি এবং মালি। এছাড়া ইউক্রেন, পাকিস্তান, কাতার, আজারবাইজান, তুর্কমেনিস্তান, কিরগিজস্তান, টোগো, পোল্যান্ড, সংযুক্ত আরব আমিরশাহী, আলবেনিয়া, ইরাক, কুয়েত, রোমানিয়া এবং জাপানও তুরস্কের Bayraktar TB2 ড্রোন ব্যবহার করছে।