মহাজোট? নাকি শুধুই নেমন্তন্ন রক্ষা! শিমলা বৈঠকের আগেই বাংলা নিয়ে শুরু মমতা-বাম-কং তরজা

বাংলা হান্ট ডেস্কঃ বছর ঘুরলেই লোকসভা নির্বাচন (Loksabha Election)। ইতিমধ্যেই মোদী শক্তি রুখতে জোটের পথে ১৫টি বিরোধী দল। পটনায় বিরোধী জোটের প্রথম বৈঠকের পর বিরোধীদের একটাই কথা, বিজেপিকে সরাতে হবে। তবে এতগুলো দল মিলে জোট গড়তে গিয়ে পথে হাজারো বাধা! ইতিমধ্যেই কংগ্রেস-আপ সম্পর্ক ‘কাঁটা’ হয়ে বিঁধেছে জোটের গলায়।

এরপর শিমলায় হতে পারে জোটের দ্বিতীয় বৈঠক। যেখানে রাজ্যওয়াড়ি আলোচনার আসর বসতে পারে। তবে সব দলের কথা সাইডে রাখলেও তৃণমূলের সাথে কী সমঝোতা করা সম্ভব সিপিএম বা কংগ্রেসের পক্ষে? যেখানে বাংলায় তৃণমূলের (Trinamool) সাথে বাম এবং কংগ্রেসের (Left-Congress) দাউ-মাছ সম্পর্ক! আর ওদিকে দুয়ারে কড়া নাড়ছে পঞ্চায়েত নির্বাচন!

অন্যদিকে, সমস্যা হয়ে দাঁড়াতে পারে কেজরিয়ালের আপ। দিল্লি এবং পঞ্জাব, দু’টি রাজ্যেই ক্ষমতাসীন আম আদমি পার্টি (আপ)। কিন্তু তাদের পক্ষেও কী কংগ্রেসের সঙ্গে এক মঞ্চে বসা সম্ভব? এদিকে পাঞ্জাবের পর পরবর্তীতে দেশ জুড়ে ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে চায় আপ। এবারে লোকসভায় যদি আপ বাংলায় প্রার্থী দিতে চায় তবে কী মমতা সেটা মেনে নেবেন?

গতকালই দিল্লিতে মহাজোট হবেই বলে কোচবিহারের সভা থেকে মন্তব্য করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে পাশাপাশিই তিনি আরও বলেন, বাংলায় ‘মহাঘোঁট’ তৃণমূল ভেঙে দেবেন! এই অবস্থায় প্রশ্ন উঠছে যে সত্যিই কী মহাজোট সম্ভব! প্রতিবারই লোকসভা নির্বাচনের আগে বিজেপির বিরুদ্ধে জোট গঠনের চেষ্টা হয়। কিন্তু কোনও বারই বিরোধী জোট আর সাফল্য পায় না।

তবে এই মুহূর্তে বাংলায় যে কোনও জোট হবে না তা স্পষ্ট ভাবেই বুঝিয়ে দিয়েছেন সিপিএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। তবে তার কথা শুধু বাংলায় নয়, জাতীয় ক্ষেত্রেও কোনও জোট বা ফ্রন্ট সম্ভব নয়! এই বিষয়ে নেতার মন্তব্য, ‘‘জাতীয় স্তরে জোট হবে না। এটাই বাস্তবতাকে। সিপিএম আগেই বলেছে যে, গোটা দেশের নিরিখে আগামী লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির বিরুদ্ধে কী ভাবে ঐক্যবদ্ধ লড়াই গড়ে তোলা যায় সেই লক্ষ্যে কাজ করতে হবে। সকলকে বিজেপির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। কিন্তু তৃতীয় ফ্রন্ট করলে চলবে না। ভোট তিন ভাগ করা যাবে না। বিজেপি বিরোধী ভোট গোটা দেশে এক করতে হবে।’’

এদিকে অধীর চৌধুরী পাটনা মিটিং নিয়ে বলেন, ‘‘দেশ জুড়ে ‘ভারত তোড়ো’র নীতির বিরুদ্ধে ‘ভারত জোড়ো’র বার্তা নিয়ে কংগ্রেস নেমেছে বিজেপিকে পরাজিত করতে। পটনায় একটা বৈঠক হয়েছে। নীতীশ কুমার ডেকেছিলেন। তার সঙ্গে কংগ্রেসের অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ সব জুড়ে দিয়ে কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছে যাওয়া ঠিক নয়!’’

যদিও আগেই এই বৈঠককে ‘লক্ষ্মীপুজোর নেমন্তন্ন’ আর রবিবার সেই মিটিংকে ‘বিয়েবাড়ির নেমন্তন্ন’ রক্ষা বলেও মন্তব্য করেন অধীর। যদিও এই বৈঠক নিয়ে তিন দলকেই আক্রমণ করতে ছাড়েনি বিজেপি। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী কথায়, ‘‘রাজ্যে বাম-কংগ্রেসের কর্মীরা মার খাচ্ছেন, রক্ত ঝরাচ্ছেন আর পটনায় তাদের নেতারা তৃণমূলের সঙ্গে বসে বিরিয়ানি-কফি খাচ্ছেন! সবাই বুঝতে পারছে কেমন সেটিং! আসল লড়াইটা শুধু বিজেপি লড়ছে।’’

অন্যদিকে সুকান্ত মজুমদারের কটাক্ষ, ‘‘পটনায় কোনও জোটের বৈঠক হয়নি। ওখানে দশটি পরিবারের সঙ্গে পাঁচটি ছোট দল গিয়েছিল। মোদীজি পরিবারতন্ত্র শেষ করার যে লড়াই শুরু করেছেন তা থেকে বাঁচতেই গান্ধী, যাদব, বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবার এক হয়েছে।’’

WB9বিরোধী জোট নিয়ে সেলিমের বক্তব্য, ‘‘পঞ্চায়েত নির্বাচন আর লোকসভা নির্বাচনকে গুলিয়ে ফেললে চলবে না। এখানে লড়াই যেমন তৃণমূলের বিরুদ্ধে, তেমনই দিল্লিতে ঐক্যবদ্ধ লড়াই দরকার বিজেপির বিরুদ্ধে।’’ কুণাল ঘোষের মতে, ‘‘রাজ্যে বিজেপির দুই ভাই— সিপিএম এবং কংগ্রেস (আই)! পঞ্চায়েতেও ওরা বিজেপির সঙ্গে মিলেমিশে আছে। বিজেপির সঙ্গে লড়ছে তৃণমূলই।’’আবার অধীর বলছেন, ‘‘মমতা এবং তার স্বৈরতান্ত্রিক শাসনের বিরুদ্ধে কংগ্রেসের লড়াই চলছে, চলবে।’’

এবার কথা হচ্ছে তা হলে রাহুল গান্ধী কেন জোটে যোগ দেবেন! কেনই বা পটনায় গেলেন? শিমলাতেও যাবেন কী করতে? এখানে আবার অধীরবাবুর যুক্তি, ‘‘না গেলে সকলে বলতো বিজেপির বিরুদ্ধে লড়তে কংগ্রেস আন্তরিক বা দায়িত্বশীল নয়!’’ তাহলে কী জোট-ভোট কিছুই নয়! সবটাই শুধুমাত্র নেমন্তন্ন রক্ষা! আর যদি তা নাই হয় তবে বাংলায় পঞ্চায়েতে কী হবে! আপাতত বিরোধীদের ভাবনা-চিন্তা বোঝা দায়।

Sharmi Dhar
Sharmi Dhar

শর্মি ধর, বাংলা হান্ট এর রাজনৈতিক কনটেন্ট রাইটার। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতায় স্নাতকোত্তর। বিগত ৩ বছর ধরে সাংবাদিকতা পেশার সঙ্গে যুক্ত ।

সম্পর্কিত খবর