বাংলা হান্ট নিউজ ডেস্কঃ ভারতীয় ক্রিকেটের ইতিহাসে সবচেয়ে সফল অধিনায়ক হলেন ‘মাহি’ অর্থাৎ আমাদের সকলের প্রিয় মহেন্দ্র সিং ধোনি (MS Dhoni)। ২০২০ সালে তিনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেন। কেউ কেউ এই সিদ্ধান্তে হতাশ হয়েছিলেন আবার কেউ ধোনিকে তার ভারতীয় ক্রিকেটের অবদানের কথা মাথায় রেখে খুশিমনে প্রশংসা করে বিদায় জানিয়েছেন। যদিও আইপিএলে এখনও নিয়মিত খেলে চলেছেন তিনি এবং গত মরশুমে সিএসকে-র তার নেতৃত্বে পঞ্চম ট্রফি পেয়েছে। কিন্তু আজ আমরা সকলের সামনে তুলে আনবো তার জীবনের আধ্যাত্মিক দিকটির কথা। অনেকেই বলেন ধোনি যেন নিজের ক্রিকেট জীবনে আশ্চর্য রকমের সফল এবং তার এই সফলতা খুব একটা স্বাভাবিক বলে মনে হয় না অনেকের। আমরা এবার এর পেছনে থাকা একটি গূঢ় গুজব সামনে তুলে ধরতে চলেছি।
অনেকেই জানেন না যে ধোনির জীবনে রাঁচির দেউরি মন্দিরের একটি বিশেষ স্থান রয়েছে। এই মন্দিরের প্রতি মাহির অটুট বিশ্বাস জড়িয়ে আছে। অনেকেই এটা শুনে তেমন কিছু আশ্চর্য নাও হতে পারেন অনেক মানুষই অনেক মন্দির বা ধর্ম স্থানের প্রতি আশ্চর্য রকমের আকৃষ্ট হন। তার সঙ্গে ধোনির ক্রিকেট জীবনের সাফল্যের সম্পর্ক কিভাবে থাকতে পারে!
অনেকেই জানেন না রাঁচি থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার দূরে রাঁচি-টাটা হাইওয়ের তামারে অবস্থিত মা দেউরির মন্দিরের কথা। তবে মাহি এখানে বারবার দর্শনের জন্য আসার কারণে এই মন্দিরটি বেশ খ্যাতি পেয়েছে। এই মন্দিরটি প্রায় ৭০০ বছরের পুরানো বলে অনেকের বিশ্বাস। এটা বিশ্বাস করা হয় যে ধোনি যখনই তার রাঁচির বাড়িতে যান, তিনি অবশ্যই এই মন্দিরে মায়ের আশীর্বাদ নিতে চান। নিজের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট জীবন চলাকালীন যখন কোনও ক্রিকেট সিরিজ খেলতে তিনি বাইরে যেতেন তখন এই ষোলোভূজা দেবী মায়ের দরবারে তিনি উপস্থিত হতেন। এমনকি ২০১১ সালে, যখন ধোনি ভারতকে বিশ্বকাপ শুরুর আগে তিনি প্রথমে এই মায়ের দরবারে এসেছিলেন আশীর্বাদ নিতে। আর বিশ্বকাপ জয়ের পর ধোনি রাঁচিতে পৌঁছতেই প্রথমে মায়ের দরবারে প্রণাম করেন।
মা দেউরির মন্দিরে ১৬ টি বাহু বিশিষ্ট দেবী কালীর মূর্তিটি প্রায় সাড়ে তিন ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট। কথিত আছে যে মায়ের এই মন্দিরের মূর্তি ওড়িশার প্রতিমা শিল্পের উপর ভিত্তি করে তৈরি। বিশ্বাস করা হয় যে এই মন্দিরটি ১৩০০ খ্রিস্টাব্দের প্রথম দিকের মধ্যযুগীয় সময়ে তৈরি। সিংভূমের মুন্ডা রাজা কেরা যুদ্ধে পরাজিত হয়ে ফিরে আসার সময় ভগবানের আশীর্বাদ চেয়ে মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। জনশ্রুতি আছে যে মন্দিরটি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সাথে সাথে রাজা তার হারানো রাজ্য ও সিংহাসন ফিরে পেয়েছিলেন।
মন্দিরের গঠনকাঠামোয় ঝাড়খণ্ডের আদিবাসী সংস্কৃতির ছাপ অত্যন্ত স্পষ্ট। আদিবাসীরাও এখানে পূজার কাজ করেন। তারাও বিশ্বাস করেন এই মন্দিরের অমোঘ ক্ষমতার বিষয়ে। কথিত আছে যে এখানে উপজাতিরা সপ্তাহে ৬ দিন পূজা করে এবং ব্রাহ্মণদের পূজার জন্য একটি আলাদা দিন দেওয়া হয়। মন্দির নির্মাণ নিয়ে নানা ধরনের গল্পকথা প্রচলিত আছে স্থানীয় অঞ্চলে। প্রথম গল্পে এই মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা আদিবাসী রাজা কেরাকে বলা হয়েছে। কিন্তু দ্বিতীয় গল্পটি আরও চমকপ্রদ
দ্বিতীয় গল্পে বলা হয়েছে ওড়িশার চামরু পান্ডা বছরে দুই বার এই অঞ্চলের রাজার কাছে আসতেন এবং তখনই তিনি এই স্থানে প্রার্থনা করতেন। একসময় রাজা পান্ডাদের এখানে বসতি স্থাপন করার অনুমতি দেয়। পাণ্ডারা রাজাকে জানালেন যে এই উপাসনার স্থানেই তারা নিজেদের বসতি স্থাপন করতে চান। রাজা তাদের দাবি মেনে সেই স্থানের বন পরিষ্কার করাতে শুরু করলেন। পরিষ্কার করার সময় একটি আজব আকৃতির কালো পাথর পাওয়া গেল। কিন্তু সেদিন শ্রমিকরা ক্লান্ত হয়ে পড়ায় তারা ফিরে গেলো। কিন্তু পরের দিন কাজ করতে এসে তারা আশ্চর্য হয়ে দেখল সেখানে একটা মন্দির উঠে এসেছে।