বাংলাহান্ট ডেস্ক: আর্থিক প্রতারণা মামলায় গতকালই আত্মপক্ষ সমর্থনে সাংবাদিক সম্মেলন ডেকেছিলেন অভিনেত্রী তথা সাংসদ নুসরত জাহান (Nusrat Jahan)। সেখানে জোর গলায় তছরূপে জড়িত থাকার বিষয় গোটাটাই অস্বীকার করেন নেত্রী। এদিকে ওই বৈঠকের পরপরই পাল্টা গুচ্ছ গুচ্ছ অভিযোগ নিয়ে ফের নুসরতকে এক হাত নিলেন বিজেপি নেতা শঙ্কুদেব পন্ডা (BJP Leader Shankudeb Panda)৷
শঙ্কুদেবের কথায়, ‘তিনি (নুসরত) সেই সময়ে এই কোম্পানির ডিরেক্টর ছিলেন। সেই টাকায় সম্পত্তি কিনেছেন। ১ কোটি ১৬ লক্ষ ঋণ বলছেন। অফিসিয়াল ডিডে নুসরত জাহান নিজে জানিয়েছেন কবে কোন কোম্পানি থেকে কত টাকা নিয়েছেন।’
এখানেই শেষ নয়, এরপর টাকার অঙ্ক উল্লেখ করে একে একে চেক নম্বরসহ ডিড-এর তালিকও পড়েন শঙ্কুদেব। তার কথায়, ‘উনি নিজে সই করে অফিসিয়ালি ডিড করে জমা দিয়েছেন। সবমিলিয়ে ১ কোটি ৯৮ লক্ষ টাকা তুলেছেন।’
গতকাল সাংবাদিক সম্মেলনে নুসরত দাবি করেন, ১ কোটি ১৬ লাখ ৩০ হাজার ২৮৫ টাকা তিনি লোন নিয়েছিলেন সংস্থা থেকে। ২০১৭ সালের ৬ মে সুদ সমেত ১ কোটি ৪০ লাখ ৭১ হাজার ৯৯৫ টাকা তিনি ফেরত দেন। তার ব্যাঙ্ক ডিটেলসে সব প্রমাণও রয়েছে বলে দাবি করে নুসরত বলেন তিনি ৩০০ শতাংশ সৎ। ২০১৭-র ১ লা মে তিনি ওই সংস্থার ডিরেক্টর পদ থেকে পদত্যাগ করেন বলে জানান নুসরত।
এই প্রসঙ্গ তুলে পাল্টা শঙ্কুদেব প্রশ্ন করে বলেন, ‘আপনি আমাদের পাগল ভাবেন? সাংবাদিকদের জ্ঞান দিচ্ছেন? আপনি ২৪ কোটি টাকার আশেপাশে তুলেছেনই। আপনি যে টাকা তুলেছেন, তাতেই শোধ করেছেন। আপনি অফিসিয়াল আয়কর রিটার্নে আসল টাকার অঙ্ক দেখাননি৷’ পাশাপাশি বিজেপি নেতার প্রশ্ন একটা কোম্পানি ১ কোটি ১৬ লক্ষ টাকার লোন ডিরেক্টরকে কেন দেবে?
ঘটনায় আর্থিক তছরূপের কারণ দেখিয়ে ইডি তদন্তের দাবি করেন শঙ্কুদেব। পাশাপাশি নেতার হুঙ্কার যদিও কেন্দ্রীয় সংস্থা এই বিষয়ে খতিয়ে না দেখে তাহলে তিনি আদালতেও যাবেন। অন্যদিকে গতকাল নুসরত বলেন, মামলা বিচারাধীন রয়েছে। যেহেতু মামলাটা আদালতে বিচারাধীন তাই এ বিষয়ে নাক গলানো সভ্য সমাজের কাজ নয়।
এর প্রেক্ষিতে পাল্টা শঙ্কুদেব বলেন, “ওর প্রধান উদ্দেশ্যই ছিল এই বয়স্ক মানুষগুলির মৃত্যু হলে আর টাকা ফেরত দিতে হবে না। এই বুদ্ধি থেকেই করা হয়েছে।” বাংলায় এহেন অপরাধ আগে ঘটেছে কিনা আমার সেই বিষয়েও আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
প্রসঙ্গত জানা যায়, মেসার্স সেভেন সেন্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার প্রাইভেট লিমিটেড নামে একটি সংস্থার সঙ্গে কো অপারেটিভ ভাবে ফ্ল্যাট কেনার চুক্তি হয়েছিল কয়েকজনের। ওই সংস্থার ডিরেক্টর ছিলেন তৃণমূল সাংসদ-অভিনেত্রী নুসরত জাহান। ২০১৪ সালে চুক্তি অনুযায়ী ৫ লক্ষ ৫৫ হাজার টাকা করে ওই সংস্থাকে ফ্ল্যাট কেনা বাবদ দিয়েছিলেন ৪২৯ জন। তিন বছরের মধ্যেই রাজারহাট হিডকোর কাছে ফ্ল্যাট দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও ২০১৮ সাল পার হলেও ফ্ল্যাট মেলেনি৷
অভিযোগ উঠেছে, প্রায় ২৪ কোটি টাকা ভাগাভাগি হয়েছে সংস্থার ডিরেক্টরদের মধ্যে, যাদের মধ্যে অন্যতম নাম নুসরত জাহান। তিনি যে অভিযুক্ত সংস্থার অন্যতম ডিরেক্টর ছিলেন তা বারে বারে দাবি করেছেন অভিযোগকারীরা। প্রতারিত বিনিয়োগকারীরা আদালতের দ্বারস্থ হন। আদালতের নির্দেশে শুরু হয় পুলিশি তদন্ত।
বুধবার সাংবাদিক সম্মেলনে নুসরত জানান, তিনি সেই সময়ে সংস্থার ডিরেক্টর ছিলেন। তবে ৫ বছর আগেই তিনি সংস্থা থেকে ইস্তফা দিয়েছেন। সংস্থা থেকে নেওয়া ঋণের টাকাও সুদসহ ফেরত দেন বলে দাবি অভিনেত্রীর।