বাংলা হান্ট ডেস্কঃ ‘ফোনম্যান’ জীবনকৃষ্ণ (Jiban Krishna Saha)! বর্তমানে নিয়োগ দুর্নীতির (Recruitment Scam) অভিযোগে জেলবন্দি শাসকদলের এই বিধায়ক। তবে বাড়িতে CBI তল্লাশির সময় পুকুরে ফোন ফেলে রাতারাতি শিরোনামে উঠে এসেছিলেন তৃণমূল বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহা। বহুদিন হয়ে গেছে জেলেই দিন কাটছে বিধায়কের। চলছে সিবিআই তদন্ত। এরই মধ্যে ঘুম উড়লো জীবনের।
কিছুদিন আগেই পুকুরে ফেলে দেওয়া জীবনকৃষ্ণের দুটি ফোন উদ্ধার করেছে সিবিআই। এবার সেই ফোন থেকেই বেরিয়ে এল চাঞ্চল্যকর তথ্য।
চাকরি বাতিলের পর টাকা ফেরত চাওয়ায় এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন শাসকদলের এই দাপুটে বিধায়ক। শুধু কথা নয় এবার প্রমাণ সামনে আনলো সিবিআই।
এদিন এক এজেন্টের সঙ্গে বিধায়ক জীবনকৃষ্ণর হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটে (WhatsApp Chat) উঠে এল সেই তথ্য। ইতিমধ্যেই ২টি চ্যাট প্রকাশ্যে এনেছে গোয়েন্দারা। যা দেখে রীতিমতো রাতের ঘুম ওড়ার জোগাড়। বিধায়কের পুকুরে ফেলা দেওয়া ফোন পাঠানো হয়েছিল ফরেন্সিক তদন্তে। এবার সেই জোড়া ফোনের উদ্ধার হওয়া তথ্যভাণ্ডার থেকে ২টি চ্যাট প্রকাশ্যে এনেছে সিবিআই।
চ্যাট থেকেই জানা যায়, ২০২২ সালের ১১ ও ১৮ অক্টোবরের চাকরি বাতিল হয়ে যাওয়ায় জীবনকৃষ্ণ সাহার কাছে টাকা ফেরত চাইছেন এজেন্টরা। প্রথম দিনের চ্যাট অর্থাৎ ১১ অক্টোবরের চ্যাটে এক ব্যক্তি প্রাথমিকের চাকরি বাতিল হয়ে যাওয়ায় তার কাছে জমা করা ১২ লক্ষ টাকা ফেরত চান। চাকরিপ্রার্থী বলেন- স্যার আপনি টাকাটা রিটার্ন করবেন বলেছিলেন।
জীবনকৃষ্ণর উত্তর- হ্যাঁ দেব। এখন তোমাকে ৬ দেব। বাকিটা পরে দেব।
চাকরিপ্রার্থী-পরে কবে স্যার?
জীবনকৃষ্ণ- দেখে নিচ্ছি কবে। কিছু জমি বিক্রির চেষ্টা চলছে।
চাকরিপ্রার্থী- স্যার আপনি একবারে দেবেন বলেছিলেন।
জীবনকৃষ্ণ- হ্যাঁ, একবারে দেব বলেছিলাম। সবাইকেই অর্ধেক করে দিচ্ছি। তোমারটা এমন কিছু নয়। তুমি তো ১২ দিয়েছো। একজন ১৭ পাবে। তাকে ৭ দিতে হবে। আসানসোল, সিউড়ি থেকে ১৭ – ১৮ করে সবাই দিয়েছিল।
(এরপরেই হুমকি)…
জীবনকৃষ্ণ- বেশি খিটমিট করলে কিছুই দেব না। যা পারবে করে নেবে।
চাকরিপ্রার্থী- না না স্যার। আমি আর কী করব?
জীবনকৃষ্ণ- আমিই একমাত্র টাকা ফেরত দিচ্ছি। আর তো ওপরে কেউই দেয় না। আমি পুলিশের সঙ্গেও কথা বলেছি। পুলিশ তো বলেইছে আপনি তো টাকা নিতে যাননি। আপনার বাড়ি এসে টাকা দিয়ে গিয়েছে। আপনি চুপচাপ বসে থাকুন।
বেশি বাড়াবাড়ি করলে আমি আপনার কিন্তু বিরুদ্ধে এফআইআর করে দেব।
*১৮ অক্টোবরের দ্বিতীয় চ্যাট,
চাকরিপ্রার্থী- স্যার, ১৮৩ জনের বাতিল তালিকায় আমার নাম আছে।
জীবনকৃষ্ণ- পাঠাও দেখি
চাকরিপ্রার্থী- কঠিন সমস্যা। মান সম্মান নিয়ে টানাটানি হচ্ছে।
জীবনকৃষ্ণ- ঠিক আছে। চুপচাপ থাকো।
চাকরিপ্রার্থী- স্যার আমার টাকার দরকার। চারিদিকে খুব চাপ।
জীবনকৃষ্ণ- তোমাকে তো অর্ধেক দিয়েছি। বাকি টাকার জন্য ধৈর্য ধরতে হবে। আমাকে বার বার
ফোন করলে তুমি অ্যারেস্ট হয়ে যেতে পারো।
চাকরিপ্রার্থী-অ্যারেস্ট হওয়ার ভয় নেই।
(হুমকি দিয়ে) জীবনকৃষ্ণ- অ্যারেস্ট হওয়ার ভয় না থাকলে আজই চলে এসো। দম থাকলে এসো।
চাকরিপ্রার্থী-আর উপায় কী স্যার। ভয় তো আছেই। তাই আপনাকে অনুরোধ করছি।
জীবনকৃষ্ণ-আমি ওই সব অনুরোধ শুনি না। যা বলি তাই করি। ফলে চুপচাপ থাকো।
অর্থাৎ চাকরি বিক্রির কারবারের কথা পুলিশও জানত প্রথম চ্যাটে সেরমই দাবি করেন জীবনকৃষ্ণ।
প্রসঙ্গত গত ১৭ এপ্রিল সাড়ে ৬৫ ঘণ্টা তল্লাশি ও জিজ্ঞাসাবাদের পর গ্রেফতার হন বিধায়ক জীবন কৃষ্ণ সাহা। বর্তমানেও বিধায়ক পদ রয়েছে তার।