সকালে মন্দিরে পুজো, তারপর হয়ে যান “বাইক রেসার”! চিনে নিন কম্পিউটার সাইন্সে গ্র্যাজুয়েট এই পুরোহিতকে

বাংলা হান্ট ডেস্ক: আমাদের চারপাশে এমন অনেকেই থাকেন যাঁরা বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকার জন্য নিজের পছন্দের কাজ বা “প্যাশনকে” প্রাধান্য দিতে পারেন না। আর যেই কারণে একটা সময় পর তাঁরা কার্যত তাঁদের প্রিয় কাজগুলি থেকে অনেকটা দূরে সরে যান। তবে বর্তমান প্রতিবেদনে আজ আমরা আপনাদের কাছে এমন একজনের প্রসঙ্গ উপস্থাপিত করব যাঁর সম্পর্কে জানলে রীতিমতো অবাক হয়ে যাবেন প্রত্যেকেই। কারণ, তিনি একজন মন্দিরের পূজারী (Priest) হয়েও নিজের জন্যে সময় বের করে বাইক রেসিং (Bike Racing)-এর প্রতি তার ভালোবাসাকে এখনও বজায় রেখেছেন।

অর্থাৎ তিনি মন্দিরে পুজোর পাশাপাশি নিয়মিতভাবে রেসিং বাইকও চালান। মূলত, আজ আমরা আপনাদের কেরালার ৩৪ বছর বয়সী উন্নীকৃষ্ণন ভিএল-এর সাথে পরিচয় করাবো। যিনি প্রতিদিন ভোরবেলায় দেবী দুর্গার পূজাপাঠ এবং আরতির মাধ্যমে দিন শুরু করেন। আর তারপরেই সময় পেলে তিনি বেরিয়ে পড়েন তাঁর রেসিং বাইকটি নিয়ে।

এই প্রসঙ্গে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী জানা গিয়েছে যে, উন্নিকৃষ্ণান কেরালার কোট্টায়াম জেলার মঞ্জুর গ্রামের বাসিন্দা। তাঁর দিন শুরু হয় ঠিক ভোর সাড়ে পাঁচটায়। ভোরে পুদুকুলমগারা দেবী মন্দিরের দরজা খুলে দিয়ে মন্দিরে পুজো দিতে আসা ভক্তদের তিনি স্বাগত জানান। পরবর্তী কয়েক ঘন্টার জন্য, তিনি ভক্তি ভরে ভগবানের আরাধনায় এবং পুজোর মাধ্যমে নিজেকে উৎসর্গ করেন। এমতাবস্থায়, সকাল ৯.৩০ নাগাদ পুজোর পর্ব শেষ হওয়ার পরই উন্নীকৃষ্ণন রীতিমতো নিজেকে পাল্টে ফেলেন। মন্দিরের একটি কোণ থেকে তিনি তাঁর একটি ব্যাগ বের করে পুরোহিতের পোশাক পরিবর্তন করে হয়ে ওঠেন একজন “রাইডার”।

আরও পড়ুন: আম্বানি-টাটা-আদানি নয়! বরং ভারতের সবথেকে দানশীল ব্যক্তি হলেন ইনি, অবাক করবে তাঁর কর্মকাণ্ড

উন্নীকৃষ্ণন জানিয়েছেন, “আমি রাইডিং গিয়ার, গ্লাভস, বুট এবং হেলমেট ব্যাগ থেকে বের করে সেগুলি পরে আমার XPulse 200-এ চেপে পড়ি।” শুধু তাই নয়, প্রথম দিকে মন্দিরের ভক্তরা এবং স্থানীয় মানুষজন পুরোহিতের এহেন ভোলবদল দেখে অবাক হয়ে গেলেও এখন বিষয়টি সবাই জেনে গেছেন। উল্লেখ্য যে, উন্নীকৃষ্ণন মোটরসাইকেল চালানো এবং রেসিংয়ের প্রতি আকৃষ্ট হন ২০০৭ সালে। পাশাপাশি, ২০১১ সালের প্রথম দিকে, তিনি বাইক রেসিংয়ে দক্ষতা অর্জন করেন।

আরও পড়ুন: হার মানবে সিনেমাও! গয়না বিক্রি করে স্বামীকে পড়িয়েছেন স্ত্রী, এখন দু’জনেই করছেন সরকারি চাকরি

কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারের চাকরি ছেড়ে দেন: জানিয়ে রাখি যে, কম্পিউটার সায়েন্সে স্নাতক উন্নীকৃষ্ণন আইটি সেক্টরে কাজ করতেন। তখন তিনি ব্যস্ততার কারণে বাইক চালানোর খুব একটা সময় পেতেন না। ২০১০ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত নাইট শিফটে কাজ করতেন তিনি। এমতাবস্থায়, তিনি একটি কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়ে হঠাৎই চাকরি ছেড়ে দেন। এদিকে, উন্নীকৃষ্ণনের বাবা নারায়ণন নাম্বুদিরি ২০১৯ সালে প্রয়াত হন। তিনিও পুরোহিত ছিলেন। বাবার মৃত্যুর পর মন্দিরের দায়িত্ব এসে পড়ে তাঁর কাঁধে। পুরোহিত পরিবারে বড় হয়ে ওঠার কারণে তাঁর বাবা তাঁকে মন্দিরের সমস্ত আচার-অনুষ্ঠান শিখিয়েছিলেন। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে পুদুকুলামগারা দেবী মন্দিরে আনুষ্ঠানিকভাবে তিনি পুরোহিত হিসেবে যুক্ত হন।

Meet this priest who graduated in computer science

ইতিমধ্যেই উন্নীকৃষ্ণন ভারত ও নেপাল জুড়ে বাইক চালিয়েছেন। পাশাপাশি, মন্দিরের কাজকর্ম সামলে এই বছরের শুরুর দিকে, তিনি মোটর সাইকেল রেসিংয়ের জন্য ফেডারেশন অফ মোটর স্পোর্টস ক্লাব অফ ইন্ডিয়ার লাইসেন্স পেয়েছিলেন। পাশাপাশি উন্নীকৃষ্ণন কোয়েম্বাটোরে ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল র‌্যালি চ্যাম্পিয়নশিপেও অংশগ্রহণ করেন। এছাড়াও, তিনি বিভিন্ন রেসের জন্যে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তবে, তাঁকে এই রেসগুলিতে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীনও হতে হয়। মূলত, মন্দির থেকে আসা সামান্য অর্থ এবং ভক্তদের দ্বারা প্রদত্ত নৈবেদ্যর ওপরেই উপার্জন নির্ভর করে তাঁর।

Sayak Panda
Sayak Panda

সায়ক পন্ডা, মেদিনীপুর কলেজ (অটোনমাস) থেকে মাস কমিউনিকেশন এবং সাংবাদিকতার পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্স করার পর শুরু নিয়মিত লেখালেখি। ২ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলা হান্ট-এর কনটেন্ট রাইটার হিসেবে নিযুক্ত।

সম্পর্কিত খবর