বাংলা হান্ট ডেস্ক : যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের বাংলা বিভাগের পড়ুয়া স্বপ্নদীপ কুণ্ডুর মৃত্যু যেন খুলে দিয়েছে প্যান্ডোরা বক্স। সামনে আসছে র্যাগিং-র নামে চলা একাধিক ভয়ঙ্কর সব ঘটনার কথা। প্রশ্নের মুখে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও। কর্তৃপক্ষের নজর এড়িয়ে প্রাক্তনীরা কীভাবে দিনের পর দিন হোস্টেলে পড়ে থাকতে পারে? বহিরাগতরাই বা কীভাবে হোস্টেলে ঢুকে যায়? তা নিয়েও উঠছে প্রশ্ন। সম্প্রতি এই বিষয়েই সোজাসাপ্টা উত্তর দিলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের (Jadavpur University) হস্টেল সুপার (Hostel Superintendent) দ্বৈপায়ন দত্ত।
উল্লেখ্য, গত বুধবার ৯ অগাস্ট হোস্টেলের তিনতলা থেকে পড়ে মৃত্যু হয় স্বপ্নদীপ নামের এক প্রথম বর্ষের পড়ুয়ার। তারপর থেকেই তোলপাড় হয়ে উঠেছে রাজ্য রাজনীতি। বিক্ষোভ দেখিয়েছেন সাধারণ মানুষেরাও। এই ঘটনা প্রসঙ্গেই হস্টেল সুপারের স্পষ্ট মন্তব্য, “হস্টেলের ঘরে-ছাদে র্যাগিং চলত, প্রাক্তনীদের প্রভাব ছিল।” তিনি আরও বলেন, “আমরা ২ জন সুপার ৬০০ ছাত্রকে সামলাব কী করে?’
এখান থেকে একটা বিষয় স্পষ্ট যে ছাত্রদের নজরদারির ক্ষেত্রে যথেষ্ট উদাসীনতা ছিল কর্তৃপক্ষের। এই বিষয়ে সহমত পোষণ করেছেন হোস্টেলের নিরাপত্তা রক্ষীরাও। তাদের মতে, হোস্টেলের সিনিয়র এবং প্রাক্তনীদেরই দাদাগিরি চলত সেখানে। একাধিকবার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে এই বিষয়ে অভিযোগ জানিয়েও লাভের লাভ কিছুই হয়নি। এদিকে স্বপ্নদীপের পরিণতি দেখে ভীত সন্ত্রস্ত প্রথম বর্ষের আরও অনেক পড়ুয়া। দাবি, তারাও র্যাগিংয়ের শিকার।
আরও পড়ুন : একধাক্কায় দাম কমল জ্বালানির! দেখে নিন বাংলায় আজ কততে বিকোচ্ছে পেট্রল-ডিজেল?
পড়ুয়াদের একাংশের দাবি, সেই রাতে স্বপ্নদীপ ছাদ থেকে পড়ে যাওয়ার পর তথ্যপ্রমাণ লোপাট করতে ব্যস্ত ছিল সিনিয়ররা। এই প্রসঙ্গে হস্টেল সুপারের বক্তব্য, “৯ অগস্ট রাত ১২.০৭ নাগাদ আমাদের আর এক হস্টেল সুপার গৌতম মুখোপাধ্যায় আমাকে ফোন করে জানান যে আপনাদের কোনও একটা ব্লকে বারান্দা থেকে এক ছাত্র পড়ে গিয়েছেন। আমি যখন নীচে নামি ততক্ষণে ওই পড়ুয়াকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।”
আরও পড়ুন : পুজো কমিটির জন্য বিরাট সুখবর, ফের অনুদান বাড়াতে পারে রাজ্য সরকার! বৈঠক ডাকলেন মুখ্যমন্ত্রী
ইউজিসির নির্দেশিকা থাকার পরেও হোস্টেলে কেন সিসিটিভি বসানো হয়নি, তা নিয়েও অনুযোগ শোনা গিয়েছে সুপারের বক্তব্যে। এই বিষয়টি নিয়ে তোপ দেখেছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-ও। গত সোমবার স্বাধীনতা দিবসের প্রাক সন্ধ্যায় বেহালার একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন “ওখানে পুলিশ ঢুকতে দেয় না,. সিসিটিভি লাগাতে দেয় না। একটা আতঙ্কপুর হয়ে গেছে। যে ঘটনা ঘটেছে তাতে আমি দুঃখিত, আমি স্তম্ভিত, আমি মর্মাহত।”
আরও পড়ুন : ভোগান্তি! এই মাসে দু’দিন বন্ধ থাকবে মেট্রো পরিষেবা! বিপদে পড়ার আগে দেখুন তারিখ
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ঘটনার দিনকয়েক পরেই সোশ্যাল মিডিয়ায় হয়েছে ভাইরাল স্বপ্নদীপ কুণ্ডুর এক সহপাঠীর চ্যাট। যদিও বাংলাহান্টের পক্ষ থেকে সেই চ্যাটের সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি। ভাইরাল চ্যাট অনুযায়ী, হস্টেলের প্রথম রাতেই র্যাগিংয়ের শিকার হন স্বপ্নদীপ। রোজ রাত ১০ থেকে পাঁচটা অবধি চলত অকথ্য অত্যাচার। এমনকি তার গোলগাল চেহারার জন্য তাকে সমকামী বলেও উত্যক্ত করা হয়েছিল। চ্যাটের দাবি, ঐদিন তাকে উলঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়ে তাঁর পুরুষাঙ্গ উত্থিত করতে বলা হয়েছিল। সিনিয়রদের ভয়ে ছেলেটি তাই করে। তবুও ক্ষান্ত হয়নি সিনিয়ররা। এবং এরপরেই অকালে ঝরে যায় একটি তরতাজা প্রাণ।