বাংলা হান্ট ডেস্কঃ গত বছর থেকে দুর্নীতি ইস্যুতে তোলপাড় রাজ্য। এরই মধ্যে এবার প্রকাশ্যে এল উত্তরবঙ্গে (North Bengal) ৫০ কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ। বৃহস্পতিবার বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের (Justice Abhijit Gangopadhyay) এজলাসে এই মামলা উঠলে ক্ষোভে ফেটে পড়েন বিচারপতি। এরপরেই আসে বড় নির্দেশ।
অভিযোগ উঠেছিল ‘আলিপুরদুয়ার মহিলা ঋণদান সমবায় সমিতি’ নামে একটি সংগঠন ওই জেলার বহু মানুষের টাকা আত্মসাৎ করেছে। এরপরেই অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তে নামে সিআইডি। বিগত তিন বছর ধরে ওই আর্থিক তছরুপের (Money siphoning case) তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে সিআইডি (CID)। এদিন তদন্তকারীদের ভূমিকাতে অসন্তোষ প্রকাশ করলেন বিচারপতি।
কী কী অভিযোগ? এই আর্থিক তছরুপের মামলায় মামলাকারীদের মধ্যে কল্পনা দাস সরকারের অভিযোগ, আলিপুরদুয়ার মহিলা ঋণদান সমবায় সমিতিতে ২১ হাজার ১৬৩ জন টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন। সবমিলিয়ে যার পরিমাণ মোট ৫০ কোটি টাকা। বিনিয়োগকারীদের থেকে নেওয়া ওই টাকা বাজারে ঋণ হিসাবে খাটিয়ে পরে সঠিক সময়ে সকলে ফেরত পাবেন জানানো হয়েছিল সেই সংস্থার তরফে।
তবে কোথায় কী! টাকা ফেরত পাওয়ার সময় হলে বিনিয়োগকারীরা জানতে পারেন, সমিতিই ‘বিলুপ্ত’ হয়ে গিয়েছে। এরপরেই অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তে নামে CID. অভিযোগ গত তিন বছর ধরে তদন্ত করেও ঠিক কাদের কাছে ওই টাকা ঋণ হিসেবে পৌঁছেছে তার কিনারা করতে পারেনি তদন্তকারীরা।
আরও পড়ুন: বিশেষভাবে সক্ষম যুবতীকে ধর্ষণ? মহিষাদলে BJP নেতার বিরুদ্ধে মারাত্মক অভিযোগ
ওই সংস্থার পাঁচ কর্তাকে গ্রেফতার করা হলেও এখনও কোনো সুরাহা হয়নি। মামলাকারীদের অভিযোগ, যদি সত্যিই ঋণ দেওয়া হত, তাহলে গ্রহীতাদের নাম থাকত। তবে CID দীর্ঘদিন ধরে তদন্ত চালিয়েও কারও নামের কিনারা করতে পারেনি। মামলাকারীদের অভিযোগ, তাদের টাকা অন্যত্র পাচার করে দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্টের জলপাইগুড়ি সার্কিট বেঞ্চে এই মামলার শুনানি হয়। সমস্ত ঘটনা শুনে আদালতের রোষের মুখে পড়ে CID-র ভূমিকা। বিচারপতি বলেন, “এই আর্থিক তছরুপের ঘটনায় বিরাট প্রতারণা চক্র কাজ করেছে। প্রায় তিন বছর ধরে তদন্ত করার পরেও সিআইডি এই তদন্তের কিনারা করতে ব্যর্থ হয়েছে।”
আরও পড়ুন: হাইকোর্টে শুভেন্দুর ‘বিরাট’ জয়! বিচারপতি সেনগুপ্তর নির্দেশে ঘুম উড়লো তৃণমূলের
এরপরেই বিচারপতির কড়া নির্দেশ, “সিআইডির হাত থেকে তদন্তের ভার সিবিআই এবং ইডিকে (CBI-ED) দেওয়া হচ্ছে। ২৫ অগস্ট থেকেই এই দুই সংস্থা তদন্ত শুরু করে দেবে। তদন্তের স্বার্থে কাউকে জিজ্ঞাসাবাদ করা এবং প্রয়োজনে হেফাজতে নেওয়ার ব্যাপারেও তাদের পূর্ণ স্বাধীনতা থাকবে। এখানে সিআইডির আর তদন্ত করার কোনও প্রয়োজন নেই।”
বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় আরও বলেন, “তদন্তকারী সংস্থা যদি মনে করে আমার সার্কিট বেঞ্চে উপস্থিত থাকা প্রয়োজন, সে ক্ষেত্রে তারা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করবে। প্রধান বিচারপতি অনুমতি দিলে প্রতি শনিবার এই মামলার শুনানিতে থাকতে আমি প্রস্তুত।”
আগামী ১২ অক্টোবর দুই তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই এবং ইডিকে পৃথকভাবে এই তদন্তের রিপোর্ট জমার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। পরবর্তী সময়ে কলকাতা থেকেও এই মামলার শুনানি চলবে। ED, CBI ভিডিয়ো কনফারেন্সের মাধ্যমে শুনানিতে অংশগ্রহণ করতে পারবে বলে জানিয়েছে আদালত।