বাংলা হান্ট ডেস্ক: বর্তমান সময়ে ভারত ও কানাডার (India-Canada Tension) সম্পর্কে ক্রমশ উত্তেজনা বাড়ছে। এমতাবস্থায়, যে বিষয়টি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে আসছে তা হল এই দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বাড়লে ভারতের ওপর তার ঠিক কি কি প্রভাব পড়বে? অনুমান করা হচ্ছে যে, ভারতের পর্যটন খাতে এর কিছুটা প্রভাব পড়তে পারে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রতি বছর কানাডা থেকে ২৫ থেকে ৩০ হাজার পর্যটক শুধুমাত্র কেরালাতেই বেড়াতে আসেন। পর্যটন বিভাগের তথ্য অনুসারে, কেরালায় বিদেশি পর্যটকদের আগমনের ক্ষেত্রে শীর্ষ ১০ টি দেশের মধ্যে কানাডা অন্যতম।
এই প্রসঙ্গে পর্যটন সংস্থা কেরালা ভয়েজ ইন্ডিয়া প্রাইভেট লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর জর্জ স্কারিয়া দ্য হিন্দুকে জানিয়েছেন যে, অক্টোবর থেকে নভেম্বরে ছুটির মরশুম শুরু হতে চলেছে এবং বিদেশি পর্যটকদের প্রতিক্রিয়াও ভালো রয়েছে। তবে ভারত ও কানাডার মধ্যে কূটনৈতিক বিরোধ তৈরি হয়েছে। এটি একটি সমস্যা। যত দ্রুত সম্ভব এই সমস্যার সমাধান হবে বলে তিনি আশাবাদী। জর্জ স্কারিয়া বলেছেন যে, গত বছর UK-র সাথে ই-ভিসা ইস্যুর কারণে বড় পরিমাণে ট্যুরিস্ট ক্যানসেলেশন হয়েছে। এছাড়াও, তিনি বলেন মরশুম শেষ হতেই বিষয়টি মিটে যায়। কিন্তু হসপিটালিটি সেক্টর ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়।
এদিকে, ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন অফ ট্যুর অপারেটরসের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ই এম নাজীব জানিয়েছেন যে, দুই দেশের সম্পর্কের তিক্ততার প্রভাব সবার প্রথমে হসপিটালিটি সেক্টরে দেখা যাবে। তিনি জানান যে, এটি একটি গুরুতর সমস্যা এবং এই সম্পর্কের উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করতে হবে।
আরও পড়ুন: “ভারতের জন্য গর্বিত; তারা অপরিণত কাজ করে না”, কানাডার মুখে ঝামা ঘসে বড় বয়ান বাংলাদেশের
উল্লেখ্য যে, ট্যুরিজম পরিসংখ্যান ২০২৩ অনুসারে, গত বছর ভারতের পর্যটন খাতে কানাডার ৪.৪৮ শতাংশ অবদান ছিল। ২০২২ সালে কানাডা থেকে ২ লক্ষ ৭৭ হাজার পর্যটক ভারতে বেড়াতে এসেছিলেন। শুধু তাই নয়, সেই সময়ে তাঁরা প্রায় ২৫.৯ বিলিয়ন ডলার অর্থাৎ দু’লক্ষ দু’হাজার কোটি টাকা খরচ করেছেন।
আরও পড়ুন: এখনই হন সতর্ক! ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে এই কাজ না করলে ফ্রিজ হয়ে যাবে অ্যাকাউন্ট, জারি নির্দেশিকা
এদিকে, যখন থেকে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো “খালিস্তানি সন্ত্রাসবাদী” হরদীপ সিং নিজ্জার হত্যায় ভারতের ভূমিকা ছিল বলে দাবি করেছেন, তখন থেকেই এই দুই দেশের মধ্যে সংঘাতের আবহ তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি, এই অভিযোগ ওঠার পর এক শীর্ষ ভারতীয় কূটনীতিককে কানাডা থেকে বহিষ্কারও করা হয়েছে। এদিকে, এহেন বিষয়ের পরিপ্রেক্ষিতে, ভারত সরকার কানাডিয়ান সরকারের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে এবং একজন সিনিয়র কানাডিয়ান কূটনীতিককে বহিষ্কার করে।
কানাডার ওপর কি প্রভাব ফেলবে: জানিয়ে রাখি যে, দুই দেশের মধ্যে চলা এই সংঘাতের ফলে কানাডাও প্রভাবিত হবে। পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০২২ সালে ভারত কানাডা থেকে সর্বাধিক পরিমাণে অপরিশোধিত তেল এবং এই সম্পর্কিত পণ্য কিনেছে। মূলত, ওই সময়ে কানাডা থেকে ভারত প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার তেল কিনেছে। এদিকে, এর পাশাপাশি আমরা যদি অন্যান্য পণ্যের কথা বলি, সেক্ষেত্রে ভারত কানাডা থেকে সর্বাধিক পরিমাণে সার, উড পাল্প এবং প্ল্যান্ট ফাইবার কিনেছে। উল্লেখ্য যে, ভারত কানাডা থেকে নিউজপ্রিন্ট, কয়লা, সার, ডাল, পটাশ, কাঠ, মাইনিং প্রোডাক্ট এবং অ্যালুমিনিয়ামের মতো পণ্য আমদানি করে। এছাড়াও, ভারত সর্বাধিক পরিমাণে ডাল কেনে কানাডা থেকে। এমতাবস্থায়, এই সম্পর্কের অবনতি হলে সামগ্রিকভাবে আমদানি-রফতানিও প্রভাবিত হবে।