বাংলা হান্ট ডেস্ক : তিনি ভিক্টর ব্যানার্জি, যিনি একাধারে অভিনয় করেছেন ‘লাঠি’র মত আদ্যপান্ত বাংলা কমার্শিয়াল ছবিতে অন্যদিকে ‘দেব ভূমি’র মত নামজাদা হলিউড ছবিতেও উন্মাদনা সৃষ্টি করেছে তাঁর উজ্জ্বল উপস্থিতি। একথা বললেও অত্যুক্তি হবেনা যে, ভিক্টর ব্যানার্জিই হলেন ভারতের প্রথম আন্তর্জাতিক অভিনেতা। তবে যে মানুষটা বিশ্বদরবারে ভারতের নাম পৌঁছে দিয়েছেন, সেই মানুষটা হঠাৎ কোথায় হারিয়ে গেলেন?
বাংলা ইন্ডাস্ট্রি কি তাঁকে তাঁর যোগ্য সম্মাননা দিয়েছে? প্রশ্ন থেকেই যায়। কারণ নিজের মাথা চুলকেও আপনি ঠিক মনে করতে পারবেননা যে, শেষ কবে ভিক্টর অভিনীত নতুন কোনও বাংলা ছবি দেখেছেন। আর তাই আমরা আজকের প্রতিবেদনে ভিক্টর ব্যানার্জিকে খোঁজার চেষ্টা করব। জানবো অভিনেতার জীবনের চড়াই উৎরাই এবং সাফল্যের গল্প। এটাও জানবো যে, ইন্ডাস্ট্রিকে এতকিছু দিয়েও কীভাবে তিনি ব্রাত্য থেকে গেলেন।
অভিনয় জীবনে অভিনেতার হাতেখড়ি হয় ১৯৭৭ সালে সত্যজিৎ রায় পরিচালিত ‘শতরঞ্জ কি খিলাড়ি’ ছবির হাত ধরে। এই ছবিতে তাঁর তুখোড় অভিনয় দক্ষতা দেখে পরিচালক তাঁর পরের ছবি ‘ঘরে বাইরে’ তেও রাখার সিদ্ধান্ত নেন। সেই ছবিতে ভিক্টর অভিনীত নিখিলেশ চরিত্রটি আজও গেঁথে রয়েছে দর্শকমননে। এমনকি সেরা পার্শ্বচরিত্রের জন্য জাতীয় পুরস্কারও জিতে নিয়েছিলেন তিনি। অবাক করা বিষয় হল, কেরিয়ারের শুরুতেই সত্যজিৎ রায়ের মত একজন কিংবদন্তী পরিচালকের সাথে কাজ করার পরেও বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতে কেমন একটা আউট সাইডার হয়েই থেকে যাচ্ছিলেন ভিক্টর।
আরও পড়ুন : পুজোর আগেই বোমা! বিয়ে করছেন মিমি চক্রবর্তী, মুখ খুললেন তারকা সাংসদ
এখন বাংলা তাঁকে তাঁর যোগ্য সম্মান দেয়নি তো কী হবে! ভিক্টরের খ্যাতি তখন পৌঁছে গেছে বিদেশের মাটিতেও। অভিনেতার খোঁজে বাংলায় ছুটে এসেছেন হলিউডের তাবড় তাবড় পরিচালকেরা। সাল ১৯৮৪ তে ভিক্টরের কাছে আসেন খ্যাতনামা পরিচালক ডেভিড লিন। তিনি তখন ‘আ প্যাসেজ টু ইন্ডিয়া’ ছবির জন্য অভিনেতা খুঁজছেন। নায়ক হিসেবে পরিচালকের প্রথম পছন্দ ছিলেন ভিক্টর ব্যানার্জি। একাধিক অ্যাওয়ার্ড উইনিং ছবিতে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করছেন একজন বাঙালি। ভেবেই কীরকম একটা গর্বে ফুলে ওঠে বৈকি।
আরও পড়ুন : স্বপ্ন সত্যি হল! শুভশ্রীর কোলে তোয়ালে মোড়া একরত্তি মেয়েকে দেখে জল্পনা নেটপাড়ায়
আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রায় দশটিরও বেশি পুরস্কার জিতে নিয়েছিল এই ছবি। যার মধ্যে মোট দুটি বিভাগে অস্কার জিতেছিল এই ছবি। ভিক্টর ব্যানার্জিও গোল্ডেন গ্লোব ফেস্টিভ্যালে সেরা অভিনেতার পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছিলেন। যে মঞ্চে লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও, ব্র্যাড পিটের মত অভিনেতারা পুরস্কার নিতে ওঠেন সেই মঞ্চে ভিক্টরের চোস্ত ইংরেজী এবং স্পিচ বাকরুদ্ধ করে দিয়েছিল সকলকে। এরপর ভিক্টর কাজ করেন অস্কার জয়ী পরিচালক রোনাল্ড নেমির সাথে। কাজ করলেন ‘ফরেন বডি’ ছবিতে। গোটা ইংল্যান্ডে তখন ভিক্টরের জয়জয়কার, রাস্তা ঘাট ছেয়ে গেল ‘ফরেন বডি’র পোস্টারে।
আরও পড়ুন : এক মিশকায় রক্ষা নেই, ‘অনুরাগের ছোঁয়া’য় আসছে নতুন খল চরিত্র! দেখা যাবে এই অভিনেত্রীকে
এই ছবির পর তার জনপ্রিয়তা এমন জায়গায় পৌঁছায় যে, তার কাছে অফার আসে অপেরায় অভিনয় করার। অভিনেতা পৌঁছে যান ইংল্যান্ডের অপেরার মঞ্চেও। সেখানে যিশু খ্রিস্টের চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি। আজকের দিনে দাঁড়িয়ে একটা হলিউড ছবিতে চান্স পাওয়াটাকেই সবাই যেখানে বড় অ্যাচিভমেন্ট বলে মনে করে, সেখানে ভিক্টর মাত্র কয়েক বছরের মধ্যেই ইউরোপ ও আমেরিকা জয় করে ফেলেছিলেন। এরপর তিনি চলে যান অস্ট্রেলিয়ায়। সেখানে তিনি কাজ করেন জেরি লন্ডনের সাথে।
আরও পড়ুন : একাধিক প্রেম-হুকাপ! রামায়ণে অভিনয়ের আগে নিজেকে এইভাবে শুদ্ধ করতে চান রণবীর
এই ছবিতেও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় ছিলেন ভিক্টর ব্যানার্জি। এরপর তিনি বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন পরিচালকের সঙ্গে কাজ করেছেন। কাজ করেছেন একাধিক হিন্দি ছবিতেও। কাজ করেছেন মৃণাল সেন, শ্যাম বেনেগালের ছবিতেও। এরপর ভিক্টর নজরে আসেন ২০১৮ সালে ‘থিঙ্কিক অফ হিম’ ছবিতে। এখানে রবীন্দ্রনাথের ভূমিকায় ভিক্টর ছাড়া আর কাউকে যেন ভাবাই যায়না। দর্শকমহলেও দারুণ সমাদৃত হয়েছিল এই ছবি। এরপর ভারত সরকার তাঁকে দেশের তৃতীয় সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মান ‘পদ্মভূষণ’ পুরস্কারে সম্মানিত করে। এখন প্রশ্ন হল এতগুলো দেশে যে মানুষটার নাম ছড়িয়ে রয়েছে নিজের জন্মভিটে বাংলা তাঁকে ঠিক কী দিয়েছে? কী মনে হয় আপনাদের? নিজেদের মতামত লিখে ফেলুন কমেন্ট বক্সে।