বাংলা হান্ট ডেস্ক: চিন (China) ও তাইওয়ানের (Taiwan) মধ্যে উত্তেজনার রেশ ক্রমশ বাড়ছে। পাশাপাশি, মনে করা হচ্ছে যে, শীঘ্রই চিন তাইওয়ানে হামলার মতো বড় পদক্ষেপ নিতে পারে। তবে, চিন যদি এটি করে সেক্ষেত্রে এটি একটি বড় ভুল হিসেবে প্রমাণিত হতে পারে। মূলত, ভারত মহাসাগরেই আটকে যেতে পারে চিন। এই প্রসঙ্গে নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন যে, যুদ্ধ হলে ভারত মহাসাগরে চিনের তেলের সরবরাহ ব্যাহত হতে পারে।
ভারত মহাসাগরে আটকে যেতে পারে চিন: জানিয়ে রাখি যে, প্রতিদিন প্রায় ৬০ টি বড় চিনা তৈলবাহী জাহাজ ইরান উপসাগর হয়ে ভারত মহাসাগরে প্রবেশ করে এবং তারপরে দক্ষিণ চিন সাগর হয়ে চিনে পৌঁছে যায়। দক্ষিণ চিন সাগরে চিনা নৌবাহিনীর আধিপত্য রয়েছে। তবে, ভারত মহাসাগর এমন একটি এলাকা যেখানে চিনের কোনো উল্লেখযোগ্য বিমান সহায়তা বা বড় সামরিক ঘাঁটি নেই। এমতাবস্থায়, ভারত মহাসাগরে চিনের তৈলবাহী জাহাজগুলিকে সহজেই থামানো বা ধ্বংস করা সম্ভব। এমনটা হলে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি পঙ্গু হয়ে যেতে পারে। অস্ট্রেলিয়ার ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির নিরাপত্তা বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ডেভিড ব্রিউস্টারের বক্তব্য এমনটাই। নিরাপত্তা সমালোচকরা জানিয়েছেন, চিন যদি রাশিয়া ও ইউক্রেনের মতো দীর্ঘ যুদ্ধে আটকে যায়, তাহলে ভারত মহাসাগরে চিনের দুর্বলতা তার জন্য মারাত্মক হতে পারে।
ভারত মহাসাগর চিনের অর্থনীতিকে সঙ্কটে ফেলতে পারে: উল্লেখ্য যে, চিন গত ১১ মাসে নভেম্বর পর্যন্ত ৫১ কোটি টনেরও বেশি অপরিশোধিত তেল আমদানি করেছে। সরকারি তথ্য অনুসারে, চিনের তেল আমদানি ১২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রক পেন্টাগনের রিপোর্ট অনুযায়ী, চিনের প্রায় ৬২ শতাংশ অপরিশোধিত তেল এবং ১৭ শতাংশ প্রাকৃতিক গ্যাস মালাক্কা প্রণালী ও দক্ষিণ চিন সাগর দিয়ে আসে। এই পথটি ভারত মহাসাগরের মধ্য দিয়েই রয়েছে। এর পাশাপাশি, চিনে পশুর খাবারের জন্য সয়াবিনও এই পথ দিয়ে আমদানি করা হয়।
আরও পড়ুন: এবার বন্দে ভারতে করে ভূস্বর্গ, চলাচলের সুবিধার্থে ট্রেনে যুক্ত হচ্ছে ৩ টি বিশেষ ফিচার্স! জানাল রেল
জেনে নিন ভারত মহাসাগরে কেন চিন দুর্বল: মূলত, চিনের সামরিক স্যাটেলাইটের একটি বড় নেটওয়ার্ক রয়েছে। কিন্তু ভারত মহাসাগরে চিনের একটি মাত্র সামরিক ঘাঁটি রয়েছে। কিন্তু তাতেও বিমানের সাপোর্ট নেই। অক্টোবরে প্রকাশিত পেন্টাগনের এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, ভারত মহাসাগরে পাকিস্তান, তানজানিয়া এবং শ্রীলঙ্কায় চিনের ঘাঁটি রয়েছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত ওই ঘাঁটিগুলি শুধুমাত্র বাণিজ্য কার্যক্রমের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। এদিকে, জিবুতিতে চিনের একটি সামরিক ঘাঁটি থাকলেও সেখানে কোনো বিমান ক্ষেত্র অর্থাৎ এয়ার ফিল্ড নেই। এছাড়াও, ওই সামরিক ঘাঁটি আমেরিকা, ফ্রান্স ও ব্রিটেনের সামরিক ঘাঁটি দিয়ে ঘেরা।
আরও পড়ুন: Jio-র গ্রাহকদের জন্য সুখবর! বাজার কাঁপাচ্ছে ৩০ টাকার নিচের এই প্ল্যানগুলি, মিলছে বাম্পার সুবিধা
অপরদিকে, ভারত মহাসাগরে আমেরিকার উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি রয়েছে। আমেরিকার পঞ্চম নৌবহর বাহরিনে মোতায়েন রয়েছে। এছাড়াও, তাদের সপ্তম নৌবহর দিয়েগো গার্সিয়া দ্বীপ থেকে কাজ করে। যেটির সদর দপ্তর জাপানে। দিয়েগো গার্সিয়া ব্রিটেন দ্বারা শাসিত হয় এবং সেখানে দূরপাল্লার বোমারু বিমানের পাশাপাশি মার্কিন এয়ারক্রাফট কেরিয়ারও রয়েছে। পূর্ব দিকে অস্ট্রেলিয়াও সমুদ্রে ক্রমাগত নজরদারি বাড়াচ্ছে। অস্ট্রেলিয়ার P-8 Poseidon বিমান এবং মার্কিন ও ব্রিটেনের পারমাণবিক সাবমেরিন পশ্চিম উপকূলে ক্রমাগত নজরদারি বাড়াচ্ছে।
প্রস্তুতি নিচ্ছে চিনও: ভারত মহাসাগরে চিন যে তার দুর্বলতা সম্পর্কে সচেতন নয় তা নয়। বরং, চিনও ধীরে ধীরে তার সক্ষমতা বাড়াচ্ছে। চার থেকে পাঁচটি চিনা নজরদারি জাহাজ ভারত মহাসাগরে টহল দেয় এবং একই সংখ্যক যুদ্ধজাহাজ ও সাবমেরিনও সেখানে পৌঁছাতে পারে। এছাড়া চিন হাইনান দ্বীপে তার সামরিক ঘাঁটির কাছে পারমাণবিক ক্ষমতাযুক্ত ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রও মোতায়েন করেছে। শি জিনপিং ক্ষমতায় আসার পর থেকে চিনা সেনাবাহিনী ক্রমাগত নিজেদের আধুনিকীকরণ করছে এবং তাদের ক্ষমতা বৃদ্ধি করছে। পাশাপাশি, “ব্লকড”-এর মতো পরিস্থিতি এড়াতে চিন ৬০ দিনের জন্য পর্যাপ্ত তেলের মজুত রেখেছে। চিনে প্রাকৃতিক গ্যাস ও খাদ্যের মজুতও রয়েছে। এর বাইরে ভারত মহাসাগরের ওপর যাতে বেশি নির্ভরতা না থাকে সেজন্য চিন অপরিশোধিত তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করছে।