বাংলা হান্ট ফেস্ক: টেসলা এবং স্পেসএক্সের সিইও তথা বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি ইলন মাস্ক (Elon Musk) ২০২৪ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করেছিলেন। কিন্তু, তিনিই এবার নিজেই আমেরিকান রাজনীতিতে প্রবেশ করেছেন। গত শনিবার তিনি “আমেরিকা পার্টি” নামে একটি নতুন রাজনৈতিক দলের ঘোষণা করেছেন। মাস্ক দাবি করেছেন যে, এই দলটি আমেরিকার ৮০ শতাংশ মধ্যবিত্ত ভোটারদের কণ্ঠস্বর হয়ে উঠবে, যাঁরা রিপাবলিকান বা ডেমোক্র্যাট নয়।
নতুন দল গড়লেন ইলন মাস্ক (Elon Musk):
ইলন মাস্কের (Elon Musk) ঘনিষ্ঠদের মতে, তাঁর এই ঘোষণা অত্যন্ত স্বাভাবিক ছিল। কারণ, সম্প্রতি ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন সংসদে “বিগ বিউটিফুল” আইন পাস করেছেন। মাস্ক এই বিলের বিরুদ্ধে ছিলেন। যখন ট্রাম্প এই বিলকে সমর্থন করছিলেন এবং বিরোধীদের কাছে এই বিলের যোগ্যতা উপস্থাপন করেন, তখন মাস্ক বলেছিলেন যে এই বিলটি পাস হলে তিনি আমেরিকার জনগণের জন্য একটি নতুন দল ঘোষণা করবেন। মাস্ক এই বিলটিকে আমেরিকান জনগণের জন্য বিপর্যয় ডেকে আনবে বলেও জানান। মাস্কের মতে, এই বিলটি কেবল ধনীদেরই উপকার করবে, দরিদ্র ও মধ্যবিত্তদের নয়।
ইলন মাস্ক কী ২০২৮ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন: এদিকে, মাস্কের (Elon Musk) দল ঘোষণা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই যে প্রশ্নটি সবথেকে বেশি উঠে আসছে তা হল ইলন মাস্ক কী এবার নিজে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন? এই প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি যে, আমেরিকায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা কারো পক্ষেই সহজ নয়।মার্কিন সংবিধানের ধারা ২, ধারা ১ অনুসারে, একজন ব্যক্তি ৩ টি নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ করলেই মার্কিন রাষ্ট্রপতি হতে পারেন। প্রথম শর্ত হল- তাঁকে জন্মসূত্রে আমেরিকার নাগরিক হতে হবে। দ্বিতীয় শর্ত হল তাঁর বয়স কমপক্ষে ৩৫ বছর হতে হবে এবং তাঁকে কমপক্ষে ১৪ বছর ধরে আমেরিকায় বসবাস করতে হবে।
এই গুরুত্বপূর্ণ শর্তগুলির মধ্যে ইলন মাস্কের (Elon Musk) ক্ষেত্রে একটি শর্ত পূরণ হচ্ছে না। আসলে, মাস্ক জন্মসূত্রে আমেরিকার নাগরিক নন। মাস্কের জন্ম ১৯৭১ সালের ২৮ জুন দক্ষিণ আফ্রিকার প্রিটোরিয়ায়। পরে তিনি মার্কিন নাগরিক হন। কিন্তু যেহেতু তিনি “জন্মসূত্রে মার্কিন নাগরিক” নন, তাই সংবিধান তাঁকে রাষ্ট্রপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার অনুমতি দেয় না।
বিশেষজ্ঞরা কী বলছেন: মাস্ক (Elon Musk) প্রচুর সম্পদের মালিক হলেও এবং প্রযুক্তি ও ব্যবসার ওপর তাঁর দখল থাকলেও মার্কিন সংবিধানের ওই শর্ত আমেরিকার রাষ্ট্রপতি হওয়ার ক্ষেত্রে তাঁর পথকে বাধা দিয়েছে। এমতাবস্থায়, সংবিধান সংশোধন না হলে, ইলন মাস্ক কখনই মার্কিন রাষ্ট্রপতি হতে পারবেন না। এদিকে, এই ধরনের সংশোধনী অত্যন্ত কঠিন। কারণ এর জন্য উভয় কক্ষে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রয়োজন এবং তারপরে ৫০ টি রাজ্যের মধ্যে ৩৮ টিরও অনুমোদন প্রয়োজন।
আরও পড়ুন: ইংল্যান্ডে “অপ্রতিরোধ্য” গিল! ফের সেঞ্চুরি করে গড়লেন ইতিহাস, ভাঙলেন গাভাস্কারের রেকর্ড
মাস্কের উদ্দেশ্য কী: রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ইলন মাস্ক (Elon Musk) এখন “কিংমেকার” থেকে “পাওয়ারব্রোকিং”-এর পর্যায়ে চলে যাচ্ছেন। তিনি ২০২৬ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনে তাঁর প্রার্থী দিতে পারেন। এছাড়াও, তিনি ২০২৮ সালের রাষ্ট্রপতি পদের জন্য একজন আমেরিকান বংশোদ্ভূত নেতাকে প্রার্থী করতে পারেন। এর পাশাপাশি, তিনি নিজেই ওই দলের প্রধান, নীতি পরিচালক বা ফান্ডিংয়ের উৎস হতে পারেন।
ট্রাম্পের সঙ্গে দূরত্ব এবং নতুন রাজনৈতিক লড়াই: প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, ২০২৪ সালে ইলন মাস্ক (Elon Musk) প্রকাশ্যে ট্রাম্পকে সমর্থন করেছিলেন। শুধু তাই নয়, ট্রাম্পের জয় নিশ্চিত করার জন্য মাস্ক যথাসাধ্য চেষ্টাও করেছিলেন। ফান্ডিং থেকে শুরু করে জনসমক্ষে বিবৃতি দেওয়া পর্যন্ত, প্রতিটি পদক্ষেপে মাস্ক ট্রাম্পের পাশে ছিলেন। কিন্তু এখন যেহেতু তিনি নিজের দল গঠন করেছেন, তাই লক্ষণগুলি স্পষ্ট যে মাস্ক এখন ট্রাম্পের “জোন”থেকে বেরিয়ে এসে নিজের রাজনৈতিক ভিত্তি প্রস্তুত করছেন।