বাংলা হান্ট ডেস্কঃ সারা দেশে এখন অনেক বেশি মেডিক্যাল কলেজ তৈরি হয়েছে। আগের থেকে অনেক বেশি এমবিবিএস পড়ার সুযোগও মিলছে। কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার হল, এত সুযোগ থাকা সত্ত্বেও হাজার হাজার আসন খালি থেকে যাচ্ছে। পড়ুয়া নেই! কেন্দ্র সরকারের রিপোর্টেই উঠে এসেছে এই তথ্য। ন্যাশনাল মেডিক্যাল কমিশনের (National Medical Commission) সাম্প্রতিক তথ্য বলছে, ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষেও প্রায় ৩ হাজার এমবিবিএস আসনে কোনও ছাত্র ভর্তি হয়নি। ফলে চিন্তায় পড়েছেন অনেকেই। প্রশ্ন উঠছে, তবে কি শুধু কলেজ বাড়ালেই সমস্যার সমাধান হচ্ছে না?
পরিসংখ্যান বলছে, প্রায় ৩ হাজার আসন ফাঁকা
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জগৎপ্রকাশ নাড্ডা লোকসভায় জানিয়েছেন, সারা দেশে এখন ৭৮০টা মেডিক্যাল কলেজ আছে। এমবিবিএস পড়ার আসন মোট ১ লক্ষ ১৫ হাজার ৯০০টি। গত দশ বছরে কলেজ ও আসন, দুটোই অনেক বেড়েছে। তবুও, ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে প্রায় ২,৮৪৯টা আসন খালি থেকে গেছে। আগের বছরেও (২০২৩-২৪) খালি ছিল ২,৯৫৯টি আসন। তার আগের বছর (২০২২-২৩) ছিল ৪,১৪৬। অর্থাৎ প্রতি বছর হাজার হাজার আসনে কেউ ভর্তি হচ্ছেন না।
রাজ্যভিত্তিক হিসাবেও মেডিক্যাল কলেজ এবং আসনের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে, যথা –
তামিলনাড়ু: ৮,০০০ – ১২,০০০
উত্তরপ্রদেশ: ৭,৪২৮ – ১২,৩২৫ (সর্বোচ্চ আসন)
মহারাষ্ট্র: ৯,০০০ – ১১,৮৪৪
কর্ণাটক: ৯,৩৪৫ – ১২,১৯৪
পশ্চিমবঙ্গ: ৪,০০০ – ৫,৬৯৯
তামিলনাড়ু, উত্তরপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, কর্নাটক, পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যে সবচেয়ে বেশি মেডিক্যাল কলেজ ও ফাঁকা আসন রয়েছে। মোট মেডিক্যাল কলেজের সংখ্যাতেও শীর্ষে উত্তরপ্রদেশ (৮৬টি), তার পরে মহারাষ্ট্র (৮০), তামিলনাড়ু (৭৭) ও কর্ণাটক (৭৩)। কিন্তু এই রাজ্যগুলোতেও অনেক বেসরকারি কলেজের আসন ফাঁকাই পড়ে আছে।
কেন ভর্তি হচ্ছে না? কোথায় সমস্যা? কি বলছে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কমিশনের (National Medical Commission)?
এই প্রশ্নের জবাবে বিশেষজ্ঞদের মত-
- বেসরকারি কলেজে পড়ার খরচ এত বেশি যে অনেকের পক্ষেই সেটা মেটানো সম্ভব নয়।
- অনেক কলেজ শহর বা বড় হাসপাতালের থেকে অনেক দূরে, ফলে ভালভাবে প্র্যাকটিক্যাল শেখার সুযোগ কম।
- কিছু কলেজে স্বীকৃতির ঝামেলা আছে, পড়ুয়ারা সেই ঝুঁকি নিতে চান না।
- সরকারি কলেজে ভর্তি হওয়া বেসরকারি কলেজে তুলনায় অনেকটাই সস্তা, তাই বেসরকারি কলেজের তুলনায় সরকারি কলেজে ভর্তি হওয়ার প্রবণতা ছাত্রদের মধ্যে বেশি।
আরও পড়ুনঃ ইগো নাকি দলীয় ষড়যন্ত্র? কল্যাণের ইস্তফার পর অভিষেকের ফোনে নতুন জল্পনা
উল্লেখ্য, ন্যাশনাল মেডিক্যাল কমিশনের (National Medical Commission) রিপোর্ট প্রকাশ আসার পর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চিকিৎসক তৈরি করার জন্য শুধু কলেজ বানালেই হবে না, সেখানে পড়তেও দিতে হবে সাধারণ ঘরের ছেলেমেয়েদের। তাই দরকার পড়ছে এমন একটা নীতি, যাতে চিকিৎসা পড়াটা সবার নাগালের মধ্যে থাকে। ফি যেন সবাই দিতে পারে, কলেজের মানও যেন ঠিক থাকে। সরকার আর রাজ্য যদি একসঙ্গে এগিয়ে আসে, তবেই এই সমস্যার সমাধান হবে বলে মনে করা হচ্ছে।