বাংলা হান্ট ডেস্কঃ নজিরবিহীন! রাজ্যে মেডিক্যাল কলেজে ভর্তিতে (MBBS Admision Scam) দুর্নীতি ইস্যুতে মামলা দায়ের হয়েছে কলকাতা হাইকোর্টে।অভিযোগ, মেডিক্যালে সংরক্ষিত আসনে অসংরক্ষিত ছাত্র ভর্তি চলেছে। ইতিমধ্যেই এই মামলায় সিবিআই (CBI) তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় (Justice Abhijit Gangopadhyay)। আবার বিচারপতির সেই নির্দেশের কয়েক ঘন্টার মধ্যেই তাতে বিচারপতি সৌমেন সেনের (Justice Soumen Sen) ডিভিশন বেঞ্চ মৌখিক স্থগিতাদেশ দিয়েছে বলে দাবি করেছে রাজ্য। এবার এই মামলা নিয়েই বেনজির সংঘাতে জড়ালেন কলকাতা হাইকোর্টের ২ বিচারপতি।
যে সে সংঘাত নয়, বিচারপতি সৌমেন সেনকে বিচারপতির পদ থেকে সরানোর প্রক্রিয়া শুরু হওয়া উচিত বলে বিস্ফোরক মন্তব্য করে দিলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। এখানেই শেষ নয়, বিচারপতি সেন একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের হয়ে কাজ করছেন বলেও এদিন মন্তব্য করে বসেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়।
এদিন এক ঘটনার কথা উল্লেখ করে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় নিজের নির্দেশনামায় লিখেছেন, বড়দিনের ছুটির আগে শেষ যে দিন আদালতের কাজ হয়, সেদিন বিচারপতি অমৃতা সিনহাকে হাইকোর্টে নিজের চেম্বারে ডেকে পাঠানো হয়। সেখানে বিচারপতি সেন বিচারপতি সিনহাকে কিছুটা রাজনৈতিক নেতার মতো নির্দেশ দিয়ে বলেন, তৃণমূল নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটা রাজনৈতিক ভবিষ্যত রয়েছে। তাই তাকে বিরক্ত করা চলবে না না।
শুধু তাই নয়, বিচারপতি সিনহার বেঞ্চের লাইভ স্ট্রিমিং বন্ধ করার পাশাপাশি তার বেঞ্চে প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত যে ২টি মামলা রয়েছে তা খারিজ করতে হবে বলে নির্দেশ দেওয়া হয়। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় এও জানান যে বিচারপতি সিনহাই তাকে এই বিষয়ে জানিয়েছেন।
বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই চিঠি দেওয়া হয়েছে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতিকে। বিচারপতিও পদক্ষেপ করেছেন। এই বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টকে অবগত করেছেন কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের অভিযোগ, গতকাল তার রায়ের কপি না দেখেই তাতে স্থগিতাদেশ দিয়েছেন বিচারপতি সেন।
আরও পড়ুন: ‘২৩ আসনে একাই লড়ব’, তৃণমূল, AAP-এর পর এবার I.N.D.I.A ‘মহা’ জোটকে ঝটকা উদ্ধ্বব সেনারও
বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রশ্ন, বিচারপতি সেন কী কয়েকজন রাজনৈতিক নেতাকে বাঁচানোর চেষ্টা করে চলেছেন? নয়তো কিভাবে রায়ের কপি না দেখেই তিনি স্থগিতাদেশ জারি করলেন? বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের অভিযোগ, একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের হয়ে কাজ করছেন বিচারপতি সেন। ইমপিচমেন্টের প্রক্রিয়া কেন শুরু হবে না সেই নিয়েও প্রশ্ন তোলেন বিচারপতি।
ওদিকে পাল্টা রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত এর মধ্যে ঢুকে পড়েন। তিনি বলেন, আপনার এজলাসের লাইভ স্ট্রিমিং হয় না কেন? কী লুকানোর চাইছেন? আপনাকে বিজেপি টিকিট দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল, সেটা কি আপনি অস্বীকার করতে পারেন?
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি সংরক্ষিত আসনে অসংরক্ষিত পড়ুয়া ভর্তির অভিযোগ তুলে আদালতের মামলা করেন এক ছাত্রী। রাজ্য এই মামলার তদন্তভার সিআইডিকে দেওয়ার আর্জি জানালেও তাতে সায় দেয়নি আদালত। উল্টে বিচারপতি বলেন, ”শাহজাহানকে আপনাদের পুলিশকে গ্রেফতার করতে পেরেছে? এই রাজ্য আসলে কিছু দুর্নীতিগ্রস্তদের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। এত সব কিছুর পরে পুলিশের কোনও সদর্থক ভূমিকা চোখে পড়ছে না। যে পুলিশ ১৯ দিনে শাহজাহান শেখকে ধরতে পারে না তার ওপর কী করে ভরসা করব?”
এরপরই এই মামলার তদন্তভার সিবিআই এর ওপর তুলে দেন বিচারপতি। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশ ছিল, বেলা আড়াইটের মধ্যে মামলা সংক্রান্ত সমস্ত নথি সিবিআইকে হস্তান্তর করতে হবে। শুধু তাই নয়, বিচারপতি আরও বলেন, ‘আমি জানি, এই নির্দেশও চ্যালেঞ্জ হবে। সুপ্রিম কোর্টে আবার যেতে পারে রাজ্য। কিন্তু আমি জানতে চাই আজ পর্যন্ত তদন্ত ঠেকাতে মোট কত টাকা খরচ করেছে রাজ্য সরকার?’
ওদিকে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের একক বেঞ্চের রায়ের বিরুদ্ধে বিচারপতি সৌমেন সেনের ডিভিশন বেঞ্চে যান রাজ্যের আইনজীবীরা। মামলার রায়ের কপি হাতে না পাওয়ার আগেই তদন্ত সংক্রান্ত নথি সিবিআইকে হস্তান্তর করতে বলেছে বলে জানান রাজ্যের আইনজীবীরা।এরপর মৌখিক ভাবে সিঙ্গল বেঞ্চের রায়ে স্থগিতাদেশ দেয় বিচারপতি সৌমেন সেনের ডিভিশন বেঞ্চ।
বুধবারই এজলাস বন্ধ হওয়ার আগে ফের একবার এই মামলার শুনানি করেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। আদালতের নির্দেশ মত উপস্থিত ছিলেন সিবিআইয়ের আধিকারিকও। সেখানেই রাজ্যের আইনজীবী জানান, এই মামলায় মৌখিক স্থগিতাদেশ দিয়েছে বিচারপতি সৌমেন সেনের ডিভিশন বেঞ্চ। পালটা, স্থগিতাদেশের নথি দেখতে চান বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। শুনানির লাইভ স্ট্রিমিং দেখতে চাইলেও সেসব কোনও কিছুই দেখাতে পারেননি রাজ্যের আইনজীবী। এরপর FIR রুজু করে সিবিআইকে তদন্ত শুরু করার নির্দেশ দেন বিচারপতি।