বাংলা হান্ট ডেস্ক: বধূহত্যা মামলায় নিম্ন আদালতে স্বামীকে ফাঁসি ও শাশুড়িকে যাবজ্জীবন জেলের সাজা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বুধবার কলকাতা হাইকোর্টে (Calcutta High Court) দোষীদের আবেদনের ভিত্তিতে সেই সাজার পৃথক রায় দিলেন কলকাতা হাইকোর্ট। সেই রায়ে মৃত্যু দণ্ডের পরিবর্তে স্বামীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিল কোর্ট। পাশাপাশি শাশুড়িকে সাক্ষ্য প্রমাণের অভাবে বেকাসুর খালাস করলেন বিচারপতি।
বধূহত্যা মামলায় স্বামীর ফাঁসি রদ করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিল হাইকোর্ট, শাশুড়ি বেকসুর (Calcutta High Court)
জানা যায়, এই মামলাটি দুটি আপিল একই রায়ের বিরুদ্ধে করা হয়েছিল। আপিলের মূল্য রায়টি ২০১৭ সালের ২৫ এপ্রিল ও ২৯ এপ্রিল বারাসাতের ফাস্ট ট্র্যাক কোড নম্বর ৫-এর অতিরিক্ত দায়রা বিচারক ঘোষণা করেছিলেন। রায়ের ভিত্তিতে অভিযুক্তদের ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২ ও ৪৯৮ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল। পাশাপাশি অভিযুক্ত স্বামীকে ৩০২ মৃত্যুদণ্ড ও তার মা’কে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এরপর এই দুই জনই ৪৯৮ এ ধারার অধীনে তিন বছর সশ্রম কারাদণ্ডের সাজাও দেওয়া হয়েছিল (Calcutta High Court)।
সেখানে কী অভিযোগ করা হয়েছে?
লুসিয়া বিবি নামের এক মহিলা অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। যিনি অভিযুক্ত জাহাঙ্গীর প্রথম স্ত্রী। তার দাবি, বিয়ের পর থেকেই জাহাঙ্গীর এবং তার মা রোশানারা তাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করতে থাকেন। যৌতুক না দেওয়ার ফলে তাকে বিষ খাইয়ে মেরে ফেলারও চেষ্টা করা হয়। এই সমস্ত নির্যাতনের কারণে, তিনি সেখান থেকে বেরিয়ে যান। যদিও পরে জাহাঙ্গীর দ্বিতীয় বার বিয়ে করেন। অভিযোগের ভিত্তিতে, বিয়ের ১৯ দিনের মধ্যেই জাহাঙ্গীর এবং রোশানারা মিলে জাহাঙ্গীর দ্বিতীয় স্ত্রীকে ও প্রথম ছেলে ইমরানকে হত্যা করেন। এই অভিযোগের ভিত্তিতে ২০০৬ সালে একটি মামলার দায়ের করেন জাহাঙ্গীর প্রথম স্ত্রী লুসিয়া বিবি।
আরও পড়ুন: এ বার ডিম, সবজি টুকুও পাতে পড়বে না অঙ্গনওয়াড়ির খাবারে? প্রতিবাদে সরব কর্মীরা
লুসিয়া বিবি তার অভিযোগের জানান, তার স্বামী তাকে নির্যাতন করতেন। এই নির্যাতনের ফলেই তিনি সন্তানদের নিয়ে তার বাবার বাড়িতে চলে যান। পরে তার স্বামী তাদের এক ছেলে ইমরানকে নিজের বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিলেন। পরে তার স্বামী আবার দ্বিতীয় বিয়ে করেন। অভিযোগে লুসিয়া বিবি জানান, এরপরই জাহাঙ্গীর তার দ্বিতীয় স্ত্রী সঞ্জুরাকে পুড়িয়ে মেরে ফেলেন। এমনকি জাহাঙ্গীর দ্বিতীয় স্ত্রীর বাবা আব্দুল সাত্তার জানান, বিয়ের পাঁচ সাতদিন পরেই তার মেয়ে ফোন করে এই নির্যাতনের বিষয়ে জানান। মেয়ের ফোন পেয়ে সেখানে গিয়ে আব্দুল সাত্তার দেখেন তার মেয়েকে মারধর করা হয় এবং খেতে না দেওয়া হয় না। আব্দুল সাত্তারের দাবি, ঘটনার দিন তিনি ঘটনাস্থলে পৌঁছে তার মেয়ে ও জাহাঙ্গীর প্রথম বিবাহের সন্তান ইমরানের মৃতদেহ দেখতে পান।
আদালতের পর্যবেক্ষণ ও রায়:
আদালত (Court) সমস্ত তথ্য সামনে রেখে এই সিদ্ধান্ত উপনীত হয় যে, মামলা একটি পরিস্থিতি ও পারিপার্শ্বিক প্রমাণভিত্তির ওপরে তৈরি। পাশাপাশি সমস্ত প্রমাণগুলি অভিযুক্ত জাহাঙ্গীর অপরাধের দিকেই ইঙ্গিত করছে। এমনকি তদন্তকারী অফিসাররা ঘটনাস্থল থেকে কেরোসিনের জার ও একটি লণ্ঠন বাজেয়াপ্ত করেন। এছাড়াও জাহাঙ্গীর পোশাকের থেকেও কেরোসিনের গন্ধ পাওয়া যায়।
সমস্ত ঘটনার পরিপ্রেক্ষি বিচার করে, হাই কোর্টের (Calcutta High Court) তরফ থেকে জানানো হয় অভিযুক্ত যেহেতু ঘটনা সময় একমাত্র ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন মৃতদেহদের সঙ্গে। তিনি আগুন নেভানো বা আহত হতে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কোন চেষ্টা করেননি। টাইটানি নিজেও জখম হওয়ার পর একটি পুকুরের ডুব দিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। তবে জাহাঙ্গীর অপরাধ ‘বিরলতমোর মধ্যে বিরলতম’ আওতায় পড়ে না বলে তার ফাঁসির সাজা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে রূপান্তরিত করা হয়। অপরদিকে রোশানরা অর্থাৎ জাহাঙ্গীর মা ঘটনার সময় উপস্থিত না থাকায় তার বিরুদ্ধে কোন ষড়যন্ত্র বা প্রয়োজন প্রমাণ নেই। তাই তাকে ৩০২ ও ৪৯৮ এ ধারার অভিযোগ থেকে বেকাসুর খালাস দেওয়া হয়।