বাংলা হান্ট ডেস্ক: ইতিমধ্যেই গত বৃহস্পতিবার বিধানসভায় পেশ করা হয়েছে রাজ্য বাজেট (West Bengal-Budget)। পাশাপাশি, রাজ্য বাজেটে একাধিক বড় ঘোষণা করা হয়েছে। যেখানে, DA বৃদ্ধি-সহ লক্ষীর ভান্ডারে বৃদ্ধি, তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি, সিভিক ভলান্টিয়ারদের ভাতার পরিমাণ বৃদ্ধির মতো একাধিক বড় ঘোষণা করা করেছেন রাজ্যের অর্থ দফতরের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। এমতাবস্থায় চলুন জেনে নিই এই প্রসঙ্গে বিস্তারিত তথ্য।
করা হয়েছে DA এবং ভাতা বৃদ্ধি: প্রথমেই জানিয়ে রাখি যে, রাজ্য বাজেটে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের আরও ৪ শতাংশ DA বৃদ্ধির ঘোষণা করা হয়েছে। যার ফলে এবার ষষ্ঠ বেতন কমিশনের আওতায় ১৪ শতাংশ হারে DA পাবেন রাজ্য সরকারি কর্মচারীরা। যেটি আগামী মে মাস থেকেই কার্যকর হবে। এর পাশাপাশি সিভিক ভলান্টিয়ার থেকে শুরু করে ভিলেজ পুলিশ ও গ্রিন পুলিশের মাসিক পারিশ্রমিক ১,০০০ টাকা বাড়ানো হচ্ছে। এছাড়াও, আরও একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, রাজ্য পুলিশে চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রেও তাঁদের কোটা বাড়ানো হয়েছে।
এমতাবস্থায়, ওই কোটা ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২০ শতাংশ করা হয়েছে। এর পাশাপাশি অবসরের পরে যে এককালীন সুবিধা পাওয়া যায়, সেটির পরিমাণ বাড়িয়ে ৫ লক্ষ টাকা করা হয়েছে। এর পাশাপাশি চুক্তিভিত্তিক গ্রুপ C এবং গ্রুপ D কর্মচারীদের পারিশ্রমিক বৃদ্ধি করা হয়েছে। এক্ষেত্রে মাসিক পারিশ্রমিক বৃদ্ধির পরিমাণ হল যথাক্রমে ৩,৫০০ টাকা এবং ৩,০০০ টাকা। পাশাপাশি, করোনার মতো ভয়াবহ মহামারী চলাকালীন যে তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার কর্মচারীদের রাজ্যের আওতায় আনা হয়েছে তাঁদেরও ক্যাটেগরি অনুযায়ী মাসিক পারিশ্রমিক বাড়ানো হচ্ছে।
লক্ষ্মীর ভান্ডারে দ্বিগুণ অর্থ: রাজ্য বাজেটে রাজ্য সরকারের অন্যতম জনপ্রিয় প্রকল্প লক্ষ্মীর ভান্ডারের প্রসঙ্গ বড় ঘোষণা করা হয়েছে। নতুন ঘোষণা অনুযায়ী, এই প্রকল্পে এবার জেনারেল ক্যাটেগরির মহিলারা মাসে ১,০০০ টাকা করে পাবেন। আপাতত তাঁরা পাচ্ছেন ৫০০ টাকা। পাশাপাশি, তফসিলি জাতি ও উপজাতিভুক্ত মহিলারা পাবেন মাসিক ১,২০০ টাকা। এখন তাঁরা পান ১,০০০ টাকা করে। এমতাবস্থায়, আগামী এপ্রিল থেকে এই নয়া নিয়ম চালু হবে। পাশাপাশি, তাঁদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে মে মাস থেকে বর্ধিত ভাতা ঢুকবে। উল্লেখ্য যে, এবারের রাজ্য বাজেটে জানানো হয়েছে যে মোটর ভেহিকেল অ্যাক্টসের আওতায় নথিভুক্ত গাড়ির ক্ষেত্রে “লাইফটাইম ট্যাক্স”-এর কর কমানো হচ্ছে। মূলত, ছোট যাত্রীবাহী গাড়ির ক্ষেত্রে এই করের হার কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
পড়ুয়া এবং মৎস্যজীবীদের জন্য বড় ঘোষণা: রাজ্য বাজেটে বলা হয়েছে, এবার তরুণের স্বপ্ন প্রকল্পের আওতায় একাদশ শ্রেণিতেই ১০,০০০ টাকা দেবে রাজ্য সরকার। যেটা আগে দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের দেওয়া হত। অর্থাৎ, মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাশ করে একাদশ শ্রেণিতে ভরতি হলেই মিলবে ১০,০০০ টাকা। এছাড়াও, পূর্ব মেদিনীপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং উত্তর ২৪ পরগনার মৎস্যজীবীদের বছরের দু’মাস আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হবে বলেও জানা গিয়েছে। উল্লেখ্য যে, এপ্রিলের মাঝামাঝি থেকে জুনের মাঝামাঝি পর্যন্ত মাছ ধরার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা থাকে মৎস্যজীবীদের ওপর। সেইসময় মাসিক ৫,০০০ টাকা প্রদান করা হবে বলে ঘোষণা করা হয়েছে। এই প্রকল্পের নাম হল সমুদ্রসাথী। যার মাধ্যমে রাজ্যের ২ লক্ষ মৎস্যজীবী লাভবান হবেন।
আরও পড়ুন: “মলদ্বীপ কোনো দেশের সঙ্গে সংঘাত চায় না”, অবশেষে সুরবদল চিনের “গোলাম” মুইজ্জুর, ভারতকে দিলেন বার্তা
কর্মশ্রী প্রকল্পের সূচনা: কেন্দ্রীয় সরকারের ১০০ দিনের প্রকল্প প্রকল্পের ধাঁচে এবার বাংলায় “কর্মশ্রী” প্রকল্প চালু করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে জবকার্ড হোল্ডারদের জন্য বছরে কমপক্ষে ৫০ দিন কাজের বন্দোবস্ত করা হবে। এই প্রকল্পের সূচনাও হবে আগামী মে মাস থেকে। আরও জানিয়ে রাখি, যে পরিযায়ী শ্রমিকরা রাজ্যের “শ্রমিক পোর্টাল”-এ নথিভুক্ত আছেন, তাঁরা স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের আওতায় আসছেন। এর পাশাপাশি রাজ্য সরকারের বিভিন্ন স্কুল ও মাদ্রাসায় এবং ভোকেশনাল ট্রেনিং সেন্টার থেকে পাশ পড়ুয়া, এবং আইটিআই ও পলিটেকনিক কলেজ থেকে পাশ করা পড়ুয়ারা সহ যুবশ্রী প্রকল্পে নথিভুক্তরা বিভিন্ন শিল্প সংস্থায় শিক্ষানবীশ হিসেবে কাজের সুযোগ পাবেন।
আরও পড়ুন: যাত্রীরা হন সতর্ক! ট্রেনে মোবাইল চার্জ দেওয়ার আগে অবশ্যই জানুন এই নিয়ম, নাহলেই সফরে বাড়বে বিপদ
চারটি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র সহ একাধিক প্রকল্প: রাজ্যে মোট চারটি অত্যাধুনিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র বা সুপার ক্রিটিক্যাল থার্মাল পাওয়ার ইউনিট তৈরি করা হবে। এগুলিকে পিপিপি মডেলে তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যার জন্য খরচ হবে ২৩,৩৬০ কোটি টাকা। এর পাশাপাশি তৈরি হবে নয়া সেতু এবং ফ্লাইওভার। জানা গিয়েছে যে, দক্ষিণ ২৪ পরগনার মুড়িগঙ্গার নদীর ওপর আট নম্বর লট থেকে একদম সাগরদ্বীপের কচুবেড়িয়ার মধ্যে ৩.১ কিলোমিটারের “গঙ্গাসাগর সেতু” তৈরি করা হবে। এদিকে, বাইপাসের মেট্রোপলিটন থেকে মহিষবাথান পর্যন্ত চার লেনের ফ্লাইওভার তৈরি করার পরিকল্পনাও গ্রহণ করা হয়েছে। এর পাশাপাশি বর্ধমান-আরামবাগ রাজ্যসড়কে ৬৪০ মিটারের সেতু তৈরি করা হবে। যেটিতে চারটি লেন থাকবে।