বাংলাহান্ট ডেস্ক:- ভারতের চিন সফরের পরেই চিনের সঙ্গে বৈঠকে মরিয়া পাকিস্তান (Pakistan)। জাপান ও চিন সফর সেরে দেশে ফিরেই আন্তর্জাতিক কূটনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (Narendra Modi)। সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন (SCO) সম্মেলনে অংশ নিয়ে তিনি সন্ত্রাসবাদ বিরোধী লড়াইয়ে কড়া বার্তা দেন। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের (Shehbaz Sharif) উপস্থিতিতেই প্রধানমন্ত্রী মোদী স্পষ্ট ভাষায় বলেন, কোনও দেশ যদি খোলাখুলি সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন করে, তবে তা মেনে নেওয়া যায় না। তিনি সন্ত্রাসবাদকে মানবতার জন্য এক বিরাট চ্যালেঞ্জ বলে উল্লেখ করেন। পহেলগাঁও হামলার প্রসঙ্গ টেনে তিনি জানান, এই হামলা শুধু ভারতের আত্মায় আঘাত নয়, বরং মানবতায় বিশ্বাসী প্রতিটি দেশের প্রতি খোলাখুলি চ্যালেঞ্জ। তাঁর বার্তা ছিল পরিষ্কার—সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কোনও দ্বিচারিতা বরদাস্ত করা হবে না। মোদীর এই বক্তব্য ঘিরে আন্তর্জাতিক মহলে আলোড়ন তৈরি হয়, কারণ পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ সেই সময় সভায় উপস্থিত ছিলেন।
চিনে বৈঠক পাকিস্তানের (Pakistan)
এই পরিস্থিতির মধ্যেই তাৎপর্যপূর্ণ বৈঠকে বসেন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনির (Asim Munir) ও চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং (Xi Jinping)। এসসিও সম্মেলনের ফাঁকে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন পাক প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফও। বৈঠকে কৌশলগত সহযোগিতার ভিত্তিতে গড়ে ওঠা অংশীদারিত্ব আরও দৃঢ় করার অঙ্গীকার করেন দুই দেশ। পাকিস্তানের পক্ষ থেকে শেহবাজ শরিফ স্পষ্ট জানান, বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) প্রকল্পে ইসলামাবাদ আরও ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে আগ্রহী। বিশেষত, সিপিইসি বা চীন-পাকিস্তান ইকোনমিক করিডরের পরবর্তী ধাপে দুই দেশের সহযোগিতা আরও বাড়াতে চান তিনি। এছাড়া শরিফ জানান, পাকিস্তান শি জিনপিংয়ের বৈশ্বিক উন্নয়ন, নিরাপত্তা ও সৌরশক্তি–সংক্রান্ত উদ্যোগগুলিকে পূর্ণ সমর্থন জানায়। অন্যদিকে, চিনা প্রেসিডেন্ট আশা প্রকাশ করেন যে পাকিস্তান চীনা নাগরিক ও প্রকল্পগুলির নিরাপত্তায় কার্যকর পদক্ষেপ নেবে।
আরও পড়ুন:-গাড়ি দেখার ভিড় থাকলেও বিক্রিতে ভাটা! ভারতের বাজারে দেড় মাসে বুকিং হল মাত্র এতগুলি টেসলা
এই বৈঠককে ঘিরে বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে পাক সেনাপ্রধান আসিম মুনিরের উপস্থিতি। সম্প্রতি তাঁকে ফিল্ড মার্শাল পদে উন্নীত করা হয়েছে, যা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সর্বোচ্চ মর্যাদাপূর্ণ পদ। ভারতীয় সেনার অপারেশন সিঁদুর অভিযানের পর পাকিস্তান যখন চাপে পড়ে, তখন দেশের জনগণের কাছে পরিস্থিতি আড়াল করতে মুনিরকে পদোন্নতি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। ফিল্ড মার্শাল হওয়ার পর এটিই তাঁর দ্বিতীয় চিন সফর। জুলাই মাসে প্রথমবার তিনি চিন সফরে গিয়েছিলেন, তখন চিনা উপ-রাষ্ট্রপতি হান ঝেং-এর সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন, যদিও প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে তাঁর দেখা হয়নি। এবারের সফরে সরাসরি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠক রাজনৈতিক মহলে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
সূত্রের খবর, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের আনুষ্ঠানিক আত্মসমর্পণের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে চিনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে পাকিস্তানের প্রতিনিধিত্ব করবেন আসিম মুনির। এর আগে তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গেও হোয়াইট হাউসে বৈঠক করেছেন। সেখানে মুনিরের জন্য মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন করা হয়েছিল, যা ভারত এবং চিন দুই দেশের কাছেই নজরকাড়া ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
আরও পড়ুন:- বিমানবন্দরের পর এবার রেলেও হুইল চেয়ারের পরিষেবা, হাওড়া স্টেশনেও রয়েছে! কীভাবে বুক করবেন?
তিয়ানজিনে অনুষ্ঠিত এসসিও শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে চিনা প্রেসিডেন্ট একাধিক রাষ্ট্রনেতার সঙ্গে বৈঠক করেন, যার মধ্যে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনও ছিলেন। কিন্তু পাকিস্তানের সঙ্গে শি জিনপিংয়ের বৈঠক বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ মোদীর সন্ত্রাসবিরোধী কড়া বার্তার ঠিক পরেই এই দ্বিপাক্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতিতে এই কূটনৈতিক পালাবদল আগামী দিনে নতুন সমীকরণের জন্ম দিতে পারে।