“পরপুরুষের ছোঁয়া হারাম”, ধ্বংসস্তূপে আটকে পড়া মহিলাদের বাঁচাচ্ছে না উদ্ধারকারীরা, একী কাণ্ড আফগানিস্তানে?

Published on:

Published on:

বাংলাহান্ট ডেস্ক: আফগানিস্তানের (Afghanistan) মাটিতে আবারও মানবতার উপর বিজয়ী হয়ে উঠছে ধর্মান্ধতা। ভয়াবহ ভূমিকম্পে বিপর্যস্ত দেশটিতে যখন হাজারো মানুষ ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে রয়েছে, তখনও তালিবানের কঠোর শরিয়তি আইন থেকে মুক্তি মিলছে না বিশেষত মহিলাদের। ভূমিকম্পের আঘাতে মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচার সুযোগ থাকলেও, শুধু ধর্মীয় নিয়মের অজুহাতে সেই সুযোগ কেড়ে নেওয়া হচ্ছে তাঁদের কাছ থেকে।

ধর্মান্ধতার স্বীকার আফগানিস্তান (Afghanistan)

সম্প্রতি মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস-এর এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এই মর্মান্তিক চিত্র। জানা যাচ্ছে, শরিয়ত আইনের কারণে পুরুষ উদ্ধারকর্মীরা মহিলাদের স্পর্শ করতে চাইছেন না। ফলে ভূমিকম্পে চাপা পড়া মহিলাদের অনেককে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। যাঁরা গুরুতর আহত অবস্থায় ছিলেন, তাঁদেরও ফেলে রাখা হচ্ছে চিকিৎসা ছাড়াই। কপালজোরে রক্ষা পাওয়া কুনার প্রদেশের এক মহিলা জানান, “উদ্ধারকারীরা আমাদের শুধু এক জায়গায় জড়ো করে রেখেছে। সাহায্যের কোনও ব্যবস্থা করা হয়নি।” (Afghanistan)

আরও পড়ুন:-“ভারত-রাশিয়াকে অন্ধকার চিনের কাছে হারিয়েছি” অবশেষে আত্মোপলব্ধি ট্রাম্পের? পোস্ট করলেন ছবি

স্বেচ্ছাসেবক তাহজিবুল্লা মাহজিব বলেন, “এখানে নারীরা কার্যত অস্পৃশ্য। তাঁদের বাঁচানোর চেষ্টা করা হচ্ছে না। আহতরা পড়ে রয়েছেন অচিকিৎসায়। উদ্ধারকারীরা কেবল পুরুষ ও শিশুদের বাঁচাতে মন দিচ্ছেন। মহিলাদের টেনে হিঁচড়ে ধ্বংসস্তূপ থেকে বের করা হচ্ছে যাতে শরীরে কোনও স্পর্শ না লাগে।” এমনকি যাঁরা মারা গিয়েছেন, তাঁদের দেহও কাপড়ে বেঁধে টেনে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। (Afghanistan)

আফগানিস্তান (Afghanistan) সরকারের মতে, এই ভূমিকম্পে এখনও পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে অন্তত ২২০০ জনের। আহত হয়েছেন ৩৬০০ জনের বেশি। বহু মানুষ এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে রয়েছেন, যাদের মধ্যে মহিলার সংখ্যাই বেশি। তবে শরিয়তের বিধিনিষেধের কারণে তাঁদের উদ্ধার কার্যত অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে।

Rescuers are not saving women trapped in the rubble in Afghanistan

আরও পড়ুন:- প্রথমে GST থেকে স্বস্তি! এবার মুদ্রাস্ফীতি থেকেও মিলবে মুক্তি, SBI-এর রিপোর্টে সামনে এল বড় তথ্য

উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, এটি নতুন কিছু নয়। আফগানিস্তানে (Afghanistan) তালিবানের প্রথম দফার শাসনেই মহিলারা মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছিলেন। দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় ফেরার পর তারা যদিও মহিলাদের অধিকার রক্ষার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, বাস্তবে তার কোনো প্রতিফলন দেখা যায়নি। ষষ্ঠ শ্রেণির পরে মেয়েদের স্কুলে যাওয়া বন্ধ, পুরুষ অভিভাবক ছাড়া দূরে যাওয়ার নিষেধাজ্ঞা, চাকরি ক্ষেত্র থেকে মহিলাদের ছাঁটাই—এসব কড়া নিয়মেই আবদ্ধ আজকের আফগান সমাজ।

ভয়াবহ ভূমিকম্পে বিপর্যস্ত দেশের এই পরিস্থিতি আবারও প্রশ্ন তুলছে—মানবতার চেয়ে কি তবে ধর্মই বড়? যদি ধর্মীয় অনুশাসনের কারণে বাঁচানো যায় এমন মানুষকে বাঁচানো না হয়, তবে তা যে এক ভয়ঙ্কর মানবিক বিপর্যয়, সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। আফগানিস্তানের (Afghanistan) মহিলাদের জন্য এই প্রাকৃতিক দুর্যোগ তাই আরও মারাত্মক আকার নিয়েছে, যেখানে মৃত্যু নয়, বরং ধর্মান্ধতার শিকার হয়ে ধীরে ধীরে নিঃশেষ হচ্ছে তাঁদের জীবন।