বাংলাহান্ট ডেস্ক: নেপালের (Nepal) রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি করেছে তরুণ প্রজন্মের প্রতিবাদ আন্দোলন। ‘জেন জ়ি’ (Gen-Z) প্রজন্মের বিদ্রোহের কাছে শেষ পর্যন্ত নতিস্বীকার করল নেপাল সরকার। সমাজমাধ্যমের উপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হল প্রশাসন। গত সপ্তাহে হঠাৎ করেই নেপাল সরকার ২৬টি জনপ্রিয় সমাজমাধ্যম প্ল্যাটফর্মের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। সরকারের দাবি ছিল, এসব প্ল্যাটফর্মে এমন সব মন্তব্য ও পোস্ট ছড়িয়ে পড়ছে, যা দেশের জাতীয় সার্বভৌমত্বকে অসম্মান করছে এবং জনমতকে উসকে দিচ্ছে। কিন্তু সেই সিদ্ধান্তের জেরে প্রবল ক্ষোভে ফেটে পড়ে ছাত্র ও যুব সমাজ।
উত্তপ্ত নেপাল (Nepal)
সোমবার সকাল থেকেই নেপালের কাঠমান্ডুসহ বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে দেশ। সড়ক অবরোধ, টায়ার জ্বালিয়ে পথ আটকানো থেকে শুরু করে প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলির (KP Sharma Oli) পদত্যাগের দাবিতে স্লোগান ওঠে। বিক্ষোভ ক্রমশ হিংসাত্মক রূপ নেয়। প্রতিবাদকারীরা এমনকি প্রধানমন্ত্রীর পৈতৃক বাড়ি লক্ষ্য করে ইটবৃষ্টি চালায়। বিরোধী দল রাষ্ট্রীয় স্বতন্ত্র পার্টি ওলির পদত্যাগের দাবিতে সরব হয়। চাপে পড়ে নিজের পদ থেকে ইস্তফা দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রমেশ লেখক। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রশাসন কার্ফু জারি করে। কিন্তু তা সত্ত্বেও বিক্ষোভ থামেনি। পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ১৯ তরুণ। আহত হয়েছেন আড়াইশোরও বেশি মানুষ।
আরও পড়ুন:- পুজোর আগেই ৫% DA বাড়ছে বাংলার সরকারি কর্মীদের? কী আপডেট সামনে আসছে, জল্পনা তুঙ্গে
পরিস্থিতি উত্তপ্ত হতে থাকলে সোমবার রাতে মন্ত্রিসভার জরুরি বৈঠক ডাকা হয়। বৈঠক শেষে সরকার সমাজমাধ্যমের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয়। নেপালের (Nepal) যোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী পৃথ্বী সুব্বা গুরুং জানান, সরকারের নেওয়া আগের সিদ্ধান্ত ভুল ছিল না। তবে যেহেতু বিক্ষোভের মূল কারণ সমাজমাধ্যম নিষিদ্ধ করা, তাই তা প্রত্যাহার করা হচ্ছে। একইসঙ্গে তিনি ছাত্র ও তরুণদের প্রতি আবেদন জানান, আন্দোলন প্রত্যাহার করে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ফিরিয়ে আনার জন্য।
সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে, মন্ত্রিসভার বৈঠকে দাবি তোলা হয়েছে যে, ‘এক্স’-সহ একাধিক সমাজমাধ্যম প্ল্যাটফর্মে এমন সব মন্তব্য প্রকাশিত হচ্ছিল যা নেপালের (Nepal) জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও সংবিধানকে অপমান করেছিল। সরকারের মতে, এই ধরনের মন্তব্য দেশবিরোধী শক্তিকে উসকে দিতে পারে। সেই কারণেই নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল। তবে টানা কয়েকদিনের সহিংস বিদ্রোহ এবং ক্রমবর্ধমান জনঅসন্তোষের মুখে প্রশাসন পিছু হটতে বাধ্য হয়েছে।
আরও পড়ুন:- প্রতিরোধ নয়, ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করবে নতুন ভ্যাকসিন, দাবি ডা. দীপ্তেন্দ্র সরকারের
অন্যদিকে, বিক্ষোভকারীরা এখনও নেপালের (Nepal) প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলির পদত্যাগের দাবিতে অনড়। বিরোধী দলও তাদের দাবিকে সমর্থন করছে। আন্দোলনে নিহত তরুণদের পরিবার ক্ষোভ প্রকাশ করে দোষীদের কঠোর শাস্তির দাবি তুলেছে। সরকার ইতিমধ্যেই ঘোষণা করেছে, আগামী ১৫ দিনের মধ্যে সংঘর্ষ ও হত্যাকাণ্ডের বিস্তারিত তদন্ত রিপোর্ট জমা দিতে হবে। সেই রিপোর্টের ভিত্তিতে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
নেপালের (Nepal) এই সংকট শুধু সরকারের সিদ্ধান্তের ওপরই প্রশ্ন তুলছে না, বরং তরুণ প্রজন্মের অদম্য শক্তি ও প্রতিবাদের ক্ষমতাকেও সামনে নিয়ে আসছে। সামাজিক মাধ্যম যে আজকের যুগে শুধুই যোগাযোগের মাধ্যম নয়, বরং রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিবর্তনের অন্যতম হাতিয়ার—নেপালের ঘটনাবলি তা আবারও প্রমাণ করল।