বাংলাহান্ট ডেস্ক: একদিকে ভারতের সঙ্গে দূরত্ব বাড়িয়ে অন্যদিকে পাকিস্তানের (Pakistan) সঙ্গে বন্ধুত্বের হাত বাড়াচ্ছে আমেরিকা (America)। পাকিস্তানের মাটিতে লুকিয়ে থাকা খনিজ সম্পদকে ঘিরে নতুন করে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। এবার সেই খনিজ সম্পদকে কেন্দ্র করে বড় পদক্ষেপ নিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। আমেরিকার মিসৌরি ভিত্তিক মেটাল কোম্পানি ইউএস স্ট্র্যাটেজিক মেটালস (US Strategic Metals – USSM) পাকিস্তানের ফ্রন্টিয়ার ওয়ার্কস অর্গানাইজেশনের (FWO) সঙ্গে ৫০ কোটি মার্কিন ডলারের (প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা) এক বিশাল চুক্তি করেছে।
পাকিস্তানের অমূল্য খাজানা খুঁজবে আমেরিকা (Pakistan)
উল্লেখ্য, পাকিস্তান (Pakistan) সেনার অধীনস্থ সবচেয়ে বড় খনিজ খনন সংস্থা হল FWO। চুক্তি অনুযায়ী, দুই সংস্থা মিলে পাকিস্তানে একটি আধুনিক পলিমেটালিক রিফাইনারি তৈরি করবে এবং নতুন খনিজ খনন প্রকল্প হাতে নেবে। শুধু খনিজ উত্তোলন নয়, বরং সেগুলোকে রিফাইন করে আন্তর্জাতিক বাজারে বিক্রির পরিকল্পনাও রয়েছে। এর ফলে পাকিস্তানকে ‘বিশ্ব প্রযুক্তি সরবরাহ চেইনে’ যুক্ত করার লক্ষ্য নিয়েছে আমেরিকা।
আরও পড়ুন:- নেপালে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ! আটকে থাকা ভারতীয়দের ফেরাতে উদ্যোগী কেন্দ্র, পাঠানো হচ্ছে বিশেষ বিমান
পাকিস্তানের (Pakistan) মাটিতে সোনা, তামা, টাংস্টেন, অ্যান্টিমনি এবং বিশেষভাবে Rare Earth Elements রয়েছে বলে দাবি। এগুলি আধুনিক প্রযুক্তির জন্য অপরিহার্য—ইলেকট্রিক গাড়ি, মোবাইল ফোন, স্যাটেলাইট এবং নবায়নযোগ্য শক্তি প্রযুক্তি তৈরিতে এই খনিজগুলির বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব খনিজ সম্পদ নিয়ন্ত্রণ করা মানেই ভবিষ্যতের প্রযুক্তি বাজারে প্রভাব বিস্তার করা।
পাকিস্তানের (Pakistan) প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ইতিমধ্যেই মার্কিন সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তিনি আশা প্রকাশ করেছেন যে, এই চুক্তির ফলে দীর্ঘদিন ধরে চলা পাকিস্তানের আর্থিক সঙ্কট থেকে বেরোনোর সুযোগ তৈরি হবে। দেশ যে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক ঋণের বোঝায় জর্জরিত, তা এই খনিজ ব্যবসার মাধ্যমে অনেকটা কমানো সম্ভব হতে পারে।
পাকিস্তানের (Pakistan) সেনাপ্রধান আসিম মুনির এই খনিজ সম্পদকে আখ্যা দিয়েছেন ‘‘দুর্লভ মাটির খাজানা’’ হিসেবে। তাঁর মতে, এই প্রকল্প পাকিস্তানে শুধু শিল্প নয়, সার্বিক সমৃদ্ধি নিয়ে আসবে। তিনি আরও জানান, শুধু খনিজ উত্তোলন নয়, বরং খনিজকে প্রক্রিয়াজাত করে মূল্যবান পণ্যে রূপান্তর করার দিকেও জোর দেওয়া হবে। এই চুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছে ইসলামাবাদে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাসও। দূতাবাসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, USSM-এর এই বিনিয়োগ পাকিস্তান-আমেরিকা সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করবে। সামাজিক মাধ্যমে দূতাবাস লিখেছে—“USSM-এর এই উদ্যোগ দুই দেশের মধ্যে সম্ভাবনার নতুন দ্বার খুলে দিল।”
আরও পড়ুন:-বন্ধুত্বের বার্তা দিয়েও ভোলবদল ট্রাম্পের! দিলেন ভারতের ওপর ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপের পরামর্শ
তবে বিশেষজ্ঞদের একাংশ বলছেন, বিষয়টি ঝুঁকিপূর্ণও বটে। কারণ পাকিস্তানের (Pakistan) অধিকাংশ খনিজ সম্পদ অবস্থিত বালুচিস্তানে, যা দীর্ঘদিন ধরেই অশান্ত এলাকা হিসেবে পরিচিত। সেখানকার বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন এবং সহিংসতা প্রায়শই বড় ধরনের সঙ্কট তৈরি করে। কয়েকদিন আগেই যুক্তরাষ্ট্র বালুচিস্তান ন্যাশনাল আর্মিকে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করেছে। এই প্রেক্ষাপটে আমেরিকার বিনিয়োগ কতটা নিরাপদ হবে, তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে।
তবুও এই বিনিয়োগকে পাকিস্তান (Pakistan) সরকার এবং সেনা নেতৃত্ব এক ‘গেম চেঞ্জার’ হিসেবে দেখছে। তাঁদের দাবি, এই প্রকল্প সফল হলে শুধু অর্থনীতি নয়, আন্তর্জাতিক মঞ্চেও পাকিস্তানের অবস্থান বদলাতে পারে। তবে সবটাই নির্ভর করছে কতটা কার্যকরভাবে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা যায় এবং অশান্ত বালুচিস্তানে নিরাপত্তা পরিস্থিতি কতটা সামাল দেওয়া সম্ভব হয় তার উপর।