বাংলাহান্ট ডেস্ক:- বারাণসীতে ভারত ও মরিশাসের (India-Mauritius) বৈঠক দুই দেশের সম্পর্ককে আলাদাই এক মাত্রায় নিয়ে গেল। ১১ সেপ্টেম্বর বারাণসীতে (Varanasi) যখন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (Narendra Modi) এবং মরিশাসের প্রধানমন্ত্রী নবীনচন্দ্র রামগুলাম (Navinchandra Ramgoolam) মুখোমুখি হলেন, তখন বিষয়টি শুধু কূটনৈতিক সৌজন্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি, বরং দুই দেশের সম্পর্ক এক নতুন অর্থনৈতিক দিগন্তের দিকে এগিয়ে গেল। এই বৈঠকে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে ভারত ও মরিশাস আর ডলারের উপর নির্ভর করবে না, বরং স্থানীয় মুদ্রা—ভারতের ‘রুপি’ এবং মরিশাসের ‘মরিশাস রুপি’—এর মাধ্যমে বাণিজ্যকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। বৈশ্বিক অর্থনীতির পাল্টে যাওয়া সমীকরণের প্রেক্ষাপটে এই সিদ্ধান্তকে একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। ছোট এবং বিশ্বাসযোগ্য অংশীদার দেশগুলির মধ্যে স্থানীয় মুদ্রায় বাণিজ্যের এই উদ্যোগ ডলারের আধিপত্য থেকে মুক্তির দিশা দেখাবে বলে মন্তব্য করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
ভারত মরিশাস সম্পর্কে নতুন মোড় (India-Mauritius)
মোদী এই বৈঠককে কেবল একটি আনুষ্ঠানিক আলাপ নয়, বরং এক আন্তরিক অভিজ্ঞতা হিসেবে ব্যাখ্যা করেন। তিনি বলেন, ভারত ও মরিশাসের সম্পর্ক সাধারণ অংশীদারিত্বের থেকেও অনেক গভীর, এটি একেবারেই পারিবারিক বন্ধন। কাশীতে অনুষ্ঠিত এই বৈঠক দুই দেশের (India-Mauritius) মধ্যে কেবল রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক সম্পর্ক নয়, বরং সাংস্কৃতিক ও আবেগঘন সংযোগকেও আরও সুদৃঢ় করেছে।
আরও পড়ুন:-সুশীলা নন! নেপালের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে কুলমান ঘিসিং, জানেন তাঁর পরিচয়?
এই বৈঠকে একাধিক বড় প্রকল্পে দুই দেশের (India-Mauritius) মধ্যে সমঝোতা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী মোদী জানান, চাগোস মেরিন প্রোটেক্টেড এরিয়া, এসএসআর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল টাওয়ার, জাতীয় সড়ক ও রিং রোড সম্প্রসারণের মতো প্রকল্পগুলি যৌথভাবে এগিয়ে নেওয়া হবে। মোদীর ভাষায়, এগুলি কোনো সাহায্য নয়, বরং দুই দেশের যৌথ ভবিষ্যতে বিনিয়োগ। তিনি স্মরণ করিয়ে দেন যে গত বছর মরিশাসে ইতিমধ্যেই ভারতীয় ‘ইউপিআই’ এবং ‘রুপি কার্ড’ চালু করা হয়েছে, যা আর্থিক সহযোগিতার নতুন অধ্যায় খুলেছে। এবার স্থানীয় মুদ্রায় সরাসরি বাণিজ্য তারই আরও একটি শক্তিশালী ধাপ।
ভারত, মরিশাসে (India-Mauritius) উন্নয়ন প্রকল্পেও পাশে থাকবে। যার মধ্যে রয়েছে ৫০০ শয্যার একটি আয়ুষ এক্সেলেন্স সেন্টার, একটি পশু হাসপাতাল, ভেটেরিনারি কলেজ এবং নতুন এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল টাওয়ার নির্মাণ। এসব উদ্যোগ দুই দেশের জনগণের জীবনমান উন্নয়নে সরাসরি প্রভাব ফেলবে বলে মনে করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন:-নেপালের মতো পরিস্থিতি ভারতেও চাইছেন হুমায়ুন কবীর? তৃণমূল নেতা হুমায়ুন কবীরের পোস্টে তোলপাড়
বৈঠকে মোদী আরও একবার স্পষ্ট করে দেন যে ভারত ও মরিশাসের (India-Mauritius) লক্ষ্য একই, হিন্দ মহাসাগরকে স্বাধীন, নিরাপদ এবং সমৃদ্ধ করা। তিনি বলেন, উন্নয়ন হোক বা সার্বভৌমত্বের প্রশ্ন, ভারত সবসময় মরিশাসের পাশে থাকবে। মরিশাসের জন্য এ বছর বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ ব্রিটেন অবশেষে চাগোস দ্বীপপুঞ্জের সার্বভৌমত্ব ফিরিয়ে দিয়েছে। এ উপলক্ষে মোদী মরিশাসকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, ভারত সবসময় উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে থেকেছে এবং ভবিষ্যতেও মরিশাসের সার্বভৌমত্বকে অকুণ্ঠ সমর্থন জানাবে।
বারাণসীর এই বৈঠকের নির্যাস হল এই যে, ভারত ও মরিশাসের (India-Mauritius) সম্পর্ক কেবল কূটনৈতিক আনুষ্ঠানিকতার গণ্ডি ছাড়িয়ে আত্মিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক শক্তির মিলনে রূপ নিচ্ছে। এই সিদ্ধান্ত ও প্রকল্পগুলি ভবিষ্যতে শুধু দুই দেশের নয়, সমগ্র অঞ্চলের জন্য স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের পথ সুগম করবে।