বাংলা হান্ট ডেস্কঃ সম্প্রতি রাজ্য সরকারি কর্মীদের জন্য দু দফায় মহার্ঘ্য ভাতা বা ডিএ (Dearness allowance) বাড়িয়েছে মমতা সরকার। লোকসভা ভোটের আগে রাজ্য বাজেটে সরকারি কর্মীদের আরও ৪% ডিএ বৃদ্ধির ঘোষণা করেছেন অর্থমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। তবে তাতেও খুশি না হয়ে উল্টে আন্দোলনের ঝাঁঝ বাড়াচ্ছেন রাজ্য সরকারি কর্মচারীগণ। বহুদিন ধরেই কেন্দ্রীয় হারে ডিএ এর দাবিতে আন্দোলন চালাচ্ছেন রাজ্যের সরকারি কর্মীরা। আর সেই আন্দোলন যেন থামারই নাম নিচ্ছে না।
কারণ কী? এর কারণ হল কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের সঙ্গে তাদের মহার্ঘ ভাতার পার্থক্য। এখানে বলে রাখা ভালো সপ্তম বেতন কমিশনের আওতায় কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের প্রাপ্ত ডিএয়ের পরিমাণ বর্তমানে ৪৬ শতাংশ। যা শীঘ্রই বেড়ে ৫০ শতাংশ হতে পারে বলে জানা যাচ্ছে। এই আবহে কেন্দ্রীয় হারে ডিএ এর দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের একাংশ। আগামী মে মাসে কেন্দ্র ফের ডিএ বৃদ্ধি করলে বাংলা ও কেন্দ্রের সরকারি কর্মীদের ডিএ-র ফারাক হবে ৩৬ শতাংশ।
সম্প্রতি ডিএ আন্দোলনে সংগঠন সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের ভাস্কর ঘোষ দাবি তোলেন যে, রাজ্য সরকারি কর্মীদেরও কেন্দ্রীয় হারে ডিএ দিতে হবে রাজ্যকে। অল ইন্ডিয়া কনজিউমার প্রাইস ইনডেক্স অনুযায়ীই সেই ডিএ-র হার নির্ধারণ করতে হবে। ভাস্করবাবু বলেন, “তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিগত ১২ বছর ধরে দুটো বেতন কমিশন হয়েছে। দুটো কমিশন বাবদ আমাদের বকেয়ার পরিমাণ ৮২ শতাংশ।’
আক্ষেপ করে তিনি বলেন, ‘বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার পে কমিশনের অধীনে কেন্দ্রীয় কর্মচারীদের ৪৬ শতাংশ হারে ডিএ দেয়। অন্যান্য রাজ্যের কর্মচারীরাও সমহারেই ডিএ পান। কিন্তু আমাদের রাজ্য সরকার ১০ শতাংশ হারে ডিএ দেয়। আর নতুন করে যে ৪ শতাংশ ঘোষণা করা হয়েছে সেটা কিন্তু মে মাস থেকে দেওয়া হবে। আবার শোনা যাচ্ছে যে কেন্দ্রীয় সরকারও মার্চেই আরও ৪ শতাংশ ডিএ ঘোষণা করবে। আর তারই সাথে আমাদের আমার কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের ভাতার ব্যবধানটা ফের ৩৬ শতাংশে গিয়েই দাঁড়াবে।”
তিনি আরও বলেন, ‘কোনো পরিকল্পনা ছাড়াই রাজ্য সরকার যেভাবে ডিএটা ঘোষণা করছে, বাজারমূল্যের সঙ্গে মিল না রেখে, তার ফলে পশ্চিমবঙ্গে অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা তৈরি হচ্ছে। এর ফলে রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের জীবন যাত্রার মান দিনের পর দিন খারাপ হচ্ছে। স্থায়ী কর্মচারীদের পাশাপাশি অস্থায়ী কর্মচারীরা ভয়ানকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। ক্ষতি হচ্ছে রাজ্যের অর্থনীতির।”
রাজ্য সরকার ডিএ বৃদ্ধি করায় যে সরকারি কর্মীরা খুশি হননি সেকথা বলতে গিয়ে ভাস্কর ঘোষ বলেন, “ আমাদের বকেয়া ছিল ৩৬ শতাংশ, সেখান থেকে আমাদের মাত্র ৪ শতাংশ দেওয়া হয়েছে। সরকারের সিদ্ধান্তে আমরা খুশি নই। ওদিকে মিনিমাম ওয়েজ যেটা বাড়ছে, সেটা সরকার নিজেই মানছে না। রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দফতরে এমন অনেক উদাহরণ রয়েছে, যেখানে তাদের মিনিমাম ওয়েজ এর নিচেই কাজ করানো হচ্ছে। আমরা এটার অবসান চাইছি।”
আরও পড়ুন: রেহাই পাবে না কোনো জেলাই! একটু পরই উঠবে ঝড়, বজ্রবিদ্যুৎ সহ বৃষ্টির হাই অ্যালার্ট, আবহাওয়ার মেগা খবর
এরপরই আগামী মাসে কর্মবিরতি প্রসঙ্গে ভাস্কর ঘোষ বলেন, “এ মাসের ২২ তারিখ সব রাজ্য সরকারি দফতরে কর্মবিরতি পালন করা হবে। কর্মচারীরা কাজে যাবেন কিন্তু কাজ করবেন না। আগামী মাসে ৩ তারিখ আমাদের একটা মিছিল আছে সুবোধ মল্লিক স্কোয়ার থেকে রানী রাসমণি রোডে। জমায়েত এবং সভার আয়োজন করা হবে। মার্চের ৬ এবং ৭ তারিখ গোটা রাজ্য জুড়ে আমরা ধর্মঘট ডাকতে চলেছি।” লোকসভা ভোটের আগে সরকারি কর্মীদের এই পদক্ষেপে যে রাজ্য সরকার অস্বস্তিতে পড়বে সেই নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই।