বাংলাহান্ট ডেস্ক: নেপালে (Nepal) সাম্প্রতিক সময়ে তরুণ প্রজন্ম, বিশেষত জেন-জি (Gen-Z) কর্মীরা, এক নতুন প্রতিবাদী স্রোত তৈরি করেছে। তাঁদের অভিযোগ, দেশের রাজনৈতিক প্রভাবশালী পরিবারগুলির সন্তানরা বা তথাকথিত “নেপো কিডস” (Nepokids) করদাতাদের টাকায় বড় হয়ে আজ ক্ষমতার অপব্যবহার করছে এবং সাধারণ নাগরিকদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করছে। এই প্রজন্মের ক্ষোভ এতটাই তীব্র যে সোশ্যাল মিডিয়ায় এখন প্রায় প্রতিদিনই দেখা যাচ্ছে #NepoKids হ্যাশট্যাগে তরুণদের প্রতিবাদের ঝড়।
নেপালে “নেপো কিডস” বিরোধ: (Nepal)
এই আন্দোলনের কেন্দ্রে উঠে এসেছে কয়েকজন আলোচিত নাম। তাঁদের মধ্যে অন্যতম সৌগত থাপা। তিনি প্রাক্তন আইনমন্ত্রী বিন্দু কুমার থাপার ছেলে। সৌগত নেপাল (Nepal) চেম্বার অফ কমার্সের নির্বাচনে জয়লাভ করার পর থেকেই সমালোচনার মুখে। জেন-জি কর্মীদের মতে, তাঁর জয় নিজের যোগ্যতার কারণে নয়, বরং বাবার প্রভাবেই সম্ভব হয়েছে। পাশাপাশি তাঁর আড়ম্বরপূর্ণ জীবনযাপন—বিদেশ ভ্রমণ, দামি গাড়ি ব্যবহার—প্রমাণ করে যে তিনি সাধারণ ব্যবসায়ীর মতো সংগ্রামের পথ পেরোননি। অনেকে মনে করেন, চেম্বার অফ কমার্সের নেতৃত্ব দেওয়ার মতো যোগ্যতা তাঁর নেই, পদটি কেবল সুবিধার ফল।
আরও পড়ুন: ওয়ার্কআউটের ঘাম ঝরানো মুহূর্ত, সাদা-কালো ছবিতে নেটদুনিয়ায় ঝড় তুললেন অভিষেক
প্রতিবাদের আরেক কেন্দ্রীয় মুখ শৃঙ্খলা কাটিওয়াড়া, যিনি ‘মিস নেপাল (Nepal) ওয়ার্ল্ড’-এর খেতাব জিতেছিলেন। তিনি প্রাক্তন স্বাস্থ্যমন্ত্রী বিরোধ কাটিওয়াড়ার মেয়ে। যদিও শৃঙ্খলার প্রতিভা নিয়ে বিতর্ক নেই, তবু তরুণদের একটি বড় অংশ মনে করে, তাঁর বাবার রাজনৈতিক প্রভাবও মুকুট জেতার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। তাঁর বিলাসবহুল জীবনযাপন প্রায়ই সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোচনায় আসে। জেন-জি আন্দোলনের পর তাঁর জনপ্রিয়তায়ও ধাক্কা লেগেছে—রিপোর্ট অনুযায়ী তিনি ইনস্টাগ্রামে প্রায় এক লাখ ফলোয়ার হারিয়েছেন।
আরেকটি নাম বীণা মাগার। তিনি প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী পুষ্প কমল দাহাল ‘প্রচণ্ড’-এর পুত্রবধূ। নেপালের (Nepal) পানি সরবরাহ মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করার সময় তাঁর বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার এবং দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। তরুণদের দাবি, সরকারি তহবিল ব্যবহার করে তিনি বিদেশ ভ্রমণ করেছেন এবং গ্রামীণ পানি প্রকল্পের টাকা ব্যক্তিগত স্বার্থে ব্যবহার করেছেন। এই অভিযোগগুলো তাঁর ভাবমূর্তিকে প্রবলভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।
একইভাবে আলোচনায় রয়েছেন শিভানা শ্রেষ্ঠা, যিনি প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শের বাহাদুর দেউবার পুত্রবধূ। তাঁর বিলাসবহুল জীবনযাপন, বিদেশি ভ্রমণ এবং কোটি কোটি টাকার সম্পত্তির মালিকানা প্রায়ই নেপালের (Nepal) তরুণদের ক্ষোভের কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছে।
আরও পড়ুন: ২০২৭ এসসিও’র দায়িত্ব পাকিস্তানের হাতে,‘শুরু হোক প্রস্তুতি’ ঘোষণা করলেন শাহবাজ শরিফ
নেপালের (Nepal) রাজনীতিকদের সন্তান ও আত্মীয়স্বজনদের ঘিরে এভাবে বাড়তে থাকা ক্ষোভ শুধু ব্যক্তিগত আক্রমণ নয়, বরং এক বৃহত্তর প্রজন্মগত আক্রোশের বহিঃপ্রকাশ। তরুণরা বলছে, যখন সাধারণ মানুষ প্রতিদিন মূল্যস্ফীতি, বেকারত্ব ও মৌলিক সুযোগ-সুবিধার অভাবে লড়ছে, তখন তথাকথিত নেপো কিডসরা বিশেষ সুবিধা ও ক্ষমতার প্রভাবে বিলাসবহুল জীবনযাপন করছে। এর মধ্য দিয়ে নেপালের সমাজে বৈষম্য ও অবিচারের চিত্র আরও প্রকট হয়ে উঠছে।
এই পরিস্থিতিতে “নেপো কিডস” ইস্যুটি এখন কেবল সোশ্যাল মিডিয়ার আলোচনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং নেপালের (Nepal) তরুণ আন্দোলনের অন্যতম প্রধান প্রতীক হয়ে উঠেছে। তাঁদের এই বার্তা পরিষ্কার—ক্ষমতা আর বিশেষ সুবিধার জোরে নয়, যোগ্যতার ভিত্তিতেই নেতৃত্ব ও সাফল্য নির্ধারিত হওয়া উচিত।