পুড়ে ছাই ৬২ হাজার নথি, তাঁবু খাটিয়ে চলছে সুপ্রিম কোর্টের কাজ! বিপ্লবের আগুনে শোচনীয় অবস্থা নেপালের

Published on:

Published on:

Nepal Supreme Court continuous to work under tents.

বাংলাহান্ট ডেস্ক: নেপালে (Nepal) দুর্নীতিগ্রস্ত শাসকদের সরিয়ে দেওয়ার আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছে তরুণ প্রজন্ম, বিশেষত ‘জেন জি’ বিপ্লবীরা। তাঁদের সাহসী ভূমিকার জন্য যেমন প্রশংসা হচ্ছে, তেমনই আন্দোলনের নামে দেশজুড়ে তাণ্ডব চালানোর অভিযোগে সমালোচনার মুখেও পড়তে হচ্ছে। ইতিমধ্যেই অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানমন্ত্রী সুশীলা কারকির কাছে ক্ষমা চেয়েছেন আন্দোলনের প্রতিনিধিরা। পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে সুপ্রিম কোর্ট ভবন কার্যত ছাই হয়ে যাওয়ায় সোমবার সকালে আদালতের কাজ শুরু হয় একটি সাদা তাঁবুর নীচে। তাঁবুর উপরে বড় করে লেখা হয়েছে— ‘সুপ্রিম কোর্ট নেপাল’। আদালতের ভবন পুড়ে যাওয়ার ফলে বিপুল ক্ষতি হয়েছে, নষ্ট হয়ে গিয়েছে প্রায় ৬২ হাজার মামলার নথি।

শোচনীয় অবস্থা নেপালের (Nepal):

প্রধান বিচারপতি প্রকাশমান সিংহ রাউত আদালতের উপর হামলার তীব্র নিন্দা করেছেন। তিনি দেশবাসীকে আশ্বস্ত করে বলেন, যে কোনও পরিস্থিতিতেই ন্যায়বিচারের কাজ বন্ধ হবে না। প্রবীণ আইনজীবী পূর্ণমান শাক্য জানিয়েছেন, আদালতের এত বিপুল ক্ষতি নেপালের (Nepal) বিচারব্যবস্থাকে দীর্ঘদিন ধরে ভোগাবে। তাঁর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ৬২ হাজার মামলার অমূল্য নথি পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে, যেগুলির আর কখনও পুনরুদ্ধার সম্ভব নয়। এতে বহু গুরুত্বপূর্ণ মামলার ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে এবং প্রশাসনের পক্ষ থেকেও এর সমাধান এখনও স্পষ্ট নয়।

আরও পড়ুন:শুল্কবোমার আবহেই চমকে দিল ভারত! শুধুমাত্র আগাস্টেই রফতানি বাড়ল ৬.৭ শতাংশ

আন্দোলনের সময় শুধু আদালত নয়, নেপালের (Nepal) সংসদ ভবন, নেতা-মন্ত্রীদের বাসভবন, বিভিন্ন শহরের পৌরসভা ভবন থেকে শুরু করে গ্রামীণ এলাকার পঞ্চায়েত ভবন পর্যন্ত ভস্মীভূত হয়েছে। এই ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কয়েক হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে বলে সরকারি অনুমান। অর্থনীতিতে এর সরাসরি প্রভাব পড়েছে, দেশের জিডিপি নেমে এসেছে এক শতাংশে। ধীরে ধীরে হলেও এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা শুরু হয়েছে।

এমন অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতিতেই প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব নিয়েছেন ৭৩ বছরের সুশীলা কারকি। শুক্রবার রাতে শপথ নেওয়ার পর প্রথমবার তিনি মুখ খুলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, ক্ষমতার ভোগ নয়, দেশের শৃঙ্খলা ফেরানোই তাঁর মূল লক্ষ্য। বিক্ষোভে মৃতদের পরিবারকে প্রতি পরিবারে নেপালি (Nepal) মুদ্রায় ১০ লক্ষ টাকা করে আর্থিক সাহায্যের ঘোষণা করেছেন তিনি। একই সঙ্গে তিনি বিক্ষোভকারীদের কাছে শান্তিপূর্ণ উপায়ে মতপ্রকাশের আহ্বান জানিয়েছেন।

Nepal Supreme Court continuous to work under tents.

আরও পড়ুন:শুল্কযুদ্ধের পর অবশেষে হবে বাণিজ্যচুক্তি? ভারত-আমেরিকার মধ্যে মঙ্গলবার বিশেষ আলোচনা

অন্যদিকে, আন্দোলনের প্রতিনিধিরা স্বীকার করেছেন যে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে অনেক ক্ষেত্রেই অতিরিক্ত ক্ষয়ক্ষতি হয়ে গিয়েছে। সেই কারণেই তাঁরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, দুর্নীতি ও শাসকশ্রেণির বিরুদ্ধে তরুণ প্রজন্মের ক্ষোভই এই আন্দোলনের মূল ভিত্তি। কিন্তু ধ্বংসযজ্ঞে দেশের বিচারব্যবস্থা ও অর্থনীতির যে ক্ষতি হল, তার পুনর্গঠন সহজ হবে না (Nepal)।

বুদ্ধের দেশের (Nepal) ইতিহাসে এই আন্দোলন একদিকে দুর্নীতিবিরোধী লড়াইয়ের প্রতীক হয়ে উঠেছে, অন্যদিকে ধ্বংস ও বিশৃঙ্খলার চিত্রও তুলে ধরেছে। এখন প্রশ্ন, অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী সুশীলা কারকি নেতৃত্বে দেশ কত দ্রুত এই অস্থিরতা কাটিয়ে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে পারে।