বাংলাহান্ট ডেস্ক: লাগাতার নিরাপত্তা বাহিনীর চাপে অবশেষে নতি স্বীকার করল মাওবাদীরা (Maoists)। গত ন’মাসে ২১০ জন সদস্য নিহত হওয়ার পর শান্তির লক্ষ্যে আলোচনায় বসতে চেয়ে সরকারের কাছে প্রস্তাব দিল সিপিআই (মাওবাদী)। মাও-কেন্দ্রীয় কমিটির তরফে জারি হওয়া এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, তারা অস্ত্রত্যাগ এবং আত্মসমর্পণে রাজি। তবে এর আগে সরকারের কাছে অন্তত এক মাসের অস্থায়ী সংঘর্ষবিরতির দাবি জানিয়েছে সংগঠন। সেই সময়ের মধ্যে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে চায় তারা।
শান্তির লক্ষ্যে মাওবাদীরা (Maoists)
মাও (Maoists) নেতা অভয়ের নামে প্রকাশ্যে আসা এই চিঠি ১৫ আগস্টের বলে জানা গিয়েছে। যদিও এর সত্যতা এখনও যাচাই করেনি বাংলাহান্ট। ওই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ২০২৪ সাল থেকে শুরু হওয়া লাগাতার অভিযানে দুই পক্ষই ক্ষতিগ্রস্ত। তবু জনসাধারণের স্বার্থে তারা ভবিষ্যতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের সঙ্গে মিলে কাজ করতে প্রস্তুত। সরকারের কাছে তাদের আর্জি, দেশের বিভিন্ন রাজ্যে থাকা সহকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করতে সময় দেওয়া হোক। একই সঙ্গে জেলবন্দি মাওবাদী নেতাদের সঙ্গেও আলোচনার ব্যবস্থা করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
আরও পড়ুন: মোদীর নেতৃত্বের “ফ্যান” হলেন ট্রাম্প! “নরেন্দ্র”-র জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানিয়ে করলেন ভূয়সী প্রশংসা
মাওবাদীরা (Maoists) জানিয়েছেন, যদি সরকার সত্যিই আলোচনায় আগ্রহী হয় তবে অবিলম্বে এক মাসের জন্য অভিযান বন্ধ করতে হবে। তাদের দাবি, এই সময়কালে কোনও পুলিশি অভিযান চলবে না। প্রয়োজনে আগামীকাল থেকেই ভিডিও কলের মাধ্যমে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত তারা। এই প্রস্তাব ঘিরে নতুন করে জল্পনা শুরু হয়েছে। কারণ এতে স্পষ্ট, নিরাপত্তাবাহিনীর লাগাতার চাপে সংগঠনের ভেতরেই মতভেদ তৈরি হয়েছে। একাংশ অস্ত্র ছেড়ে আলোচনার পথে হাঁটতে চাইছে।
ছত্তিশগড় সরকারের তরফে জানানো হয়েছে, চিঠিটির সত্যতা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যদি এটি মাওবাদীদের পক্ষ থেকেই হয়ে থাকে, তবে সেই অনুযায়ী প্রস্তাব কেন্দ্রের কাছে পাঠানো হবে। তবে সরকার আদৌ এই দাবিতে সাড়া দেবে কি না তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে (Maoists)।
আরও পড়ুন: মহালয়া থেকে উদ্বোধনে মমতা, ১২ মণ্ডপে পুলিশি তৎপরতা, কী নির্দেশ দিল কলকাতা পুলিশ?
প্রসঙ্গত, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ইতিমধ্যেই ঘোষণা করেছেন, ২০২৬ সালের মার্চের মধ্যে দেশ থেকে মাওবাদী সমস্যার সম্পূর্ণ অবসান ঘটানো হবে। বিজেপি সরকার ছত্তিশগড়ে ক্ষমতায় আসার পর অভিযানে গতি বেড়েছে। ২০২৪ সালে বস্তারে নিরাপত্তাবাহিনীর অভিযানে মৃত্যু হয় ২৮৭ জন মাওবাদীর, গ্রেপ্তার হয় হাজারেরও বেশি। আত্মসমর্পণ করেন ৮৩৭ জন। ২০২৫ সালে অভিযানের ঝাঁজ আরও বাড়ে। গত নয় মাসে কেবল এনকাউন্টারেই মারা গেছে ২১০ জন মাওবাদী (Maoists), যার মধ্যে ছত্তিশগড়ে অন্তত ১৩ জন শীর্ষ নেতা। এদের মাথার দাম ছিল ২০ লক্ষ থেকে এক কোটি টাকা পর্যন্ত।
এই পরিস্থিতি থেকেই মাওবাদীরা (Maoists) টের পেয়েছে, অস্ত্র ধরে এগোনো মানেই মৃত্যু। তাই অবশেষে আলোচনার পথেই শান্তি খুঁজছে তারা। তবে সরকারের অবস্থানই এখন নির্ধারণ করবে এই সঙ্ঘাত সত্যিই শান্তির পথে এগোবে নাকি আরও এক দফা লড়াইয়ের প্রস্তুতি নেবে নিরাপত্তা বাহিনী।