বাংলাহান্ট ডেস্ক: ‘জিহাদকে জাগাতে হবে’ পাকিস্তান (Pakistan) থেকে ফের আওয়াজ তুলল জইশ-ই-মহম্মদের শীর্ষ নেতা। গত সপ্তাহে পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়ার বালাকোট তহশিলে অনুষ্ঠিত হল এক ধর্মীয় অনুষ্ঠান, যেখানে ইসলামিক শিক্ষা ও নবী মোহাম্মদের জীবন নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা থাকলেও তা পরিণত হয় ভারতবিরোধী এবং জিহাদি সমাবেশে। ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা জানিয়েছে, ৩৮তম বার্ষিক ‘মিশন মুস্তফা’ সম্মেলনে হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতিতে বিভিন্ন ইসলামি পণ্ডিতরা বক্তব্য রাখেন। মূল আলোচনার বিষয় ছিল নবীর ‘খাতম-এ-নুবুওয়াত’, তবে সবচেয়ে বেশি আলোচিত হয়েছে জইশ-ই-মহম্মদের শীর্ষ নেতা মাসুদ ইলিয়াস কাশ্মীরির উসকানিমূলক বক্তব্য।
পাকিস্তান থেকে ফের জিহাদের ডাক (Pakistan)
কাশ্মীরি দাবি করেন, জইশ প্রধান মাসুদ আজহার এখন “বিশ্বজুড়ে প্রতিরোধের প্রতীক”, যাঁকে নিয়ে ওয়াশিংটন থেকে মস্কো পর্যন্ত আলোচনা হয়। তাঁর অভিযোগ, ৭ মে ভারতীয় সেনার ‘অপারেশন সিঁদুর’-এ বাহাওয়ালপুরে জইশ সদর দফতরে হামলা চালানো হয়, যেখানে মাসুদ আজহারের পরিবারের ১০ জন সদস্য নিহত হন। ওই অভিযানে পাকিস্তান (Pakistan) এবং পাক অধিকৃত কাশ্মীরের নয়টি জইশ ঘাঁটি ধ্বংস করা হয়, যার মধ্যে বাহাওয়ালপুরের প্রধান দফতরও ছিল। ভারত অবশ্য জানিয়েছে, তাদের হামলায় সাধারণ মানুষের ক্ষতি না হয় সে ব্যাপারে বিশেষ সতর্কতা নেওয়া হয়েছিল।
আরও পড়ুন: এশিয়া কাপ চলাকালীন গড়লেন ইতিহাস! ICC র্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষে পৌঁছলেন বরুণ চক্রবর্তী
কাশ্মীরি তাঁর বক্তৃতায় বলেন, “সন্ত্রাসবাদকে গ্রহণ করে আমরা দিল্লি, কাবুল ও কান্দাহারের বিরুদ্ধে লড়েছি পাকিস্তানের (Pakistan) সীমান্ত রক্ষার জন্য। সবকিছু হারালেও মুজাহিদ্দিনদের জিহাদ ত্যাগ করা চলবে না। এবার লক্ষ্য হবে দিল্লি, কাবুল, এমনকি ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুও।” এই মন্তব্যের ভিডিও ইতিমধ্যেই প্রকাশ্যে এসেছে, যা ভারতের নিরাপত্তা সংস্থাগুলির নজরে এসেছে।
ভারতের গোয়েন্দাদের দাবি, মাসুদ ইলিয়াস কাশ্মীরি বহু সন্ত্রাসী হামলার মূলচক্রী। ২০১৮ সালের জম্মুর সুনজওয়ান সেনা শিবিরে হামলার ঘটনায় তাঁর বিরুদ্ধে চার্জশিট রয়েছে। বর্তমানে তিনি পাক অধিকৃত কাশ্মীরে জইশের ক্যাডারদের প্রশিক্ষণ দেন। গোয়েন্দা সূত্র আরও জানিয়েছে, এই ধরনের সমাবেশ আসলে পাকিস্তানের (Pakistan) মাটিতে জঙ্গি কার্যকলাপকে বৈধতা দেওয়ার একটি কৌশল।
আরও পড়ুন:চলতি মাসেই বঙ্গোপসাগরে ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা! জারি NOTAM, সামনে এল দিনক্ষণ
উল্লেখ্য, মাসুদ আজহার ভারতের অন্যতম মোস্ট ওয়ান্টেড জঙ্গি। ২০০১ সালের সংসদ হামলা, ২৬/১১ মুম্বই হামলার সঙ্গে তাঁর নাম জড়িয়ে আছে। ২০১৯ সালে জাতিসংঘ তাঁকে ‘গ্লোবাল টেররিস্ট’ ঘোষণা করে। ১৯৯৯ সালের কান্দাহার বিমান অপহরণকাণ্ডে মুক্তি পাওয়ার পর তিনি পাকিস্তানে আশ্রয় নেন। ভারত বহুবার পাকিস্তানের (Pakistan) কাছে আজহার এবং লস্কর-ই-তইবার প্রধান হাফিজ সাঈদকে হস্তান্তরের দাবি তুলেছে। কিন্তু ইসলামাবাদ বারবার দাবি করেছে, তাদের কাছে মাসুদ আজহারের কোনও খোঁজ নেই।
ভারতের নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের মতে, বালাকোটের এই ধর্মীয় সম্মেলন প্রমাণ করে যে পাকিস্তানের (Pakistan) মাটিতে এখনও জইশ-ই-মহম্মদ সক্রিয়ভাবে কাজ করছে এবং ভারতবিরোধী জিহাদকে উস্কে দিতে চাইছে। এতে আঞ্চলিক নিরাপত্তার পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে।