বাংলা হান্ট ডেস্কঃ চিকিৎসায় সামান্য ভুল নয়, মারাত্মক অবহেলা প্রমাণ না হলে চিকিৎসকের বিরুদ্ধে কোনও মামলা টিকবে না। সম্প্রতি এমনটাই নির্দেশ দিল কলকাতা হাই কোর্ট (Calcutta High Court)। বুধবার বিচারপতি অজয়কুমার মুখোপাধ্যায় অভিযুক্ত চিকিৎসক রবি গণেশ ভরদ্বাজের বিরুদ্ধে জারি হওয়া মামলা বাতিল করেন। পাশাপাশি রায় দেওয়া হয় যে, অভিযোগ যাচাইয়ের জন্য কমপক্ষে তিনজন সরকারি চিকিৎসক নিয়ে একটি স্বাধীন মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করতে হবে নিম্ন আদালতকে। সেই বোর্ডের মতামতের ভিত্তিতেই নতুন করে বিচার হবে।
ঠিক কি ঘটেছিল?
ঘটনাটি শুরু ২০১৪ সালের ১০ জুলাই। অভিযোগকারী রঞ্জিত সরকারের সন্তান সিঁড়ি থেকে পড়ে পেট এবং কোমরে গুরুতর আঘাত পান। সেদিন বিকেলেই হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় তাকে। পরিবারের দাবি, ভর্তির সময় রোগীর অবস্থা স্থিতিশীল ছিল। কিন্তু কর্তব্যরত চিকিৎসক শুধুমাত্র মেরুদণ্ড পরীক্ষা করেন, পেট ব্যথা বা অন্য শারীরিক সমস্যাগুলো নাকি পরীক্ষা করা হয়নি। এছাড়া তিনিব অভিযোগ করেন যে, রক্তচাপ, পালস রেট কিংবা শ্বাসপ্রশ্বাস কিছুই রেকর্ড করেননি চিকিৎসকরা।
এরপর প্রথম রাতে রোগী প্রচণ্ড পেট ব্যথায় ভোগেন। অভিযোগ, নার্সরা সারারাত তাঁর শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করেননি। পরের দিন সকাল ১০টায় তাঁকে রক্ত পাতলা করার ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়। তার পরই রোগীর রক্তচাপ হঠাৎ কমে যায়, পেট ফুলে ওঠে, প্রচণ্ড ঘাম হয় এবং তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়েন। আইসিইউ-তে স্থানান্তরিত করা হলেও যথাসময়ে চিকিৎসা হয়নি বলে দাবি পরিবারের। এর পর ১২ জুলাই সন্ধ্যায় রোগীর মৃত্যু হয়। মৃত্যুর শংসাপত্রে হাসপাতাল উল্লেখ করে, রোগীর মৃত্যু স্বাভাবিক কারণে হয়েছে। কিন্তু মৃতের বাবার অভিযোগ, এটি চিকিৎসায় অবহেলার ফল এবং ভুল ইঞ্জেকশন দেওয়ার কারণেই তার সন্তানের মৃত্যু হয়েছে।
সমনকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে হাই কোর্টের (Calcutta High Court) দ্বারস্থ হন অভিযুক্ত চিকিৎসক
এই নিয়ে ২০১৭ সালে ব্যারাকপুর আদালতে মামলা দায়ের করেন রঞ্জিত সরকার। আদালত অভিযুক্ত চিকিৎসকের বিরুদ্ধে সমন জারি করে। তবে ওই সমনকে চ্যালেঞ্জ করে ২০১৮ সালে চিকিৎসক হাই কোর্টের (Calcutta High Court) দ্বারস্থ হন। অভিযুক্তের হয়ে আদালতে মামলা লড়েন আইনজীবী মিলন মুখোপাধ্যায়। ওই আইনজীবী যুক্তি দেন, চিকিৎসায় সামান্য ত্রুটি সবসময় অপরাধ নয়। অভিযোগ করার আগে অবশ্যই কোনও স্বাধীন মেডিক্যাল বোর্ডের মতামত নেওয়া উচিত ছিল। কিন্তু এখানে তা করা হয় নি। ফৌজদারি দণ্ডবিধি অনুসারে অভিযুক্ত যদি বিচারাধীন এলাকার বাইরের বাসিন্দা হন, তবে তথ্য যাচাই বাধ্যতামূলক। এখানে তা হয়নি বলেও অভিযোগ জানান তিনি।
অন্যদিকে, মৃতের বাবা কোনও আইনজীবী নিয়োগ না করে নিজেই আদালতে (Calcutta High Court) সওয়াল করেন। ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞ অজয় গুপ্তের রিপোর্ট আদালতে তুলে ধরে তিনি জানান, রোগীকে অযথা তিনবার রক্ত পাতলা করার ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়েছিল, যার ফলে শরীর থেকে ৩ লিটার রক্তক্ষরণ হয় এবং ‘হেমোরেজিক শক’ হয়ে মৃত্যু ঘটে। সেটিকে ‘ক্রিমিনাল মেডিক্যাল নেগলিজেন্স’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে রিপোর্টে।
আরও পড়ুনঃ ‘রাজ্যের মহিলারাই এবার বিদায় করবে মমতার সরকারকে’, নন্দীগ্রাম থেকে বিস্ফোরক শুভেন্দু
অভিযোগকারী সমন বাতিল করে হাই কোর্ট (Calcutta High Court)
বিচারপতি মিলন মুখোপাধ্যায় স্পষ্ট বলেন, নিম্ন আদালতের বিচারক কোনও চিকিৎসক নন। তিনি কীভাবে ধরে নিলেন যে ইঞ্জেকশন দেওয়ার পরেই মৃত্যু হয়েছে? কেন স্বাধীন মেডিক্যাল বোর্ডের মতামত নেওয়া হয়নি? এই প্রশ্নও তোলেন বিচারপতি। হাই কোর্টে (Calcutta High Court) এই সমস্ত প্রশ্ন উঠতে হাই কোর্ট অভিযোগকারীর সমন বাতিল করে স্বাধীন মেডিকেল বোর্ড গঠনের নির্দেশ দেয়। হাই কোর্ট বলে মেডিক্যাল বোর্ডের মতামতের ভিত্তিতে নতুন করে বিচার শুরু হবে। তাই অভিযোগকারীকে সব নথি ওই বোর্ডের হাতে তুলে দিতে হবে। সেই সমস্ত নথি যাচাই করে মেডিকেল বোর্ড যা সিদ্ধান্ত নেবে তার উপর ভিত্তি করেই আবার বিচার প্রক্রিয়া শুরু হবে ব্যারাকপুর আদালতে।