শান্তিনিকেতনের কোটি টাকার জমি-ফ্ল্যাট, সবই কি চাকরি দুর্নীতির টাকায়? চন্দ্রনাথকে নিয়ে ইডির তদন্তে বিস্ফোরক তথ্য

Published on:

Published on:

Recruitment Scam ED Probes Chandranath Singhs Wife Land Deals

বাংলা হান্ট ডেস্কঃ রাজ্যের নিয়োগ দুর্নীতি (Recruitment Scam) মামলায় ফের বড় মোড়। অভিযুক্ত রাজ্যের কারা এবং ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পমন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ ও তাঁর স্ত্রী কুন্তলা সিংহের ব্যবসায়িক লেনদেন ঘিরে নয়া তথ্য হাতে পেয়েছে ED। তদন্তকারীদের সন্দেহ, শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির মাধ্যমে যে টাকা তারা নিয়েছিলেন, সেই টাকা জমি কেনাবেচা এবং ব্যবসার নামে খাটানো হয়েছে। তদন্তে নেমে ED চন্দ্রনাথ এবং তাঁর পরিবারের সঙ্গে সম্পর্কিত সন্দেহজনক ৯টি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের লেনদেন খতিয়ে দেখে এই তথ্য পেয়েছে।

নিয়োগ দুর্নীতির (Recruitment Scam) টাকায় জমির ব্যবসা

চার্জশিটে ED উল্লেখ করেছে যে, কুন্তলা সিংহ বিকাশ ভক্ত নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে মিলে ‘বি কে কনস্ট্রাকশন’ নামক একটি সংস্থা খোলেন। বিকাশের বয়ান অনুযায়ী, তিনিই ছিলেন এই ব্যবসার আসল দায়িত্বে। আর এই ব্যবসায় চন্দ্রনাথের স্ত্রী কুন্তলার ভূমিকা বর্ণনা করতে গিয়ে বিকাশ ভক্ত ‘স্লিপিং পার্টনার’ কথাটি বলেন। তদন্ত সূত্রে খবর, প্রথম দিকে কুন্তলার নামে ৭ লক্ষ টাকায় ৩.০২৫ কাঠা জমি কেনা হয়। কুন্তলার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের নথিতে ওই ৭ লক্ষ টাকা জমি কেনাবেচার হিসাবে উল্লেখ রয়েছে। তবে সংস্থার নামে কোনও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলাই হয়নি।

নিয়োগ দুর্নীতির (Recruitment Scam) টাকায় শান্তিনিকেতনে ১ কোটি ৮০ লক্ষ টাকার জমি কেনেন কুন্তলা

এরপর উঠে আসে শান্তিনিকেতনের জমির প্রসঙ্গ। ২০১৮ সালে পর্যটন লজের বিপরীতে ১ কোটি ৮০ লক্ষ টাকায় জমি কেনেন কুন্তলা। বিকাশের সংস্থা ‘কেবিপি রিয়েলটি এলএলপি’ সেখানে একটি ৬তলা ভবন তোলে। সেই ভবনের ১৯টি ফ্ল্যাট বিক্রি করে কুন্তলাকে ১ কোটি ১৬ লক্ষ টাকা দেন বিকাশ। পরে ২০২২ সালে আরও একটি আবাসন প্রকল্পে কুন্তলার সঙ্গে নতুন করে চুক্তি করেন বিকাশ।

২০২৩ সালে বীরভূমের ইলামবাজারে চন্দ্রনাথের দুই পুত্রের সঙ্গে আরও একটি যৌথ প্রকল্প শুরু করেন বিকাশ। ৮ হাজার বর্গফুটের একটি জমিতে ব্যবসার জন্য একটি ভবন তৈরি করেন তাঁরা এবং পরে সেটি ভাড়া দেন। এই সব কিছুরই মূল নির্দেশক ছিলেন চন্দ্রনাথ, দাবি বিকাশের। যদিও চন্দ্রনাথের স্ত্রীর দাবি করেন তিনি এই ব্যবসার বিষয়ে কিছুই জানতেন না, তাঁর স্বামীই সব দেখভাল করতেন।

অন্যদিকে, আয়কর রিটার্ন খতিয়ে দেখে ইডির দাবি, নোটবন্দির সময় কুন্তলা তার একটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ৪৪ লক্ষ ৩৫ হাজার টাকা জমা দিয়েছিলেন। কিন্তু ব্যাংকের আসল নথিতে মাত্র ৭ লক্ষ টাকা জমা হওয়ার হিসেব পাওয়া যায়। কুন্তলার দাবি তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সমস্ত টাকার হিসেবে রাখা, আয়কর রিটার্ন ,এই সব কিছুই তার স্বামী চন্দ্রনাথ দেখতেন। এমনকি বোলপুরের বাড়ি থেকে উদ্ধার হওয়া ৪১ লক্ষ নগদ টাকা নিয়েও কুন্তলা কিছু জানেন না বলে দাবি করেছেন। ইডির মতে, জমি ব্যবসা এবং কৃষিকাজের কথা বলে আসলে নিয়োগ দুর্নীতির (Recruitment Scam)  টাকার উৎস গোপন করার চেষ্টা হয়েছে। চন্দ্রনাথকে একাধিকবার নথি নিয়ে হাজির হতে বলা হলেও তিনি আসেননি।

Recruitment Scam ED Probes Chandranath Singhs Wife Land Deals

আরও পড়ুনঃ বিনিয়োগের নিরাপত্তা নেই! রাজ্যের সিদ্ধান্তে বাংলায় ফের নড়বড়ে হল শিল্পের ভবিষ্যৎ?

উল্লেখ্য, এর আগেও নিয়োগ দুর্নীতির (Recruitment Scam) মামলায় কুন্তল ঘোষের বাড়ি থেকে পাওয়া ‘লাল খাতায়’ চন্দ্রনাথের নাম মিলেছিল। পরবর্তী সময়ে কুন্তল ও তাপস মণ্ডলের বয়ানে উঠে আসে, প্রাথমিকের শিক্ষক পদের জন্য অন্তত ১৫৯ জন প্রার্থীর নাম পাঠিয়েছিলেন চন্দ্রনাথ। ইডির দাবি, নগদ টাকার হঠাৎ বৃদ্ধি এবং তার বর্ণনায় অসঙ্গতি থেকেই স্পষ্ট যে, চাকরিপ্রার্থীদের থেকে আদায় করা টাকা বৈধ করার জন্য জমি ব্যবসা ব্যবহার করা হয়েছে।