বাংলা হান্ট ডেস্কঃ আলিপুরের বিশেষ সিবিআই আদালতে শুক্রবার থেকে শুরু হল নিয়োগ মামলার (Recruitment Scam) বিচারপ্রক্রিয়া। প্রথম দিন ভার্চুয়াল মাধ্যমে হাজির ছিলেন প্রাক্তন মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। চোখে কালো চশমা, হাসপাতালের বিছানায় শুয়েই আদালতের কার্যক্রমে অংশ নেন তিনি। একই ভাবে ভার্চুয়াল মাধ্যমে হাজির ছিলেন অশোক সাহা, এসপি সিংহ ও প্রসন্ন রায়।
এদিন বিচারক বিশ্বরূপ শেঠের এজলাসে সাক্ষ্য দিলেন SSC-র প্রাক্তন চেয়ারম্যান, যিনি ২০১১ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ওই পদে ছিলেন। সিবিআইয়ের আইনজীবী তাঁকে প্রশ্ন করেন, চেয়ারম্যান হওয়ার আগে তিনি কোথায় ছিলেন? উত্তরে তিনি জানান, তিনি তৃণমূলের শিক্ষা সেলের সভাপতি ছিলেন এবং যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করতেন। ২০১১ সালের ৬ জুন রাজ্যপালের অনুমোদনে তিনি চেয়ারম্যান হন।
নিয়োগ দুর্নীতিতে (Recruitment Scam) মুখ্যমন্ত্রীর নাম ঘিরে বিতর্ক
সিবিআইয়ের আইনজীবী যখন প্রশ্ন করেন, “আপনি কার কথায় চেয়ারম্যান হলেন?”, তখন সাক্ষী জবাব দেন, “CM আমাকে জানান, আমাকে চেয়ারম্যান করা হচ্ছে।” এই মন্তব্যে আপত্তি তোলেন বিবাদী পক্ষের আইনজীবী সঞ্জয় দাশগুপ্ত। তিনি বলেন, এই মামলা থেকে মুখ্যমন্ত্রীর নাম বাদ দেওয়া উচিত। প্রাক্তন চেয়ারম্যান আরও জানান, তাঁকে চার বছরের জন্য নিয়োগ করা হলেও তিনি দু’বছরের মধ্যে পদত্যাগ করেন। তাঁর অভিযোগ, মুকুল রায় ও পার্থ চট্টোপাধ্যায় তাঁকে বেআইনি নিয়োগে (Recruitment Scam) চাপ দিচ্ছিলেন। সরাসরি না হলেও, পার্থের কাছ থেকেও চাপ এসেছে বলে দাবি করেন তিনি।
সিবিআইয়ের আইনজীবীর পর SSC-র প্রাক্তন চেয়ারম্যানকে প্রশ্ন করেন বিবাদী পক্ষের আইনজীবী সঞ্জয়। জানতে চান, তিনি তৃণমূলের ‘এডুকেশন সেল’-এর সভাপতি ছিলেন কি না? এর জবাবে সাক্ষী বলেন, ”তৃণমূলের ‘এডুকেশন সেল’-এর সভাপতি ছিলেন মানিক ভট্টাচার্য। শিক্ষা সেলের সভাপতি ছিলাম আমি।”
উপমহল থেকে চাপ আসার প্রসঙ্গের কথা শুনে বিবাদীপক্ষের আইনজীবী সঞ্জয় দাশগুপ্ত পাল্টা বলেন, এটা সাক্ষীর ব্যক্তিগত অনুভূতি, মামলার সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। তখন বিচারক সরাসরি জানতে চান, “চাপ বলতে? কে চাপ দিল?” জবাবে সাক্ষী বলেন, “বিভিন্ন নেতা, যেমন মুকুল রায়। আর একদিন পার্থ চট্টোপাধ্যায় আমায় তাঁর বাড়িতে ডাকেন।” তবে তিনি জানান, ব্রাত্য বসুর কাছ থেকে কোনও চাপ আসেনি। সঞ্জয় তাঁকে প্রশ্ন করেন, দ্বাদশ আরএলএসটি নিয়ে অভিযোগ ওঠার পর কেন সিবিআই তদন্ত হয়নি? সাক্ষী বলেন, অভিযোগ ছিল না। তখন সঞ্জয় অভিযোগ তোলেন, “আপনি সিবিআইয়ের চাপে বলছেন।” সাক্ষী তা অস্বীকার করেন।
পার্থের আইনজীবী বিপ্লব গোস্বামীও বেশ কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করেন সাক্ষীকে। জিজ্ঞাসাবাদে উঠে আসে, সাক্ষী ২০১৯ সালে বিজেপিতে যোগ দেন এবং ২০২৪ সালে লোকসভা ভোটের ইস্তাহার কমিটিতেও ছিলেন। বিপ্লবের অভিযোগ, রাজনৈতিক প্রভাবেই পার্থর নাম টেনেছেন তিনি। জবাবে সাক্ষী বলেন, “একেবারেই না।” সাক্ষীর এই উত্তরে আইনজীবী বিপ্লব বলেন, ‘আপনার কথা এবং একটি রাজনৈতিক দলের কথায় মিল রয়েছে।’ কোর্টের কাছে মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়েছেন ওই সাক্ষী, এমন অভিযোগ করেন আইনজীবী বিপ্লব। আইনজীবীর এই অভিযোগে সাক্ষী হাসতে শুরু করলে, বিপ্লব বলেন, হাসবেন না। হাসি আদালতের অবমাননা।
আরও পড়ুনঃ আপাতত বন্ধ উচ্ছেদ প্রক্রিয়া, পুজোর আগে স্বস্তি হকারদের, তবে…
আগামী সোমবার শুনানি নিয়োগ মামলার (Recruitment Scam)
শনিবারও বিচারপ্রক্রিয়া চলবে বলে জানা গিয়েছে। সেদিন সাক্ষ্য দিতে পারেন SSC-র আর এক প্রাক্তন আধিকারিক। আগামী সোমবার ফের হবে শুনানি। মোট আটজন সাক্ষীর তালিকা রয়েছে এই মামলায়। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন SSC-র দুই প্রাক্তন চেয়ারম্যান, মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সভাপতির ব্যক্তিগত সহকারী, টেকনিক্যাল অফিসার, এবং এসএসসি-র আঞ্চলিক শাখার প্রাক্তন চেয়ারপার্সন।