বাংলা হান্ট ডেস্কঃ দেখতে দেখতে তিন দিন হয়ে গেল গ্রেফতার হয়েছেন সন্দেশখালির (Sandeshkhali) ‘বেতাজ বাদশা’। সিআইডি হেফাজতে এখন দিন কাটছে শেখ শাহজাহানের (Sheikh Shahjahan)। এদিকে আস্তে আস্তে নিজের ছন্দে ফিরছে সন্দেশখালির মানুষজন। শাহজাহান, শিবু হাজরা, উত্তম সর্দাররা গ্রেফতার হওয়ার পর একটু ‘স্বস্তি’র আশায় রয়েছেন সকলে। কিন্তু সত্যি কি স্বস্তি ফিরবে? সম্প্রতি জনপ্রিয় এক সংবাদমাধ্যমে এই প্রশ্ন তোলেন ওই গ্রামে স্বাস্থ্যের কাজ করা আশাকর্মীরা (Asha Kormi)।
একজন শাহজাহান গ্রেফতার হলেও, আরও দশজন শাহজাহান আছে! তাঁদের ‘রক্তবীজের বংশধর’ তকমাও দিয়েছেন কেউ কেউ। গ্রামের প্রসূতি, গর্ভবতী, সদ্যোজাতদের স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখতে বাড়ি বাড়ি যেতে হয় আশাকর্মীদের। এছাড়া গ্রামের কোনও বাড়িতে যদি উচ্চরক্তচাপ, সুগার কিংবা ‘নন কমিউনিকেবল ডিজিজ’র রোগী থাকে, তাহলে তাঁদের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে আসতে হয় এই কর্মীদেরই। তবে গত প্রায় ২৩ দিন ধরে আন্দোলনের কারণে বিক্ষিপ্তভাবে বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে সেই কাজ।
রীতা মণ্ডল নামের এক আশাকর্মীর কথায়, ‘১৪৪ ধারা চলছে, পুলিশ অহেতুক অনেক মেয়ের নামেই এফআইআর করেছে। সেই ভয়ে আমাদের অনেকেই রাস্তায় বেরোতে পারিনি। তাতে কিছুটা তো সমস্যা হয়েছে বটেই’। তবে রাস্তায় বেরোতে না পারলেও ফোনের মাধ্যমে অন্তঃসত্তা, প্রসূতিদের সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রেখেছিলেন তাঁরা। দরকার পড়লে তাঁদের বাড়ি এসে ওষুধ নিয়ে গিয়েছেন গর্ভবতী, প্রসূতিদের বাড়ির লোকজন।
আশাকর্মীদের কথায়, প্রসূতি, অন্তঃসত্ত্বা কিংবা বয়ঃসন্ধির মেয়েদের নিয়ে যে সকল জমায়েত করা হতো, তার আগে ‘দাদা’দের এই বিষয়ে জানাতে হতো। কারণ তাঁদের পাঠানো একজন লোক সেই জমায়েতে উপস্থিত থাকতো। এমনকি করোনার প্রতিষেধকের সময় রোজ সকালে উত্তম-শিবুর লোকজন টিকা কেন্দ্রে লিস্ট পৌঁছে দিত। সেই লিস্টে যাঁদের নাম থাকতো তাঁদের আগে টিকা দিতে হতো। একজন টোটোচালক এই বিষয়ে জানান, তিনি নিজে ৫০০ টাকা দিয়ে সেই তালিকায় নাম তুলেছিলেন।
গত মাস খানেক আন্দোলনের কারণে বিক্ষিপ্তভাবে স্বাস্থ্য পরিষেবা ব্যাহত হয়েছে একথা ঠিক। তবে প্রায় প্রত্যেক মাসে কমপক্ষে ১৫-২০ দিন রীতিমতো ভয় দেখিয়ে মিটিং-মিছিলে উপস্থিত হওয়ার একটা রীতি তৈরি করেছিল শাহজাহান এবং তাঁর দলবল। এতে আরও বেশি ক্ষতি হয়েছে বলে মত তাঁদের। এই বিষয়ে এক আশাকর্মী জানান, ডাক পড়লে যে কাজই থাকুক না কেন হাজিরা দিতেই হতো। দিদি আমাদের টাকা দিচ্ছে, পার্টির কাজে ডাক পড়লে আসতে হবে, একথা বলতেন ওঁরা। দীর্ঘদিন এই রেওয়াজ চলেছে। এতে স্বাস্থ্য পরিষেবা অনেক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
আরও পড়ুনঃ লাগবে না একপয়সা, এবার বিনামূল্যে মিলবে এই পরিষেবা! কলকাতা পুরসভার ঘোষণায় খুশি আমজনতা
সন্দেশখালি ২ ব্লকের আটটি অঞ্চল মিলিয়ে বর্তমানে প্রায় ২৫০ অন্তঃসত্ত্বা মহিলা আছেন। গত ফেব্রুয়ারি মাসে প্রায় ৫০-৬০টি শিশুর জন্ম হয়েছে। তবে সন্তান প্রসবের পর খুলনা গ্রামীণ হাসপাতাল থেকে অধিকাংশ প্রসূতিই বাবার বাড়ি চলে গিয়েছেন। বসিরহাট স্বাস্থ্য জেলার এক আধিকারিক বলেন, মাস খানেক ধরে এই সমস্যা চলছে। এবার ভেবেছিলেন সমস্যা হয়তো মিটে যাবে। তবে এখন আশাকর্মীরা ফের কর্মবিরতি শুরু করেছেন। এখন নাহয় মহিলাদের আন্দোলনের জেরে স্বাস্থ্য পরিষেবা ব্যাহত হয়েছে। কিন্তু এতদিন কেন বারবার বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছিল? এই প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। একজন আশাকর্মী এই বিষয়ে বলেন, ‘সুস্বাস্থ্য কেন্দ্র করার জন্য জমি পাওয়া যাচ্ছে না। এদিকে দেখুন, ওই একচিলতে ঘর লাগোয়া এত বড় মাঠের জমি শাহজাহানের দখল করে বসেছিল’। প্রসঙ্গত, সন্দেশখালি ২ ব্লকের ৪২টি উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রকেই জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের টাকায় সুস্বাস্থ্য কেন্দ্রে পরিণত করার কথা। বছর খানেক আগেই সেই টাকা বরাদ্দ হয়ে গিয়েছে। তবে উত্তর হাটগাছা ছাড়া আর কোথাও সেই কাজ হয়নি। কেন? এই বিষয়ে ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক কৌশিক মণ্ডল বলেন, ‘২৭টি কেন্দ্রের কাজ পঞ্চায়েত সমিতির করার কথা। তবে কী হয়েছে সেটা জানি না’।