জল আর রক্ত একসঙ্গে বইতে পারে না’ মোদী সরকারের সিন্ধু পরিকল্পনা কি চাপে ফেলবে পাকিস্তানকে

Published on:

Published on:

বাংলাহান্ট ডেস্ক: উত্তর ভারতের (India) দীর্ঘস্থায়ী জলের সংকট মোকাবিলায় কেন্দ্রীয় সরকার বড় পদক্ষেপ নিতে চলেছে। পাকিস্তানের সঙ্গে সিন্ধু জল চুক্তি স্থগিত করার পর এই প্রথমবার সরকার কৌশলগতভাবে সিন্ধু নদীর জল ব্যবস্থাপনায় ব্যাপক পরিবর্তনের পরিকল্পনা করছে। সূত্র অনুযায়ী, লক্ষ্য হল ২০২৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগেই এই প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু করা। গত শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে মন্ত্রিসভার শীর্ষ বৈঠকে এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। বৈঠকে জানানো হয়, সিন্ধু নদীকে বিয়াস নদীর সঙ্গে যুক্ত করতে ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি টানেল নির্মাণের ডিটেইলড প্রজেক্ট রিপোর্ট (ডিপিআর) প্রস্তুত করছে লারসেন অ্যান্ড টুবরো। আশা করা হচ্ছে আগামী বছরের মধ্যেই এই রিপোর্ট সম্পূর্ণ হবে। পাশাপাশি ১১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি খাল নির্মাণের কাজের অগ্রগতি সম্পর্কেও পর্যালোচনা করা হয়, যা সম্পূর্ণ হলে সিন্ধুর জল সরাসরি উত্তর ভারতের রাজ্যগুলোতে পৌঁছবে।

ভারতের জলচুক্তি নিয়ে চাপে পাকিস্তান (India)

১৯৬০ সালে বিশ্বব্যাঙ্কের মধ্যস্থতায় ভারত (India) ও পাকিস্তানের মধ্যে সিন্ধু জল চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। সেই চুক্তি অনুযায়ী সিন্ধু নদীর জলের একটি বড় অংশ পাকিস্তান ব্যবহার করে এসেছে। কিন্তু ২০২৫ সালের ২২ এপ্রিল পহেলগাঁও জঙ্গি হামলার পর ভারত সরকার চুক্তি স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নেয়। সেই সময়েই মোদী সরকার স্পষ্ট বার্তা দেয়—“জল আর রক্ত একসঙ্গে বইতে পারে না।” এর পর থেকেই ভারতের ভাগের জল সর্বাধিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে কেন্দ্রীয় সরকার সমন্বিত পরিকল্পনা হাতে নেয়।

আরও পড়ুন: বড় ধাক্কা ইউনূস সরকারকে, বাংলাদেশিদের ভিসা দেওয়া বন্ধ করল UAE! নেপথ্যে কী কারণ?

প্রকল্পটির সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং অংশ হল ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ টানেল নির্মাণ। পাহাড়ি শিলা পরীক্ষা করে নির্ধারণ করা হচ্ছে কোথায় সরাসরি টানেল খোঁড়া যাবে আর কোথায় পাইপলাইন বসানো হবে। এজন্য আধুনিক টানেল বোরিং মেশিন ও রক শিল্ড প্রযুক্তি ব্যবহারের পরিকল্পনা রয়েছে। টানেলটি জম্মু ও কাশ্মীরের কাঠুয়া জেলার উঝ মাল্টিপারপাস প্রজেক্টের সঙ্গে যুক্ত হবে। এর মাধ্যমে রাভির উপনদী উঝ নদী থেকে জল বিয়াস বেসিনে পাঠানো সম্ভব হবে। টানেল নির্মাণ সম্পন্ন হলে রাভি-বিয়াস-সতলজ নদী ব্যবস্থা সিন্ধু বেসিনের সঙ্গে যুক্ত হবে এবং ভারতের জলের সর্বাধিক ব্যবহার নিশ্চিত হবে (India)।

আনুমানিক ৪,০০০ থেকে ৫,০০০ কোটি টাকা ব্যয়ে তৈরি হতে চলা এই প্রকল্প শেষ হতে সময় লাগবে প্রায় ৩-৪ বছর। সরকারের আশা ২০২৮ সালের মধ্যেই কাজ সম্পূর্ণ হবে। এর ফলে রাজস্থানের শুষ্ক অঞ্চলে, বিশেষ করে ইন্দিরা গান্ধী ক্যানালের মাধ্যমে কৃষিকাজে বিপ্লব ঘটবে। পাশাপাশি জম্মু ও কাশ্মীর, হরিয়ানা, দিল্লি এবং পাঞ্জাবের মানুষ পানীয় জল ও সেচে সরাসরি উপকৃত হবেন। শুধু তাই নয়, চেনাব নদীকে রাভি-বিয়াস-সতলজ ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত করার পরিকল্পনাও রয়েছে, যার মাধ্যমে সরাসরি শ্রীগঙ্গানগর পর্যন্ত জল পৌঁছবে (India)।

India is planning big for Sindhu River.

আরও পড়ুন: ষষ্ঠ তফসিলের দাবিতে অশান্ত লাদাখ, আসলে কী এই ষষ্ঠ তফসিল? এর আওতায় এলে কি কি সুবিধা পাবে লাদাখবাসী ?

কৃষি ছাড়াও দিল্লি, পাঞ্জাব, হরিয়ানা এবং রাজস্থানে পানীয় জলের চাহিদা মেটাতে প্রকল্পটি বিশেষ ভূমিকা নেবে। এর ফলে ভারতের ভাগের অতিরিক্ত জল আর পাকিস্তানে চলে যাবে না। একদিকে দেশের জল নিরাপত্তা শক্তিশালী হবে, অন্যদিকে জলবায়ু পরিবর্তন ও অনিয়মিত বৃষ্টিপাতের সমস্যার সমাধানও সহজ হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে উত্তর ভারতের মোট ১৩টি খাল ব্যবস্থা আরও মজবুত হবে। শুক্রবারের বৈঠকে আরও জানানো হয়েছে, জম্মুর রনবির ক্যানাল-এর দৈর্ঘ্য ৬০ কিমি থেকে বাড়িয়ে ১২০ কিমি করারও পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে (India)।