বাংলা হান্ট ডেস্ক: অবশেষে পুজো (Durga Puja 2025) উপস্থিত! বাঙালির উৎসবের আবহে কাশফুল ও ঢাকের আওয়াজের সঙ্গে ঠাকুর দেখার অপেক্ষা; সবকিছুই মিলেমিশে একাকার। বঙ্গের এই উৎসব গঙ্গা পেরিয়ে ছুঁয়েছে টেমসের তীর। হাজার মাইল দূরে টেমসের বাঙালির জমানো আবেগের পুরোটাই শারদ উৎসবে সীমান্তহীন। এমতাবস্থায়, ২০২৫-এর শারদোৎসব রোমাঞ্চ আর নস্টালজিয়ায় ভরপুর। কারণ, বাঙালির চিরকালীন মহানায়ক উত্তম কুমারের জন্মশতবর্ষের আবহ। তাতেই মেতেছে লন্ডনের শারদ উৎসব।এবারের স্পেশালিটি ওয়াল অফ ফেম। ভাবুন তো— ১৫০ ফুট লম্বা দেওয়ালজুড়ে টাঙানো “সপ্তপদী”, “নায়ক”, “চৌরঙ্গী”, “অগ্নি পরীক্ষা” আর আরও কত ছবির পোস্টার! সামনে দাঁড়ালেই যেন মনে হবে সিনেমার টাইম মেশিনে উঠে পড়েছি। সঙ্গে বাজবে শচীন দেব এবং রাহুল দেববর্মনের গান “যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে….”, এর থেকে আর কী চাই!
লন্ডনের দুর্গোৎসবে (Durga Puja 2025) এবার মহানায়ক উত্তমের প্রতি বিশেষ শ্রদ্ধার্ঘ্য:
এবারের বেঙ্গল হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের পুজোর (Durga Puja 2025) থিম এটাই। অনেকদিন ধরেই লন্ডনে পুজোর রং ছড়াচ্ছে বেঙ্গল হেরিটেজ ফাউন্ডেশন। চলতি বছর গানার্সবারি পার্ক স্পোর্টস হাব একেবারে বদলে যাবে কলকাতার পাড়ার পুজোয়। ভেতরে ঢুকলেই চোখে পড়বে চন্দননগরের আলোকসজ্জা। মনে হবে, পশ্চিম লন্ডন নয়, যেন শ্যামবাজারে হাঁটছি। এদিকে, বাঙালির থাকবে অথচ খাওয়া দাওয়া হবে না এমনটা তো হয় না। মাঠের স্টলগুলোতে লাইন পড়বে রোল, ফুচকা, বিরিয়ানি, জিলিপি, রসগোল্লার জন্য। খেতে খেতে কেউ বলবেই—“আরে, এ তো একেবারে কলেজ স্ট্রিটের ফুচকা!” খাওয়া মানেই আবার আড্ডা। কলকাতার গল্প, শৈশবের পুজো, প্রথম প্রেম সব উঠে আসবে একে একে।
কলকাতা থেকে পুরোহিত উড়িয়ে আনা হচ্ছে মণ্ডপে। নবপত্রিকা স্নান থেকে সিঁদুরখেলা সব কিছু হবে নিয়ম মেনে। ঢাক, শঙ্খ আর ধুনুচির ধোঁয়ায় লন্ডনের আকাশ কেঁপে উঠবে, পরিবেশ হয়ে উঠবে মোহনীয়। কে বলবে আজ শহর টেমসের তীর, মনে হবে যেন গঙ্গার ঘাটেই দাঁড়িয়ে আছি। আসলে, লন্ডনের শারদ উৎসব মানেই বিশাল সাংস্কৃতিক জমজমাট।
নাচ, গান, ঢাকিদের প্রতিযোগিতা, ধুনুচি নাচ, তার সঙ্গে বিশেষ সঙ্গীত সন্ধ্যা—যেখানে গাওয়া হবে মহানায়কের ছবির গান। আর থাকবে আন্তর্জাতিক পুরস্কারপ্রাপ্ত শারদীয়া পত্রিকার (Durga Puja 2025) প্রকাশ। যাকে বলে কলকাতা ফেস্টিভাল। এই প্রসঙ্গে উৎসবের সভাপতি কৌশিক চ্যাটার্জি বলছিলেন, “এই বছরের লন্ডনের শারদ উৎসব ইউরোপে সবচেয়ে বড় উদযাপন হবে। সবাইকে নিয়ে এই উৎসবের আনন্দ ভাগ করে নেব।”
এবার আসি আর এক কাহিনিতে। লন্ডনে যে দুর্গাপুজোর এত রঙ, তার শুরুটা হয়েছিল অনেক আগে, ২০০০ সালে। কয়েকজন ডাক্তার—ড. চিত্ত চৌধুরী, ড. অরুন সরকার, ড. ভির নেভরাজানি, জয়ন্তী নেভরাজানি, নির্মল লালা, ড. দাস, গৌতম চৌধুরী, ড. সুনীল গাঙ্গুলি এবং ড. সুবোধ চ্যাটার্জি ভাবলেন, কেন লন্ডনের বুকেও দুর্গাপুজো হবে না? ব্যস, শুরু হল ডাক্তারদের পুজো। শুরুতে সব দায়িত্ব সামলাতেন ড. অরুন সরকার—চিকিৎসার ফাঁকে ভোগের খিচুড়ি, মণ্ডপ সাজানো, ঢাকের বন্দোবস্ত—সবকিছুই। ধীরে ধীরে আরও অনেকেই জড়ো হতে লাগলেন। আর সেই ছোট্ট উদ্যোগ এখন ২৬ বছরের এক গৌরবময় ইতিহাস। আজ এটা বেঙ্গলি কালচারাল অ্যান্ড সোশ্যাল ক্লাব এর পুজো (Durga Puja 2025) যেখানে প্রতিবছর হাজার হাজার মানুষ আসেন।
আরও পড়ুন: “মাথায় রাখতে হবে…”, এশিয়া কাপের ফাইনালে ভারতকে হারাতে পাকিস্তানকে বিশেষ পরামর্শ শোয়েব আখতারের
ড. চিত্ত চৌধুরী জানিয়েছেন, “আমাদের পুজো (Durga Puja 2025) শুধু দেবীর আরাধনা নয়, আমাদের একসঙ্গে থাকার শক্তি। আলাদা পেশায় থেকেও আমরা দুর্গাপুজোতে একসূত্রে বাঁধা।” আসলে, দুর্গোৎসব শুধু বাঙালিদের নয়। লন্ডনের বহুসাংস্কৃতিক সমাজও এতে মিশে যায় বারংবার। বিদেশিরা এসে খিচুড়ি-লাবড়ার স্বাদ নেয়, ধুনুচির নাচ দেখে অবাক হয়। বাচ্চারা শিখে যায় নিজেদের ঐতিহ্যের গল্প, তরুণরা মেতে ওঠে ঢাকের তালে, আর প্রবীণরা খুঁজে পান কলকাতার স্মৃতির ঝলক। সত্যি বলতে কী, লন্ডনের শারদ উৎসব মানেই এক টুকরো কলকাতা। একদিকে উত্তম কুমারের ওয়াল অফ ফেমে নস্টালজিয়ার বন্যা, অন্যদিকে ডাক্তারদের পুজোয় আড্ডা আর ভোগের গন্ধ; সব মিলিয়ে টেমসের ধারে তৈরি হয় নতুন এক শ্যামবাজার। শরৎ মানেই তো এভাবেই ফিরে আসে গানে-গল্পে-আলোয় একসঙ্গে থাকার আনন্দ।