আইনের ঊর্ধ্বে তৃণমূল? বারুইপুরে পৌরপ্রধান পরিবারের বিরুদ্ধে তারুণজ্যোতি তিওয়ারির বিস্ফোরক অভিযোগ

Published on:

Published on:

Tarunjyoti Tiwari slams TMC leader’s family for flouting wildlife law in Baruipur

বাংলা হান্ট ডেস্কঃ রাজ্যে যখন বারবার আইনের শাসন নিয়ে প্রশ্ন উঠছে, তখন আরও একবার বিতর্কের কেন্দ্রে তৃণমূল কংগ্রেস। আইনজীবী তরুণজ্যোতি তিওয়ারি সম্প্রতি অভিযোগ করেছেন, বারুইপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান শক্তি রায় চৌধুরীর পরিবার বন্যপ্রাণ সুরক্ষা আইন ভেঙে সংরক্ষিত পাখি নীলকণ্ঠ (Indian Roller) কে বেআইনিভাবে ধরে প্রথার নামে অমানবিক আচরণ করেছে।

আইনের ঊর্ধ্বে তৃণমূল? প্রশ্ন তরুণজ্যোতির (Tarunjyoti Tiwari)

এই প্রসঙ্গে তরুণজ্যোতি তিওয়ারি (Tarunjyoti Tiwari) ফেসবুক পোস্টে প্রশ্ন তুলে লিখেছেন, “আইনের ঊর্ধ্বে তৃণমূল? বারুইপুরে আইন ভাঙলো বারুইপুর মিউনিসিপালিটি চেয়ারম্যান শক্তি রায় চৌধুরীর পরিবার এবং অভিযোগ হওয়ার পরেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা হলো না।”

তরুণজ্যোতি তিওয়ারি (Tarunjyoti Tiwari) আরও লেখেন যে, “পশ্চিমবঙ্গে যখন আইনের শাসন নিয়ে বারবার প্রশ্ন উঠছে, তখন আরও একবার ক্ষমতার দম্ভ এবং আইন অমান্যের এক নির্লজ্জ প্রদর্শনী দেখল বারুইপুর। দেশের বন্যপ্রাণ সুরক্ষা আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে, বিজয়া দশমীর প্রাচীন প্রথার নামে এক নিরীহ, সংরক্ষিত পাখি নিয়ে অমানবিক আচরণের অভিযোগ উঠেছে বারুইপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান শক্তি রায় চৌধুরীর পরিবারের বিরুদ্ধে। তৃণমূল কংগ্রেসের ছত্রছায়ায় থাকার কারণেই কি এই ঔদ্ধত্য?”

নীলকন্ঠ পাখি প্রসঙ্গে তরুণজ্যোতি তিওয়ারি (Tarunjyoti Tiwari) বলেন, “ভারতীয় নীলকন্ঠ (Indian Roller), যা বাংলার ঐতিহ্যের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত, বন্যপ্রাণ সুরক্ষা আইন, ১৯৭২ অনুযায়ী একটি সংরক্ষিত পাখি। এই আইন অনুসারে, নীলকন্ঠ পাখিকে ধরা, আটকে রাখা বা প্রদর্শন করা একটি দণ্ডনীয় অপরাধ। একসময় বিজয়া দশমীর দিনে বাংলার বিভিন্ন রাজবাড়ি ও জমিদার বাড়িতে এই পাখি ওড়ানোর প্রথা ছিল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এবং বন্যপ্রাণ সুরক্ষার তাগিদে সচেতন মানুষ ও প্রতিষ্ঠানগুলি এই প্রথা থেকে সরে এসেছে। উদাহরণস্বরূপ, শোভাবাজার রাজবাড়ির মতো ঐতিহ্যবাহী পরিবারও আজ মাটির নীলকন্ঠ ভাসিয়ে তাদের পরম্পরা রক্ষা করে। এটি আইনকে সম্মান জানানোর এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।”

এরপর বারুইপুর রায়চৌধুরী বাড়ির বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে তরুণজ্যোতি তিওয়ারি (Tarunjyoti Tiwari) ফেসবুকে লেখেন, “বারুইপুরের রায়চৌধুরী পরিবার যেন নিজেদের আইনের ঊর্ধ্বে মনে করে। বছরের পর বছর ধরে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠছে যে, তারা এই বেআইনি প্রথা চালিয়ে যাচ্ছে। সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো, এই পরিবারেরই অন্যতম সদস্য হলেন শক্তি রায় চৌধুরী, যিনি বারুইপুর পৌরসভার বর্তমান চেয়ারম্যান এবং প্রভাবশালী তৃণমূল নেতা। যার নিজের কাঁধে আইন রক্ষা এবং পৌরসভাকে সঠিকভাবে পরিচালনা করার দায়িত্ব, তার পরিবারের বিরুদ্ধেই যদি আইন ভাঙার এমন গুরুতর অভিযোগ ওঠে, তাহলে সাধারণ মানুষ কার উপর আস্থা রাখবে?”

এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, তৃণমূল কংগ্রেসের প্রভাবশালী নেতা এবং পৌরপ্রধান হওয়ার সুবাদেই রায়চৌধুরী পরিবার এই কাজ করার সাহস পাচ্ছেন। তাঁদের কথায়, ক্ষমতার দম্ভে আইন যেন তুচ্ছ হয়ে গিয়েছে। অভিযোগ দায়ের হওয়ার পরও বন দপ্তর বা পুলিশের পক্ষ থেকে কোনও কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়ায় মানুষের ক্ষোভ আরও বেড়েছে। স্থানীয়দের প্রশ্ন, “শাসক দলের নেতা হলে কি আইনের বাইরে থাকা যায়? পুলিশ ও বনবিভাগ কি রাজনৈতিক চাপে নীরব?” এই প্রশ্নই এখন ঘুরছে বারুইপুরের অলিগলিতে।

অন্যদিকে, সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল সেই ছবিতে দেখা যাচ্ছে একটি সংরক্ষিত নীলকণ্ঠ পাখিকে খাঁচায় বন্দি অবস্থায়, যা দেখে বহু মানুষ ব্যথিত। অনেকের মতে, এটি শুধুমাত্র একটি পুরনো প্রথার পুনরাবৃত্তি নয়, বরং ক্ষমতার প্রকাশ ও আইনের প্রতি প্রকাশ্য অবমাননা। সমাজের একাংশের মন্তব্য, “একটি নিরীহ পাখিকে ঐতিহ্যের নামে কষ্ট দেওয়া কোনও সভ্য সমাজের পরিচয় হতে পারে না।”

Tarunjyoti Tiwari slams TMC leader’s family for flouting wildlife law in Baruipur

আরও পড়ুনঃ আরও বেশি জল ছাড়ছে DVC, হাওড়া-হুগলি-সহ নদী সংলগ্ন এলাকা প্লাবনের আশঙ্কা

উল্লেখ্য, তরুণজ্যোতি তিওয়ারি (Tarunjyoti Tiwari) এই ঘটনায় প্রতিবাদ জানিয়ে স্পষ্ট ভাবে বলেন, “বিশ্বাস বা প্রথার স্থান আইনের ওপরে হতে পারে না। একটি নিরীহ পাখির উপর এই অত্যাচার বন্ধ হোক। আমরা আশা করব, প্রশাসন কোনো রাজনৈতিক চাপের কাছে মাথা নত না করে নিজেদের দায়িত্ব পালন করবে এবং দোষীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। বাংলার সংস্কৃতি ঐতিহ্যের নামে এমন বর্বরতাকে প্রশ্রয় দেয় না।”

তরুণজ্যোতি তিওয়ারির পোস্টিটি  দেখতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ Tarunjyoti Taiwari