বাংলাহান্ট ডেস্ক: ভারত জ্বালানি খাতে এক নতুন অধ্যায় লিখতে চলেছে (Hydrogen Highways)। পেট্রোল ও ডিজেলের উপর নির্ভরতা কমিয়ে পরিচ্ছন্ন জ্বালানির দিকে এগিয়ে যেতে কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক মন্ত্রী নিতিন গড়করি ভারতের প্রথম ‘হাইড্রোজেন হাইওয়ে’ শুরু করার ঘোষণা দিয়েছেন। এটি কেবল একটি প্রযুক্তিগত প্রকল্পের সূচনা নয়, বরং ভারতের শক্তি নিরাপত্তা, পরিবেশ সুরক্ষা এবং অর্থনৈতিক সক্ষমতার দিকে এক দূরদর্শী পদক্ষেপ।
চালু হতে চলেছে ভারতের প্রথম হাইড্রোজেন হাইওয়ে (Hydrogen Highways):
বিশ্ব হাইড্রোজেন ইন্ডিয়া কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখতে গিয়ে গড়করি জানান, ভবিষ্যতের জ্বালানি হিসেবে হাইড্রোজেনকে ধরা হচ্ছে এবং বিশ্বের মধ্যে প্রথমবার এত বড় আকারে হাইড্রোজেন ট্রাকের পরীক্ষা ভারতে শুরু হচ্ছে। এই পরিকল্পনার জন্য সরকার ৫০০ কোটি টাকার বাজেট বরাদ্দ করেছে। পাঁচটি বড় শিল্পগোষ্ঠীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, যারা ৩৭টি হাইড্রোজেন ট্রাক বিভিন্ন রুটে চালাবে এবং এর জন্য ৯টি হাইড্রোজেন রিফুয়েলিং স্টেশন তৈরি করা হবে। এই কাজের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে টাটা মটরস, অশোক লেল্যান্ড, ভলভো, বিপিসিএল, আইওসিএল, এনটিপিসি ও রিলায়েন্সের মতো বড় কোম্পানিগুলি (Hydrogen Highways)।
আরও পড়ুন: করোনার সময়ে ২,০০০ টাকা দিয়ে শুরু ব্যবসা! আজ ৩০ লক্ষের টার্নওভার, চমকে দেবে জিতেন্দ্রর কাহিনি
এই প্রকল্পকে শুধুমাত্র ছোট পরিসরে সীমাবদ্ধ রাখা হচ্ছে না, বরং সরাসরি দেশের দশটি প্রধান মালবাহী করিডর বা ফ্রেইট করিডরে এটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। দিল্লি, মুম্বই, পুনে, আহমেদাবাদ, কোচি, বিশাখাপট্টনম ও তিরুবনন্তপুরমের মতো বড় শহর এই উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত। এর মাধ্যমে প্রথমবার ভারত ‘হাইড্রোজেন হাইওয়ে’-এর অভিজ্ঞতা পাবে এবং দীর্ঘমেয়াদে মাল পরিবহনকে আরও পরিচ্ছন্ন ও টেকসই করে তুলবে (Hydrogen Highways)।
নিতিন গড়করি জানিয়েছেন, এই উদ্যোগ কেবল শুরু। ভারতের প্রকৃত লক্ষ্য ২০৩০ সালের মধ্যে ৫ মিলিয়ন টন গ্রিন হাইড্রোজেন উৎপাদন করা। এই লক্ষ্য পূরণ হলে প্রায় ছয় লক্ষ নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে এবং প্রায় আট লক্ষ কোটি টাকার বিনিয়োগ আসবে। পাশাপাশি, ভারতের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ কাঁচা তেলের আমদানির ওপর নির্ভরতা অনেকাংশে কমে যাবে। বর্তমানে ভারত তার মোট চাহিদার ৮৭ শতাংশ তেল বিদেশ থেকে আমদানি করে এবং এর জন্য প্রতিবছর প্রায় ২২ লক্ষ কোটি টাকা খরচ হয় (Hydrogen Highways)।
যদি হাইড্রোজেন শক্তি প্রকল্প সফল হয়, তবে প্রতিবছর প্রায় এক লক্ষ কোটি টাকার সাশ্রয় সম্ভব হবে। একইসঙ্গে পরিবেশের দিক থেকেও এটি এক বিশাল পদক্ষেপ হবে। অনুমান করা হচ্ছে, ২০৫০ সালের মধ্যে ৩.৬ গিগাটন কার্বন নিঃসরণ কমবে। গড়করি এটিকে তুলনা করে বলেন, এটি যেন এক হাজার কোটি গাছ লাগানোর সমান (Hydrogen Highways)।
আরও পড়ুন: ক্রমশ উত্তপ্ত হচ্ছে পরিস্থিতি! বিদ্রোহের আগুনে জ্বলছে PoK, পাকিস্তান থেকে মিলবে “আজাদি”?
ভারতকে জ্বালানি ক্ষেত্রে আত্মনির্ভর করতে কৃষি খাতকেও এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত করার প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি। তাঁর মতে, কৃষকদের সহায়তায়ও গ্রিন হাইড্রোজেন তৈরি করা সম্ভব। এতে কৃষকের আয় বৃদ্ধি পাবে, পাশাপাশি দেশ শক্তি উৎপাদনে আরও স্বনির্ভর হবে। গড়করি জোর দিয়ে বলেছেন, ভারত কেবল জ্বালানির ভোক্তা নয়, বরং উৎপাদক, উদ্ভাবক এবং রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে আবির্ভূত হবে (Hydrogen Highways)।
এই ঘোষণা শুধু একটি প্রকল্পের সূচনা নয়, বরং ভারতের জ্বালানি খাতের ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা। এটি প্রমাণ করছে যে, পরিচ্ছন্ন শক্তি ও উদ্ভাবনের পথে হাঁটতে ভারত বিশ্বমঞ্চে অগ্রণী ভূমিকা নিতে প্রস্তুত (Hydrogen Highways)।