বিজ্ঞাপনই বদলে দিল জীবন! গয়না বন্ধক রেখে শুরু করেন ব্যবসা, এখন ২৫ লক্ষ টাকা আয় রোহিনীর

Published on:

Published on:

Rohini Patil's Success Story will amaze you.

বাংলাহান্ট ডেস্ক: মহারাষ্ট্রের সাতারার রোহিণী প্রকাশ পাটিল আজ গোটা অঞ্চলের অনুপ্রেরণা (Success Story) হয়ে উঠেছেন। এক সময় যিনি ঘরের কাজ ও খেতের শ্রমের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিলেন, তিনিই আজ নিজ পরিশ্রমে ২৫ লক্ষ টাকার বার্ষিক টার্নওভারের উদ্যোক্তা। রোহিণীর জীবনে মোড় আসে একদিন, যখন তিনি সংবাদপত্রে একটি বিজ্ঞাপন দেখেন— মধুচাষ সম্পর্কিত প্রশিক্ষণের আহ্বান। সেই ছোট্ট বিজ্ঞাপনই তাঁর জীবনে এক নতুন দিগন্ত খুলে দেয়।

রোহিনীর মধুর সাফল্যের কাহিনি (Success Story)

২০১৪ সালের এপ্রিলে রোহিণী ‘খাগ্রাম শিল্প প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান’-এ পাঁচ দিনের বিশেষ প্রশিক্ষণ নেন। গ্রামের আরও কয়েকজন মহিলাকে সঙ্গে নিয়ে তিনি মধু উৎপাদন ও মৌমাছি পালনের কৌশল শিখে ফেলেন। প্রশিক্ষণ শেষে ১৫ জন মিলে মাত্র ৫,০০০ টাকার পুঁজি নিয়ে একটি স্বনির্ভর গোষ্ঠী তৈরি করা হয়, কিন্তু কিছুদিন পর সেটি ভেঙে যায়। বাকি সদস্যদের টাকা ফেরত দিয়ে রোহিণী একাই এগিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তাঁর হাতে বিনিয়োগ করার মতো টাকা ছিল না, তাই নিজের গয়না বন্ধক রেখে তিনি ১.৫ লক্ষ টাকার ঋণ তোলেন এবং ২০১৭ সালে ৩৫টি মৌমাছির বাক্স দিয়ে কাজ শুরু করেন (Success Story)।

আরও পড়ুন:ফের হামলার সম্মুখীন জাফার এক্সপ্রেস! বিস্ফোরণে একাধিক কামরা লাইনচ্যুত, উত্তাল পাকিস্তান

শুরুর দিনগুলো সহজ ছিল না। প্রথম ব্যাচের বাক্সগুলির অধিকাংশ মৌমাছিই উড়ে যায়। হাতে আসে মাত্র ৮০ কিলো মধু, যা তিনি ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেন। কিন্তু রোহিণী হাল ছাড়েননি। প্রশিক্ষণে শেখা পদ্ধতি অনুসারে তিনি নতুন করে মৌমাছি সংগ্রহ করে বাক্সে বসান। পরে এনজিও ‘ধর্ম লাইফ’-এর সহযোগিতায় তিনি প্যাকেজিং ও ব্র্যান্ডিং শেখেন এবং নিজের পণ্যের নাম রাখেন ‘ফরেস্ট হানি’। তাঁর মধু বিশেষ কারণ এটি পশ্চিমঘাটের কোয়না বাঁধ সংলগ্ন জঙ্গলের জৈব-বৈচিত্র্যময় পরিবেশে উৎপাদিত। সেখানে জামেরা, হিরদা ইত্যাদি ঔষধি গাছপালা থাকায় এই মধুতে প্রাকৃতিক ও ঔষধি গুণ রয়েছে (Success Story)।

অল্পদিনের মধ্যেই রোহিণীর ব্যবসা ফুলে-ফেঁপে ওঠে। বর্তমানে তাঁর কাছে রয়েছে ১১২টি মৌচাক বাক্স, যেগুলি থেকে বছরে প্রায় ৮৮০ থেকে ৯০০ কিলো মধু পাওয়া যায়। প্রতি কিলো মধু তিনি ১,২০০ টাকায় সরাসরি ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করেন। তাঁর পণ্যের এতই চাহিদা যে, তাঁকে পাইকার বা খুচরো বিক্রেতার কাছে যেতে হয় না— ক্রেতারাই এসে কিনে নিয়ে যান। শুধু মধু বিক্রি নয়, তিনি পরাগায়ণ (পলিনেশন) সেবার জন্যও বাক্স বিক্রি করেন, প্রতিটি ৭,৫০০ টাকায়, যা থেকে অতিরিক্ত আয় হয় (Success Story)।

Rohini Patil's Success Story will amaze you.

আরও পড়ুন:‘বন্যা সামলাবে না গ্রেফতার করবে?’ নাগরাকাটায় খগেন মুর্মুর উপর হামলায় ঘটনায় ‘সাফাই’ কল্যাণের

আজ রোহিণী শুধু একজন সফল (Success Story) উদ্যোক্তা নন, তিনি একজন প্রশিক্ষকও। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে যুক্ত থেকে তিনি মধুচাষ প্রশিক্ষণ দেন। সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে তিনি প্রাকৃতিক মৌচাক থেকে মৌমাছি ধরে বাক্সে রাখেন এবং এপ্রিল-মেতে বছরে দু’বার মধু সংগ্রহ করেন। মে থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে বাক্স পরিস্কার ও প্রশিক্ষণ দেওয়ায় সময় কাটান। ভবিষ্যতে তিনি জৈব পণ্য ও মধু বিক্রির জন্য একটি সুপারমার্কেট খুলতে চান, সৌরশক্তিতে শাকসবজি শুকিয়ে সংরক্ষণ করবেন এবং জৈব চাষও শুরু করার পরিকল্পনা নিয়েছেন। রোহিণী প্রকাশ পাটিলের এই গল্প শুধুমাত্র একটি গ্রামের মহিলার সাফল্যের কাহিনি নয়, বরং এটি প্রমাণ করে— দৃঢ় ইচ্ছাশক্তি, পরিশ্রম ও সাহস থাকলে যে কোনো বাধা জয় করা যায়। তাঁর জীবনের এই “মধুর সাফল্য” আজ সারা দেশের নারীদের জন্য এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।