বিচ্ছেদের পর সন্তানকে নতুন সঙ্গী ‘বাবা-মা’ বলতে বাধ্য করতে পারবে না, নির্দেশ কলকাতা হাইকোর্টের

Published on:

Published on:

Calcutta High Court Sets Post-Divorce Parenting Guidelines

বাংলা হান্ট ডেস্কঃ বিচ্ছেদের পর সন্তানদের ভবিষ্যৎ ও মানসিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বড় নির্দেশ দিল কলকাতা হাই কোর্ট (Calcutta High Court)। আদালত শুক্রবার ‘চাইল্ড অ্যাকসেস অ্যান্ড কাস্টডি গাইডলাইন্স: পেরেন্টিং প্ল্যান 2025’ প্রকাশ করেছে। গাইডলাইনে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, সন্তানকে বাবা-মায়ের নতুন জীবনসঙ্গীকে ‘বাবা’ বা ‘মা’ বলে ডাকতে বাধ্য করা যাবে না।

হাই কোর্টের (Calcutta High Court) স্পষ্ট ভাবে জানিয়েছে যে, “বাবা বা মা তাঁর নতুন জীবনসঙ্গীকে সন্তানকে বাবা বা মা হিসেবে পরিচয় দিতে বললে শিশুর জন্মকালীন বাবা-মায়ের সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং শিশুর মানসিক অবস্থায় প্রভাব ফেলবে।” আদালত পরামর্শ দিয়েছে, নতুন সঙ্গীকে অন্য কোনো নামে ডাকাই সবচেয়ে সঠিক। এছাড়া বাবা-মায়েকে খেয়াল রাখতে হবে, নতুন সঙ্গী সন্তানকে জোর করে বাবা বা মা বলার জন্য চাপ দিচ্ছে কি না।

বিচ্ছেদের পর সন্তানের নাম বা পদবী পরিবর্তন করা যাবে না বলে নির্দেশ দিল আদালত (Calcutta High Court)

বিচ্ছেদের পর সন্তান যাঁর হেফাজতে থাকুক না কেন, তিনি সন্তানকে জন্মের সময় দেওয়া নাম ও পদবি পরিবর্তন করতে পারবেন না। আদালত (Calcutta High Court) স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছে যে, সন্তানের নাম ও পরিচয়কে নিরাপদ রাখতে হবে।

এছাড়া গাইডলাইনে বলা হয়েছে, সন্তান যাঁর কাছে থাকুক না কেন, অন্য পক্ষকে সপ্তাহে অন্তত তিন ঘণ্টার জন্য দেখা করার সুযোগ দিতে হবে। তিন বছরের কম বয়সী শিশুর ক্ষেত্রে বিভিন্ন ছুটির দিনে অন্তত তিন ঘণ্টা, তিন বছরের বেশি বয়সীদের ক্ষেত্রে সপ্তাহে একদিন রাতে থাকতে দেওয়ার নির্দেশ রয়েছে। দেখা-সাক্ষাৎ নিয়ে সমস্যা হলে আদালত (Calcutta High Court) বিশেষ আধিকারিক নিযুক্ত করতে পারবে। দুই পক্ষের মধ্যে ৬০ দিনের মধ্যে সমাধান না হলে আদালতের নির্দেশনা কার্যকর হবে।

এছাড়া সন্তানের অসুস্থতার ক্ষেত্রে বাবা-মা দু’জনকেই সমান দায়িত্ব নিতে হবে বলে জানিয়েছে আদালত (Calcutta High Court)। ডাক্তার ও জরুরি তথ্য উভয়ের কাছে থাকতে হবে। দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে অন্যপক্ষকে অবিলম্বে জানাতে হবে। এছাড়া স্কুল বা বাড়ির ঠিকানা পরিবর্তন বা বেড়াতে যাওয়া সংক্রান্ত সকল তথ্য অন্যপক্ষকে ২৪ ঘণ্টা আগে জানাতে হবে। এছাড়া মেইনটেইনেন্স বা ভরণপোষণের ক্ষেত্রে দেরি করা চলবে না। দেখা-সাক্ষাৎ বা অন্যান্য কার্যক্রমের জন্য আদালত চত্বর বাদে অন্য কোনো বাধা থাকলে তা দূর করতে হবে।

কলকাতা হাই কোর্টের (Calcutta High Court) বিচারপতি সৌমেন সেন, বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিচারপতি শুভ্রা ঘোষের নেতৃত্বে গঠিত কমিটি এই গাইডলাইন প্রণয়ন করেছে। গাইডলাইনের শুরুতেই বলা হয়েছে, “একটি শিশু পৃথিবীতে ভূমিষ্ঠ হওয়া ঈশ্বরের সব থেকে বড় আশীর্বাদ।”

Calcutta High Court Sets Post-Divorce Parenting Guidelines

আরও পড়ুনঃ “আহত বাঘ সুস্থ বাঘের থেকেও ভয়ঙ্কর”, বাংলায় SIR নিয়ে কেন্দ্রকে হুঁশিয়ারি মমতার

এই গাইডলাইন তৈরি করতে একাধিক জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়েছিল কলকাতা হাই কোর্টে (Calcutta High Court)। ২০২১ সালে প্রথম মামলা করেছিলেন চিকিৎসক রাতুল রায়। পরে ‘অন্তরা’ নামের বেসরকারি সংস্থা মামলায় যুক্ত হয়। প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব নির্দেশ দেন বিশেষ কমিটি গঠন করতে, যা পরবর্তীতে ডিভিশন বেঞ্চের মাধ্যমে চূড়ান্ত নির্দেশনার জন্য পাঠানো হয়।