বাংলা হান্ট ডেস্কঃ শুক্রবার ভোরে পুর নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ফের অ্যাকশনে নামল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ED Raid)। তদন্তকারীরা অভিযান চালালেন রাজ্যের দমকলমন্ত্রী সুজিত বসু (Sujit Bose) এবং দক্ষিণ দমদম পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই দত্তের (Nitai Dutta) বাড়িতে। ইডি সূত্রে খবর, এদিন মোট ১০টি জায়গায় একযোগে তল্লাশি অভিযান চালানো হয়। শুধু নিতাই দত্তের বাড়ি নয়, তাঁর একাধিক গোডাউনেও হানা দেয় ইডি।
শিক্ষক দুর্নীতি মামলার সময় থেকে শুরু হয় তদন্তের (ED Raid) সূত্রপাত
এই তদন্তের সূত্রপাত হয় শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলার সময়। ব্যবসায়ী অয়ন শীল-এর অফিসে তল্লাশির সময়ই উদ্ধার হয়েছিল পুর নিয়োগ দুর্নীতির নানা নথি। সেখান থেকেই খুলতে শুরু করে আর এক পর্ব, যেখানে নাম জড়ায় একের পর এক শাসক নেতার, আর সেই তালিকার অন্যতম ছিলেন মন্ত্রী সুজিত বসুর ঘনিষ্ঠ সহযোগী নিতাই দত্ত।
কে এই নিতাই দত্ত?
নিতাই দত্তের গল্প শুরু মুর্শিদাবাদ থেকে। ছাপোষা পরিবারের ছেলে নিতাই কাজের সূত্রে বহু আগে কলকাতায় চলে আসেন। প্রথম দিকে লেকটাউনের দক্ষিণদাড়িতে ভাড়া থাকতেন। ২০০৮ সালে বাড়ি-বাড়ি খবর কাগজ বিলি করতেন তিনি। তৃণমূল সরকার গঠনের পর নিতাই পা রাখেন কলেজ স্ট্রিটে। সেখানে বই-খাতা বিক্রেতা হিসেবে কাজ করতেন। তবে এই কাজের আড়ালেই শুরু হয় তাঁর রাজনৈতিক সফর। তৃণমূলের ফুল-টাইম কর্মী হিসেবে কাজ করতে করতে তিনি মিশে যান সুজিত বসুর ছায়ায়। বিধায়ক সুজিত যত বড় হয়েছেন, নিতাইও তত উঁচুতে উঠেছেন। এক সময় সেই ‘পেপার বয়’ হয়ে ওঠেন বিধায়কের আপ্ত সহায়ক। রাজনীতির সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে তাঁর প্রভাব, সম্পত্তি, আর অদেখা সাম্রাজ্য।
সময় গড়াতে গড়াতে নিতাই দত্তের জীবন বদলে যায় আমূল। বাড়ি, গোডাউন, রেস্তোরাঁ একের পর এক ব্যবসায়িক দখল নিতে শুরু করেন তিনি। ক্ষমতার ছত্রছায়ায় ‘ছোট চাকরি থেকে বড় দখলদারি’-র নজির গড়েন এই মুর্শিদাবাদের ছেলে। এরপর আসে তাঁর রাজনৈতিক পদোন্নতি। ২০২১ সালের পুরভোটে দক্ষিণ দমদম পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হন নিতাই দত্ত। অনেকে বলেন, তাঁর উত্থানের নতুন অধ্যায় শুরু হয় এই সময় থেকেই।
কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার (ED Raid) দাবি, পুর নিয়োগ দুর্নীতিতে সরাসরি জড়িত নিতাই। তদন্তকারীদের হাতে নথি এসেছে, যেখানে দেখা যাচ্ছে, ক্ষমতার অপব্যবহার করে কামারহাটি পুরসভায় নিজের স্ত্রী ও ভাইকে চাকরি পাইয়ে দিয়েছেন তিনি। গত বছর তাঁর বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ইডি উদ্ধার করেছিল সাত পাতার গোপন নথি, যা পুর নিয়োগ কেলেঙ্কারির মূল সূত্র হিসেবে ধরা হচ্ছে।
আরও পড়ুনঃ বিচ্ছেদের পর সন্তানকে নতুন সঙ্গী ‘বাবা-মা’ বলতে বাধ্য করতে পারবে না, নির্দেশ কলকাতা হাইকোর্টের
ইডি সূত্রে খবর, যেসব দুর্নীতির তথ্য এখন সামনে এসেছে, তার অধিকাংশই সেই সময়ের, যখন দক্ষিণ দমদম পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন সুজিত বসু নিজে। তদন্তকারীদের (ED Raid) ধারণা, সেই সময়েই পুর নিয়োগ দুর্নীতির বীজ বোনা হয়, আর নিতাই দত্ত ছিলেন সেই ব্যবস্থার অন্যতম সক্রিয় হাতিয়ার।